Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ ব্যর্থতার দায় কার?

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : বাংলাদেশ ক্রীড়া দলের চরম ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে শেষ হলো দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ১২তম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস। এবার গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে স্বাগতিক ভারতের জয়জয়কার হলেও হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। যেখানে ভারত ১৮৮ স্বর্ণ, ৯০ রৌপ্য ও ৩০টি ব্রোঞ্জপদক জয় করে রয়েছে সবার উপরে। সেখানে মাত্র চারটি সোনা, ১৫ রুপা আর ৫৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে তালিকার পঞ্চমস্থানে থেকে আসর শেষ করলো বাংলাদেশ। যা সত্যিই হতাশাজনক। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে ১৮টি স্বর্ণ, ২৩ রুপা ও ৫৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে তালিকার তৃতীয়স্থানে থাকা বাংলাদেশের এবার করুণ দশা। নিজেদের মাটিতে দাপট দেখালেও এবার ভারতের মাটিতে তারা হয়েছে চরম ব্যর্থ। এ ব্যর্থতার দায় কার? এখন দেশের ক্রীড়ামোদীদের মনে এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করেও কেন আশানুরুপ ফল পাওয়া গেল না, এর জবাব দেবে কে?
গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রীড়া দল গেল ছয়মাস নিবিড় অনুশীলনে মগ্ন ছিলো। কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই অনুশীলন ক্যাম্পে। ক্রীড়াবিদরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পরও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছ থেকে পেয়েছিলেন লাখ লাখ টাকা পুরস্কারের প্রতিশ্রæতিও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। গৌহাটি-শিলিংয়ে প্রতিটি ডিসিপ্লিনেই লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদরা তাদের নৈপূণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজেদের দৈন্যদশা। পদকের পর পদক আসলেও সোনার দেখা মিলেছে মাত্র চারটি। যা ঢাকা এসএ গেমসের চার ভাগের এক ভাগ। এসএ গেমসের এবারের আসরে অংশ নেয়ার মাত্র মাস খানেক আগেই ক্রীড়াবিদরা বিওএ’র কাছ থেকে পেয়েছিলেন অর্থ পুরস্কার। গেল তিন বছরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমসে পদকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদদের মাঝে ৩৩ লাখ টাকা পুরস্কার দিয়ে দেশের অলিম্পিক সংস্থা তাদের উৎসাহিত করেছিলো গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে ভাল করতে। তাছাড়া গেমসে যাওয়ার আগেও স্বর্ণজয়ীদের পাঁচ, রৌপ্যজয়ীদের তিন এবং ব্রোঞ্জপদক জয়ীদের দু’লাখ টাকা করে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাও দেয় বিওএ। এতসব আয়োজন বৃথা গেল। গৌহাটি-শিলংয়ে এবার অধিকাংশ ডিসিপ্লিনেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব হারালো বাংলাদেশ। যেখানে পুরুষ ফুটবলে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে, ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে বাংলাদেশের ভরসা আব্দুল্লাহ হেল বাকী হয়েছেন পদক বঞ্চিত। উশু, বক্সিং, কারাতে, তায়কোয়ানডোসহ বেশ ক’টি ডিসিপ্লিনে আগেরবারে স্বর্ণ পদক জিতলেও এবার লাল-সবুজরা করেছে হতাশ।
ঢাকা এস গেমসে কারাতে চারটি, শুটিংয়ে তিনটি, দু’টি করে বক্সিং, উশু, গফলে ও তায়কোয়ানডোতে এবং ফুটবল, ভারোত্তোল ও ক্রিকেটে একটি করে স্বর্ণপদক জিতেছিলো স্বাগতিকরা। যদিও এবার কারাতে, গলফ ও ক্রিকেট এই তিন ডিসিপ্লিনের খেলা ছিল না। তারপরও অন্য ডিসিপ্লিনগুলোতে তুলনামূলকভাবে অনুজ্জ্বল ছিলো লাল-সবুজরা। তারপরও বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা খুশী বাংলাদেশ দলের ফলাফলে। তিনি গতকাল এক টেলিভিশ চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,‘সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্যরে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে ফলাফল করেছে সেটা ঠিকই আছে। আশি খুশী তাদের পারফরমেন্সে।’ তবে দেশের ক্রীড়াবিদদের হতাশাজনক নৈপূণ্যে অবাকই হয়েছেন গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন এবং বিওএ’র উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। তিনি বলেন, ‘এবারের এসএ গেমস আমাদের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে থাকলো। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হচ্ছে, গতানুগতিক ধারাতেই চলছে বাংলাদেশের খেলাধূলা। ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।’ মিকু যোগ করেন, ‘১২তম এসএ গেমসে আমাদের যে ডিসিপ্লিনগুলো ভালো করেছে, তাদেরকেই প্রাধ্যান্য দিতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য ওই ডিসিপ্লিনগুলোকে আধিপত্য দিয়ে প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’ বিওএ’র উপ-মহাসচিব আরো বলেন, ‘তবে এবারের আসরে আমাদের স্বর্ণপদক জয়ের সংখ্যা কম হলেও, সব মিলিয়ে অন্যবারের তুলনায় পদক সংখ্যা বেশিই ছিল। আমার ধারণা ভালো ফল না হওয়ার কারণ হতে পারে, কোন কোন ডিসিপ্লিন মাত্র তিনমাস অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে। আবার কেউ পেয়েছে ছয়মাসের। তাই হয়তো প্রস্তুতি ভালো হয়নি।’
সৈয়দ শাহেদ রেজা বা আশিকুর রহমান মিকু যাই বলুন না কেন, কোটি কোটি টাকা খরচের পরও ক্রীড়াবিদদের এমন হতাশাজনক পারফরমেন্স সত্যিই ব্যথিত করেছে দেশের ক্রীড়ামোদীদের।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এ ব্যর্থতার দায় কার?

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ