Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নববর্ষ উদযাপন : ইসলাম কী বলে

মুফতি ইমামুদ্দীন সুলতান | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গের ন্যায় হাসি-আনন্দ কিংবা দুঃখ- বেদনা এসব প্রকাশেও ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামে আন্নদ-উল্লাসও একটি ইবাদাত এবং সেটার নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ রয়েছে। বছর পূর্তিতে আনন্দ প্রকাশ করা ইসলামী সংস্কৃতি নয়। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাতে থাটি ফাস্ট নাইট উদযাপন নামে যা হয় এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এ উদযাপন অমুসলিম এবং বিজাতীয়দের। অশ্লীলতা,বেহায়াপনা আর নগ্নতায় ভরা এ আয়োজনে কোন প্রকৃত মুসলিম জড়াতে পারে না।

কুরআন-সুন্নাহ’র বিভিন্ন জায়গায় অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি এর ভয়াবহতার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নাহল : ৯০)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা নূর : আয়াত ১৯)।

এ উদযাপনকে ঘীরে ব্যাপক হারে অশ্লীলতা আর নগ্নতার নির্লজ্জ প্রদর্শনী হয়ে থাকে। যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে এবং আমল-আখলাত নষ্ট করে দেয়। এমনকি মুসলিমদের চরিত্র হরণে অশ্লীলতা, নগ্নতা আর বেহায়াপনা এগুলো সব শয়তানের বিষাক্ত ফাঁদ। তাই এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। (সূরা নূর : ২১)।

এই উদযাপনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নাচ-গান হয়ে থাকে, যা ইসলামে স্পষ্ট হারাম এবং মারাত্মক গুনাহে কবীরা। এই গান-বাজনা আর বাদ্য যন্ত্রের ব্যাপকতা আল্লাহর আযাবকে তরান্বিত করে। ভূমিধস আর বড়বড় বিপর্যয় নেমে আসে। সাহল ইবন সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ্ : ২/১৩৫০)।

তাছাড়া প্রতিটি মুসলিমের সবসময় খেয়াল করা উচিত যে, আমাদের এ জীবন নিছক আনন্দ-উল্লাস কিংবা ভোগ-বিলাসে কেটে দেয়ার জন্য নয়। এ জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রয়েছে এবং একদিন তার পূর্নাঙ্গ হিসাব দিতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। তাই একজন মুসলিমের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন ইবাদত হয়,আল্লাহর নাফরমানী না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের জীবনের ছোট-বড় প্রতিটি কাজে জড়িয়ে থাকবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমান এবং আখেরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস আর আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা।

কারণ ক্ষণিকের এই জীবন শেষেই আমাদের সাক্ষাত হবে মহান রবের সাথে। সেদিন প্রতিটি কর্মের সচিত্র প্রতিবেদন দেখানো হবে। ছোট থেকে ছোট কোন কাজই সেই হিসাব থেকে বাদ যাবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। (সূরা কাহফ : ৪৯)।

আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের সতন্ত্র চেতনা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আছে স্বকীয় ক্যালেন্ডার। বিজাতীয় বর্ষপূর্তিতে আমাদের এমন উদযাপন স্বজাতির চেতনা বিরোধী। আর নতুন বছরের আগমনে খুশি কেন হবে? এতে আনন্দের কী আছে? জীবনের মূল্যবান সময়ের মধ্য থেকে একটি বছর শেষ হয়ে গেল সে জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত। অতীত হয়ে যাওয়া বছরটিতে আমি কী অর্জন করেছি আর কী হারিয়েছি? পরকালীন জীবনের কী প্রস্তুতি নিয়েছি? কারণ নতুন বছরের আগমন মানে তো পরকালের যাত্রা আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে। বছরের বিদায়ান্তে একজন সত্যিকার মুসলিম হৃদয়ে এমনি ভাবনা আসা উচিত। অতীত বছরের ভাল-মন্দের হিসাব কষে নতুন বছরের পরিকল্পনা করা উচিত। নিজের ধর্মীয় মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে বিজায়ী সংস্কৃতিতে জড়িয়ে নিজের পরকালকে ধ্বংস করা উচিত হবে না। কেননা, দুনিয়ার বুকে যে যার সভ্যতা সংস্কৃতি এবং সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, পরকালে তাদের সাথেই তার হাশর হবে। হদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনু উমার (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (আবু দাউদ-৪০৩১)। বুখারীর এক বর্ণনায় এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ যাকে ভালবাসে সে তারই সাথী হবে। (বুখারী-৬১৬৯)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ