Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর পল্লবী থেকে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই সদস্য আটক

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর পল্লবী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল তাদের আটক করে। র‌্যাবের দাবি, আটকদের একজন অর্থ আনা-নেয়া করতেন এবং অন্যজন জঙ্গিদের আশ্রয় দিতেন।
আটক দুইজন হলেনÑ নীলফামারীর আতিকুর রহমান (২১) ও বরিশালের খাদেমুল ইসলাম (২৮)।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া  সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল  দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির জানান, মঙ্গলবার ভোরে লালমাটিয়া এলাকা থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি জিহাদী বই, বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, নগদ অর্থ ৩৭ হাজার ৫৯৩ টাকা ও ৪টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আতিকুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ২০১১ সালে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে এসএসসি পাস করে। পরে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করে। বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার জন্য রংপুরে অবস্থান করে। এরপর সে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ২০১৫ সালে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন ক্লাস করার পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
 লুৎফুল কবির আরো জানান, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে  ফেসবুকের মাধ্যমে ফজলে রাব্বীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ফজলে রাব্বী নিজেকে জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। ফজলে রাব্বী তার ফেসবুক আইডিতে যেসব জিহাদী পোস্ট দিতেন সেগুলো মিলন লাইক দিয়ে তার নিজের আইডিতে শেয়ার করত। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। ফজলে রাব্বী মিলনকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ‘আব্দুর রহমান’ নামে সংগঠনের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে আব্দুর রহমান মারা গেলে সে জানতে পারে উল্লেখিত বড় ভাই জেএমবির একটি গ্রুপের প্রধান। ওই সময় রহমান মিলনকে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ বহনের কাজে নিয়োগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মিলন গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় অর্থ দিয়ে আসে এবং টঙ্গীর একটি বস্তিতে অর্থ দিতে গিয়ে খাদেমুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
খাদেমুলের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে। পারিবারিক আর্থিক সঙ্কটের কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জীবিকার জন্য ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় ব্যাগ তৈরি কারখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে। এ ছাড়া বর্তমানে তুরাগ থানা এলাকায় একটি অফিসে পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিল। তার ছোট ভাই নাজমুল ২০১৩ সালে আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আজমপুর ছাপড়া মসজিদে জুমার নামাজের পর দেখতে পায়, কতিপয় অপরিচিত লোক ল্যাপটপের মাধ্যমে মাওলানা জসীম উদ্দিন রহমানীর ওয়াজ শুনছেন। তখন নাজমুল ওই ওয়াজ মোবাইলের মেমরি কার্ডে  লোড করে নেয় এবং এ ওয়াজ খাদেমুলকে শোনায়। তখন  থেকেই সে জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে টঙ্গী আহলে হাদিস মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তার ছোট ভাই নাজমুলের সঙ্গে তাজুল ইসলামের পরিচয় হয়। তাজুল এবং নাজমুল এ মসজিদে নামাজ পড়ত। তাজুল নামাজের পর নাজমুলকে নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন দিক আলোচনা করত। এক সময় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের প্রচার ও প্রসার নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কথাবার্তা হয়। এরপর ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে তাজুলের মাধ্যমে মাহমুদ ও নীরব (বাড়ি-সিলেট)-এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। যেসব জঙ্গি প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসত তাদের আশ্রয়ের দায়িত্বে ছিল খাদেমুল ও নাজমুল। খাদেমুল জঙ্গিদের আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা পেত।
র‌্যাব-৪ এর পরিচালক খন্দকার লুৎফুল কবিরের ভাষ্য, গত ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে নিহত জঙ্গিনেতা আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহানের নির্দেশে আটক আতিকুর রহমান বিভিন্ন এলাকায় অর্থ বহন করে নিয়ে যেতেন। আতিকুর গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায় অর্থ দিয়ে আসেন এবং টঙ্গীর একটি বস্তিতে অর্থ দিতে গিয়ে খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হন। অন্যদিকে, প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরছাড়া জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন আটক খাদেমুল। খাদেমুল তার ছোট ভাই নাজমুলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের দিকে ঝোঁকেন।
আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আতিকুর রহমান ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১৪ সালে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রংপুরে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে। ২০১৫ সালে তিনি সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হন। এখানে কিছুদিন ক্লাস করার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। পরে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে তার ফজলে রাব্বী নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে এই ফজলে রাব্বীর মাধ্যমেই আতিকুর রহমান জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান, উপ-পরিচালক রইসুল আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ