Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনজিওর লোকজন গরু নিয়ে যাওয়ার খবর শুনে শিক্ষকের মৃত্যু!

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর বদলগাছীতে সন্তোষ কুমার বসাক (৬৩) নামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অসুস্থ হয়ে ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় ‘নীড় সেতু’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর বাড়ি থেকে দুইটি গরু ধরে নিয়ে গেছে । গরু নিয়ে যাওয়ার কথা জানার পর দুশ্চিন্তায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ওই শিক্ষক মারা গেছেন বলে তাঁর পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছে। এঘটনায় সোমবার বদলগাছী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
নিহত শিক্ষকের ছেলে শতদল কুমার বসাক বাদী হয়ে এই অভিযোগটি করেন। বদলগাছী থানার ওসি জালাল উদ্দীন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর হাটশাপিলা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সন্তোষ কুমার বসাক। গত ৭ ডিসেম্বর এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কিস্তির টাকা আনতে ওই শিক্ষকের বাড়িতে যান। শিক্ষকের ছেলে শতদল বসাক বাবার দেনা পরিশোধ করার প্রতিশ্রæতি দেন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। শতদল বসাকের কাছ থেকে তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ফাঁকা স্বাক্ষরও নেন। এনজিওর লোকজন বাড়িতে এসে দুটি গরু নিয়ে যাওয়ার দুশ্চিতায় শিক্ষক সন্তোষ বসাক মারা যান।
শতদল বসাক বলেন, তিনি এনজিও লোকজনদের বলা হয়েছে- তার বাবা অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে। আপনাদেরকে অল্পদিনের মধ্যে বাবার ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিব। কিন্তু এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার কোনো কথায় শোনেন নি। তাঁরা জোরপূর্বব আমাদের গোয়াল ঘরে থাকা সত্তর হাজার টাকা দামের দুটি গরু বের করে নিয়ে চলে যান। আমরা এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও গরু ফেরত পাইনি। এনজিও নীড় সেতুর মিঠাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, আমার এনজিও থেকে সন্তোষ কুমার বসাক ৭৭ হাজার ঋণ নিয়েছিল। প্রতিদিন কিস্তির মাধ্যমে ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধের শর্ত ছিল। কিন্তু তিনি শর্ত মোতাবেক কাজ করেনি। আমরা ঋণের টাকা আদায় করতে সন্তোষ কুমারের বাড়িতে গেলে তাঁর ছেলে গরু বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বলেন। আমরা দাম ধরে বাড়ি থেকে গরু নিয়ে এসেছি। এখন গরু দুটি কোথায় আছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা একজনের জিম্মায় গরু দুটি দিয়েছি। তাঁর নাম বলা যাবে না।
এনজিওর নির্বাহী পরিচালক আবু রায়হান বলেন, সন্তোষ কুমার সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে আমাদের গরু দিয়েছে। আমরা গরু দুটি জিম্মায় দিয়েছি।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জালাল উদ্দীন বলেন, ঋণের কিস্তি না দেয়ায় এনজিও লোকজন গ্রাহকের দুটি গরু নিয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় গ্রাহকটি মারা গেছেন এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বদলগাছীর নির্বাহী অফিসার হুসাইন শওকত বলেন, কোনো এনজিও বাড়ি থেকে গরু ধরে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই। এরকম ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ