পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাড়িভাড়া বাড়ানোর ও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের চলমান অসন্তোষের মুখে সাভারের আশুলিয়ার ৫৫টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল বিজিএমইএ। এদিকে আন্দোলনের কারণে রপ্তানি বাজার হারানোর শঙ্কা করছে সংগঠনটি।
গতকাল মঙ্গলবার পোশাক মালিকদের শীর্ষ এই সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আজ থেকে এসব কারখানায় শ্রমিকরা যতদিন কাজে যোগ দেবে না ততদিনের বেতন তারা পাবে না। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে কারখানা বন্ধ থাকার সময় বেতন পাবেন না শ্রমিকরা। বিজিএমইএ সভাপতি বলেনমালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে বারবার সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কার্ড পাঞ্চ করে চলে গেছে। তাই কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কি না তা খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর পর বেতন বাড়ানো হয়। এখন মাত্র তিন বছর পার হয়েছে। আর দুই বছর পর বেতন বাড়ানোর সময় হবে। এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শংকা প্রকাশ করে সিদ্দিক বলেন, ভারত অনেক বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে, আমাদের বাজার তারা নিয়ে যাচ্ছে। তারা ঘোষণা দিয়েই নেমেছে। এমনিতেই আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা বাজার হারাব।
এর আগে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। রোববার ও সোমবার শ্রমমন্ত্রীর আশ্বাস পাওয়ার পর একটা পক্ষ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করলেও মঙ্গলবার সকালে ফের আন্দোলনে নামে শ্রমিকদের বড় একটা অংশ।
গতকাল সকালে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে সড়কে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনার পরপরই বিকেলে কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকে ৫৫ কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।
সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান,
অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেক শ্রমিক নেতাদের সাথে একাধিক সভা করেও কোন কাজে আসছে না। এমনকি বিক্ষোভরত শ্রমিক এখন মন্ত্রীদের আশ্বাস ও তাদের সংগঠনের নেতাদের কথাও মানছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার সকালে আবারও অন্তত ৩০টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে চলে গেলে কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আশুলিয়ায় কোন বাড়িওয়ালা আগামী তিন বছরের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার রাতে দ্বিতীয় দফায় নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সদস্য ৪২টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একটি সভা হয়। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর হক চুন্নু, প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহম্মেদ, সাভারে সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাফুজুল হক নুরুজ্জামান, শিল্প পুলিশের ডিআইজি আব্দুস সালাম, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তা, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মন্ত্রীরা বিক্ষোভরত শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া আগামী তিন বছরের মধ্যে বাড়ীভাড়া বাড়ানো হবে না এবং মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হলেও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মন্ত্রীদের কথা মেনে নিলেও শ্রমিকরা তাদের নেতাদের কথা মানছে না।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, সকালে নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, বান্দু ডিজাইন, পলমল গ্রুপ, আইডিএস গ্রুপ, ডিকে নীট ওয়্যার লিমিটেড, উইন্ডি গ্রুপ, দি রোজ ড্রেসেস লিমিডে, গ্রীন লাইফ, বার্ডস গ্রুপ, ওশান ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, স্টারলিংক ক্রিয়েশন, পাইওনিয়ার গার্মেন্টস, ফ্যাশন নীট, নাভানীট, সেড ফ্যাশনস, ফাউনটেন গার্মেন্টস সহ অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে বিক্ষোভ দেখিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
এদিকে রাতে মন্ত্রীর বাড়িতে সভায় উপস্থিত শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী তাদের জানিয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে কোন বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না। বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সেল গঠন করা হবে। যার প্রধান থাকবে সাভার সার্কেলের এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ এবং সদস্য থাকবে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। কোন বাড়িওয়ালা ভাড়া বৃদ্ধি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে মজুরী বোর্ডের কাছে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে রিভিও আবেদন করতে বলা হয়েছে। পরে আবেদনটি বিবেচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রীরা। সকালে জামগাড়ার ছয় তলা এলাকায় আচমকা শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তখন কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সদস্য গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন জানান, সোমবার রাতে ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রীর বাড়ীতে যে সভা হয়েছে সেখানে মন্ত্রীরা শ্রমিকদের শান্ত হয়ে কাজে যোগদানের আহ্বান জানালেও শ্রমিকরা এখন আমাদের কথাও শুনছে না। তারা মজুরী বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক ঘোষণার দাবী জানায়।
এদিকে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ শিল্পপুলিশ ও আমর্ড পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
বেতন বৃদ্ধি, ঘরভাড়া না বাড়ানো, ‘কথায় কথায়’ ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা গত আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।