পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশি-বিদেশি মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ ইজতেমা ময়দান
আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই হাজার হাজার তাবলীগ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিরা দলে দলে মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন পায়ে হেঁটে টুপী-পাঞ্জাবী পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। করোনার কারণে গত দুবছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এবার তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই মুসল্লিরা মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। ময়দানে আসা মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় আম বয়ান। ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে মূল পর্ব শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আম বয়ান। ইজতেমা ময়দান প্রায় দুই মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি প্রায় সকল কাজ শেষ করেন। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির উপর চটের ছাউনির প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বয়ান ও দোয়া মঞ্চ ছাড়াও নামাজের মিম্বর তৈরি করা হয়েছে আলাদাভাবে। দেশীয় তাবলীগের মুসল্লীদের জন্য জেলাওয়ারী আলাদা আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই প্রায় পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। টুপী-পাঞ্জাবী পড়া মুসল্লিরা বাস-ট্রাক, নৌকা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এখনও মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসছে।
বিদেশি তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ, র্যাবের কন্ট্রোল রুম। আরব, ইউরোপসহ কয়েকটি দেশের মুসল্লিরাও ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশি মেহমানদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন।
করোনার কারণে বিশ্ব ইজতেমা দুবছর বন্ধ থাকার পর এবার আগামী শুক্রবার থেকে প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলেমওলেমা গ্রæপের যোবায়ের পন্থী অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন, আদি তাবলীগ জামাতের দিল্লির মুরুব্বি মাওলানা সাদ পন্থী গ্রæপের অনুসারী মুসল্লিগণ। রাজধানীর উপকণ্ঠ ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী এ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, প্রতিবার বিশ^ ইজতেমায় তুরাগতীরে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দেয়। তাই এবার আরো দুইটি নলক‚প স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার ইজতেমাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, আধুনিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে শহীদ আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আধুনিক বেড উপহার দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট টিম নানাবিধ অনিয়ম ও অপরাধের ভ্রাম্যমাণ বিচারে থাকবে পুরো টঙ্গী জুড়ে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ৩১টি টয়লেট বিল্ডিংয়ে একসঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি তাদের প্রস্রাব-পায়খানার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লিদের আনা নেয়ায় বিশেষ বাস ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে আগত মুসল্লিদের পারাপার হওয়ার জন্য।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইজতেমা ময়দান ও পাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পোশাকে, সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন ১০ হাজারের অধিক সদস্য। গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র্যাবের কন্ট্রোল রুম আছে, ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে, ওয়াচ টাওয়ার, রুফটফ ডিউটিসহ সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে এবং র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্টোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম থাকবে ইজতেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়া টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা, চক্ষু ও বার্ণ ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত বেডও থাকবে।
ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পে বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেবে। চিকিৎসা বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষণিক সেবাদান অব্যাহত রাখবে।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি যারা আসেন তাদেরকে এয়ারপোর্টে ইজতেমা আয়োজকরা রিসিভ করে থাকেন। বিদেশি মুসল্লিরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ইজতেমায় আসতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পকেটমারসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে পেট্টোল টিম ও মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। থাকবে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত দুই মুসল্লির মৃত্যু
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমায় দুই বৃদ্ধ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব এবং সিলেটের জৈন্তাপুর থানার হরিপুরের হেমুবটেপাড়া এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক । বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে তাবলীগ জামাতের গাজীপুর মারকাজের সুরা সদস্য তৈয়ব বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন। আর নুরুল হক ভুগছিলেন এ্যাজমা রোগে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমা ময়দানের ৬২নম্বর খিত্তায় অবস্থানকালে নুরুল হকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে জানাযা নামাজ শেষে লাশ দুটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।