Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের দীর্ঘতম মানব হতে পারেন ঘানার সুলেমানা আবদুল সামেদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩৮ পিএম

ঘানার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা সুলেমানা আবদুল সামেদকে তার স্থানীয় হাসপাতাল সম্প্রতি এক চেক-আপের সময় জানায় যে তার উচ্চতা এখন বেড়ে হয়েছে ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ২.৮৯ মিটার। এর ফলে বর্তমান রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে দেখলে তিনিই হচ্ছেন বিশ্বের দীর্ঘতম মানব।

তবে গ্রামের ওই ক্লিনিকের নার্সরা তার উচ্চতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন, কারণ সামেদকে নির্ভুলভাবে মাপার উপযুক্ত যন্ত্র সেখানে নেই। সুলেমানা আবদুল সামেদ – যার ডাকনাম আউচে - একটি বিরল স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত যার নাম জাইগ্যান্টিজম। বেশ কয়েক বছর আগে তার এ রোগ ধরা পড়ে এবং প্রতি মাসেই তাকে হাসপাতালে যেতে হয়। তবে শেষবার হাসপাতালে তাকে পরীক্ষা করার সময় বিস্মিত নার্সটি বলেন, সামেদ এখন উচ্চতা মাপার মেশিনটির চাইতেও দীর্ঘকায় হয়ে গেছেন।

তখন সেই মেশিনের সাথে বাড়তি একটি কাঠি লাগিয়ে, এবং ১৬ ফিট লম্বা টেপ দিয়ে কয়েকজনে মিলে তার উচ্চতা মাপা হয় - আর এভাবেই তারা বের করেন যে সামেদের উচ্চতা এখন সাড়ে নয় ফিট। বিবিসির সংবাদদাতা ফেভার নানু উত্তর ঘানার গাম্বাগা গ্রামে গিয়ে সামেদের সাথে দেখা করেছেন কয়েক মাস আগে। তখনই তারা মেপে দেখেছিলেন যে আউচে’র উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি।

গিনেস বুক অব রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা জীবিত লোক হলেন তুরস্কের ৪০ বছর বয়স্ক সুলতান কোসেন – যার উচ্চতা ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চি। সে সময় তার চেয়ে উচ্চতায় অল্প কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন সামেদ। এখন, সুলেমানা আবদুল সামেদ ওরফে আউচের বর্তমান উচ্চতা যদি ৯ফুট ৬ ইঞ্চি হয় – তাহলে তিনিই পৃথিবীর দীর্ঘতম ব্যক্তি।

আউচের বয়স যখন ২২ বছর তখন তিনি রাজধানী আক্রায় থাকতেন। তিনি কাজ করতেন এক কসাইয়ের দোকানে, আর সেই বেতনের টাকা জমাচ্ছিলেন গাড়ি চালানো শেখার জন্য। সেখানেই তিনি একদিন সকালে অনুভব করেন যে তার মুখের ভেতরে জিহ্বা এত বড় হয়ে গেছে যে তিনি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছেন না। কয়েকদিন পরই তিনি টের পেলেন যে তার শরীরের অন্যান্য অংশও বড় হয়ে যাচ্ছে। তার আত্মীয় স্বজনরা তাকে দেখে তার উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করতে লাগলেন। এর ফলে অন্য আরো সমস্যা দেখা দিতে লাগলো। তার মেরুদণ্ড অস্বাভাবিক বাঁকা হয়ে গেল। সামেদ বুঝতে পারলেন যে তিনি এক দানবাকৃতির মানুষে পরিণত হচ্ছেন।

সামেদ যে সমস্যায় আক্রান্ত তার নাম মারফান সিনড্রোম। এটি এমন একটি জিনগত সমস্যা যাতে দেহের সংযোগকারী কোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং তার ফলে মানুষের হাত-পা অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায়। এতে হৃদপিণ্ডের ত্রুটির মত গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ডাক্তাররা বলছেন, সামেদের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থামাতে হলে তার মস্তিষ্কে একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে ঘানার সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর খরচ মেটানো সম্ভব নয়।

আউচে এখন আক্রা ছেড়ে তার গ্রামে ফিরে গেছেন। তার গাড়ি চালক হবার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি তার ভাইয়ের সাথে মিলে একটি ছোট ব্যবসা করছেন। তার সামাজিক জীবনও সংকুচিত হয়ে গেছে। তবে তার গ্রামে তিনি একজন সেলিব্রিটিতে পরিণত হয়েছেন। পথ চলতে তাকে নিয়মিত লোকের ডাকে হাসিমুখে সাড়া দিতে হয়। অনেকে তার সাথে সেলফি তোলেন। তিনি বলছেন, তিনি চান বিয়ে করতে এবং সন্তানের বাবা হতে কিন্তু তার আগে এই স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানই এখন তার অগ্রাধিকার।

তার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে তার পায়ে, গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় যে সমস্যা হয়েছে তা সারাতে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য অর্থ তোলা। তবে এ সমস্যার জন্য সুলেমানা আবদুল সামেদ ভেঙে পড়েননি। ‘আল্লাহ আমার ভাগ্যে এটাই ঘটবে বলে ঠিক করেছেন,’ বলেন তিনি, ‘আমি ঠিক আছি – সৃষ্টিকর্তা আমাকে যেভাবে তৈরি করেছেন তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।’ সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবদুল সামেদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ