পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মধুপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : মধুপুর গড় এলাকায় এক উপজাতি গারো পরিবারের কলা ও আনারস বাগান কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বিনষ্ট করা হয়েছে বাড়ন্ত কৃষি ফসল। এভাবে নির্বিচারে কলা, আনারস ও আম বাগান কেটে বিনষ্ট করায় এ উপজাতি পরিবারটি হতাশ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে এক ধাপ। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের বন এলাকার গারো অধ্যুষিত পল্লী কাকড়াগুনী গ্রামে।
জানা যায়, মধুপুর বন এলাকার কাকড়াগুনী গ্রামে দীর্ঘ দিন যাবত উপজাতি গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছে। তাদের বাড়ীর চারপাশের জায়গায় তারা আনারস, কলা, হলুদ, পেঁপে, আদা, কচুসহ নানা কৃষি ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গারোদের সমাজ ব্যবস্থায় বনের চারপাশে নির্জন নিরিবিলি পরিবেশে বসবাস করতে পছন্দ করে। বনের আলু ও প্রাকৃতিক কৃষিপণ্য শাক-সবজি ফলমূল খেতে তারা পছন্দ করে। এ বনে এক সময় জুম চাষ হত। ফলাতো নানা ফসল। এখন আর জুম চাষ নেই। জুম চাষ থেকে তারা বনের আশেপাশে বসতি ও খাবার সংগ্রহ করত। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কমতে থাকে তাদের কৃষি জমি। বাড়তে থাকে বসতি। বাড়তি মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থকরি ফসল আনারস, কলা, পেঁপে, আদাসহ নানা ফসল চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছে। মধুপুরের মাটি উর্বর থাকার কারণে কৃষি ফসল চাষ করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সহজ হয়েছে। ঠিক সেই মূর্হুতে উপজেলা অরণখোলা ইউনিয়নের কাকড়াগুনী গ্রামে আদিবাসী গারো কৃষক লাজারুস সিমসাং (৪৫) এর আবাদকৃত প্রায় ৩০ বিঘা জমির আনারস ও কলার বাগান কেটে সাবাড় করেছে বন বিভাগের লহুরিয়া বিটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কারের একটি দল। তার এই বিশাল বাগান কেটে ফেলায় এই পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেড় বছর আগে থেকে ধার-দেনা ঋণ করে বাগানের যতœ নেন এ পরিবারটি। অনেক যতেœর পর বেড়ে উঠে কলা, আনারস ও আমের গাছ। গাছ পরিপক্ব হয়। কলা আসার সময় হয়েছে সবেমাত্র। এ মুহূর্তে এ বিশাল বাগানটি কেটে ফেলায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে গেল এ গারো পরিবারটি। এ সব তথ্য স্থানীয় কাকড়াগুনী গ্রামের অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরজমিনে মধুপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অরণখোলা ইউনিয়নের বন এলাকার গারো অধ্যুষিত গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বনের পাশেই কলা, আনারস ও আমের বাগান কেটে ফেলার দৃশ্য। কেটে ফেলা কলার গাছগুলো পড়ে আছে। পাশের সরিষার ক্ষেতে লাগানো আনারসের চারাগুলো উঠানো। স্থানীয় গারো অধিবাসীরা অভিযোগ করে জানালেন, শুধু আমরা গারোরাই কি আনারস ও কলা চাষ করি? আর কেউ করে না? বনের চারপাশেই তো কলা আনারসের অনেক বাগান? ও সবতো কাটা হল না। আমরা উপজাতি বলে আমাদের বাগান কেটে ফেলা হল। বিনষ্ট করা হল বিশাল আকারে গড়ে উঠা কৃষি ফসল। এই ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উপজাতি গারো লাজারুস সিমসাং (৪৫) জানান, এই জমি আমি অনেক দিন ধরে ভোগ দখল করে খাচ্ছি। গত বছর ৩০-৪০ বিঘা জমিতে আনারস, কলা ও আমের বাগান গড়ে তুলি। ধার দেনা ও ঋণ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতি কষ্টে বাগানে যতœ নেই। গাছ বেড়ে উঠেছে। ফল ধরার সময় হয়েছে এখন। ফসল বিক্রি করে আমি ঋণ পরিশোধ করে পরিবার পরিজন নিয়ে লাভের টাকা দিয়ে সংসার চালাব। এই মুহূর্তে তার সৃজিত বাগান বন বিভাগের লোকেরা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। তার মতে ৩২শ’ কলা, ২০ হাজার আনারসের গাছ ও ৫শ’ আমের গাছ কাটা হয়েছে। তার ক্ষতি হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। কি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে এ ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি। তিনি জানান, গাছ লাগানোর সময় যদি আমাকে বাধা দিত তাহলে গাছ লাগাতাম না। তখন তাকে বাধা দেওয়া হয় নি বলে তিনি জানান। বন বিভাগের লোকেরা তার উপর আক্রোশে এ বাগান কেটে সাবাড় করেছে।
এ ব্যাপারে জয়েনশাহী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, বনের জমি যেই দখল করুক তা বন বিভাগের লোকদের যোগসাজশ ছাড়া হয় না। এ ফসল কাটা ঠিক হয় নি। ফসল লাগানোর শুরুতে বাধা দিলেই হতো। এতে দেশেরও ক্ষতি হয়েছে এবং ঐ পরিবারেরও ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর ময়মনসিংহ উপজাতি উন্নয়ন কাউন্সিলের সভাপতি উপজাতি নেতা অজয় এ মৃ জানান, সৃজিত বাগানের কলা, আনারস বাগান কাটা এটা অমানবিক। বন বিভাগ উচ্ছেদ করবে ভাল কথা। যখন চারা লাগালো তখন বাধা দিলেই হতো। অনেক টাকা শ্রম ঘাম দিয়ে গড়ে তোলা অর্জিত ফসল কেটে নষ্ট করা এটা অমানবিক। এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান সাংবাদিকদের জানান, জবর দখলকৃত জায়গা আমরা উদ্ধার করেছি। গজারী গাছ কেটে এ জমি তৈরী করা হয়েছে। তাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করলেও সে শোনেনি। বনের জমি উদ্ধার করা এটা বন বিভাগের দায়িত্ব। মধুপুর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।