Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত চারদিক

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মাঠে মাঠে সারি সারি সরিষা ক্ষেতে ভরে গেছে হলুদ ফুলে ফুলে। মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকদের মন ভরে যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মত সার ও সেচ দেয়ায় বাম্পার ফলন আশা করছেন এলাকার কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর, ব্লকের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪টি, লোকসংখ্যা ২ লাখ ৯৭ হাজার (প্রায়)। গত বছর গোদাগাড়ীতে সরিষার আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এ বছর সরিষা আবাদ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। আগে এ সময়ে কৃষক জমি পতিত রাখতেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধানে সেচ, সার, কীটনাশক বেশি লাগায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তাই কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তারা জমিকে ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বর্তমান বাজারে ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণ করবে সরিষার খৈল গবাদিপশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাবার। গোদাগাড়ীতে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষকদের ফসল চাষে ভিন্নতা এসেছে। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরিষা চাষে খরচ কম, সময় এবং সেচ কম লাগে, দাম বেশি পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকেরা আগ্রহী বেশি হচ্ছে। গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সরিষা চাষী সামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় আমন ধান ঘরে তোলার পর এবং ইরি বোরা ধান লাগনোর পূর্ব পর্যন্ত যেসব জমি পতিত কিংবা ফাঁকা পড়ে থাকে ওইসব জমিতে সাধারণত বোনাস ফসল হিসেবে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ করে কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছে। উপÑসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় অনেক কৃষক বিনা চাষে সরিষা আবাদ করেছেন। মাত্র ৭০/৮০ দিনে কৃষক সরিষা ঘরে তুলতে পারেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়া, সার, সেচ কম লাগায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা বেশ ভালোই ফলন আশা করছেন। তিনি আরো বলেন, বিনা চাষে সরিষা করার জন্য আমন ধান কাটার ১০/১৫ দিন পূর্বে জমিতে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ কেজি ইউরিয়া সার,  ৫ কেজি পটাশ এবং বেশি কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একবার ছত্রাক নাশক ¯েপ্র করতে হয় এবং সরিষা ক্ষেতে রোগ-বালাই কম হয়। গত বছর বিজয়নগর মৌজায় কৃষকেরা বিনা চাষে সরিষা করে বিঘা প্রতি ৩ থেকে সাড়ে তিন মণ সরিষা পেয়েছিল। প্রতি মণ সরিষা ২৭শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা দাম পেয়েছিল। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বিজয়নগর মৌজার কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম (৩৫) বলেন, এবছর ৪ বিঘা জমিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষায় ফুল ভালোই ধরেছে আশা করি বাম্পার ফলন পাব ইনশাল্লাহ। বিনা চাষে সরিষা উৎপাদনে জমিচাষ খরচ লাগে না, সার ও সেচ খরচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ কম হয় বলে দিনে দিনে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার মাঠে মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, হলদেÑসোনালি সরিষা ফুলের সমাহার। সরিষা ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছিদের গায়ে লাগা ফুলের পুংকেশর স্ত্রী ফুলে বসে পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে। এ যে সরিষা ফুল ও মৌমাছির অপূর্ব সম্পর্ক। উপজেলার কাপাসিয়া পাড়া বিলে এক শ্রেণীর মধু ব্যবসায়ীরা মৌমাছি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। তারা সারা বছরে যে মধু বিক্রি করে থাকেন তার বেশি অংশই সরিষা মৌসুমে সংগ্রহ করে থাকেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহকৃত মধু বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি এবং গ্রাহকদের চাহিদাও বেশি। গোদাগাড়ীতে যেসব জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে তাদের মধ্যে উপশী জাতের টরিÑ৭, বারিÑ৯ বারিÑ১৪, বারিÑ১৫ এবং দেশী জাতের সরিষাও রয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. তৌফিকুর রহমান  বলেন, এবছর আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় সরিষা চাষ ভালো হয়েছে, ফলনও ভালো পাবে, বিশেষ করে বারিÑ১৪, বারিÑ১৫ জাতের সরিষার বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। সরিষার গাছ ও ভূসি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাসুদেবপুরের বিল চড়াই এবং দামকুড়ায় ২শ’ মৌমাছির বাক্স দেয়া আছে ফলে মধু উৎপান হচ্ছে এবং পরাগায়নে সহায়তা করায় সরিষার উৎপাদন ভালো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ