মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : অপরিশোধিত তেলের মূল্য নির্ধারণে পরাক্রমশালী সউদি সাম্রাজ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। সিরিয়া ও ইয়েমেনে প্রক্সি যুদ্ধে তেমন সাফল্য না পাওয়া, প্রশ্নবিদ্ধ ওপেক নেতৃত্ব, তেলের মূল্য নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করতে না পারা এবং দীর্ঘদিনের পশ্চিমা মিত্রদের সাথে দূরত্ব সউদি আরবের পথচলা কঠিন করে তুলেছে। অন্যদিকে, সউদির চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ইরান ক্রমেই সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা সউদির বিপর্যস্ত অবস্থাকে আরো তীব্র করে তুলছে। রিয়াদকে ক্রমেই ভাবিয়ে তুলছে এমন কিছু দুর্বলতার মধ্যে অন্যতম হলো তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকে সউদি তার দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রি বৃদ্ধি, রাশিয়ার ক্রমবৃদ্ধিমান উৎপাদন এবং ইরানের দৃঢ় অবস্থান সউদির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। ফলে তেলের মূল্য নির্ধারণে সউদি আরব বর্তমানে ক্ষমতাহীন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তেলের ক্রমহ্রাসমান মূল্য সউদি আরবের অর্থনীতিকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে। সউদি আরবের সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, তেলের মূল্য এভাবে কমতে থাকলে রিয়াদের মজুতকৃত তেল মাত্র ৪ বছর টিকে থাকবে। অন্যদিকে, ইরান এতদিন অবরোধ প্রত্যাহারের অপেক্ষা করছিল। অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় তারা তেল উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করবে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।
সউদির জন্য আরেকটি দুশ্চিস্তা হলো ক্রমশ ইরানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়া। ইরাক, সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া জনগণ বা হিজবুল্লাহর মতো শিয়া সংগঠনই নয় বরং সুন্নি অধ্যুষিত দেশগুলোর শিয়া সংখ্যালঘুদেরও সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা করে গোটা অঞ্চলের শিয়াদের কাছেই ইরান হয়ে উঠেছে ভরসার প্রতীক। খোদ সউদি আরবের ১৫% শিয়া জনগোষ্ঠী ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সউদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। সম্প্রতি সউদি আরব শিয়াপন্থী শীর্ষ আলেম নিমর আল-নিমরকে ফাঁসি দেয়ায় গোটা মুসলিম বিশ্বের শিয়া সম্প্রদায় সউদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সউদি আরব ইরানের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হলে জয়লাভের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। ইরান সউদির তুলনায় জনসংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বড়। এছাড়া ইরানের রয়েছে অনেকগুলো যুদ্ধে অংশ নেয়া শক্তিশালী সেনাবাহিনী। অন্যদিকে রাজপরিবারের আজ্ঞাবহ জেনারেলদের দ্বারা পরিচালিত সউদির অনভিজ্ঞ সেনাবাহিনী যুদ্ধ পারদর্শী ইরানিদের সাথে যুদ্ধে সফলতা লাভ করবে একথা কঠোর সউদি সমর্থকও দাবি করবেন না।
সউদি আরবের একটি সুসজ্জিত অস্ত্রভাÐার থাকলেও উন্নত প্রযুক্তির এসব অস্ত্র পরিচালনায় পশ্চিমা বাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা সউদি আরবকে ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। কেননা, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের ভুলের মাশুল এখনো দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।
পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সৌদির সম্পর্কে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সউদি আরবের নিকট অস্ত্র বিক্রয় করবে এবং বিনিময়ে সউদি আরবকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে। তবে নিজেদের সমস্যায় জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র সউদি আরবকে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে এই আশায় ইরানের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোই ভালো’।
সউদি রাজপরিবারও জানে, মার্কিন সাহায্য ছাড়া ইরানকে পরাজিত করা অসম্ভব। তাই সম্ভবত রাজপরিবার ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়ানোর চিন্তা বিবেচনায় আনছে না।
সউদি আরব সবদিক থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ওপেক নেতৃত্ব হারানো থেকে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে রিজার্ভের অবনতি এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুহীন হয়ে পড়া। এরকম শোচনীয় অবস্থা আল সউদি পরিবারের আগে কখনো হয়নি। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হল, গত মঙ্গলবার ১২ বছরে প্রথমবারের মতো তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে সউদি রাজপরিবারের পৃথিবী। নিজ দেশেও স্বস্তিতে নেই তারা। মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘরে-বাইরে বিপাকে ফেলেছে সউদি আরবকে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য সউদি রাজপরিবার নতুন কি পদক্ষেপ নেয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।