Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলের উন্নয়নে ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

ঢাকা পায়রাবন্দর রেললাইন : ডিপি রেলের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর : ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন : বছরে ২০ লাখ কন্টেইনার পরিবহন

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকা থেকে যশোর হয়ে রেললাইন যাবে পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর। এজন্য ২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইন নির্মাণ করবে ইংল্যান্ডের ডিপি রেল কোম্পানি। এতে খরচ হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই রেলপথের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউনিট কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ডিপি রেলের এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, রেল লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। এ কাজে সহযোগিতা করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন। রেলমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে গণমানুষের পরিবহনে রুপ দিতে চান। এজন্য রেলের উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। একই সাথে এগিয়ে চলছে রেলের উন্নয়নের কাজ। তবে এই প্রকল্প হবে রেলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশের কোনো জেলা রেলনেটওয়ার্কের বাইরে থাকবে না।
রেলভবনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কাজী মোঃ রফিকুল আলম এবং ডিপি রেল লিমিটেড ইউকের পক্ষে এর প্রধান নির্বাহী ইয়ান এস ডার্বিশায়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এসময় রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এবং সফররত ইংল্যান্ডের বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাবলীলভাবে ইংরেজিতে বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য এ রেলাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ প্রথমবারের মত রেল সংযোগের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে এই লাইনটি দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এটিকে রেল খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রেল ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন রেল হলো সবচে’ সাশ্রয়ী, আরামদায়ক  যোগাযোগ ব্যবস্থা। এজন্য তিনি রেলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। মুজিবুল হক বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল লাইন প্রকল্প এতোদিন ছিল সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তবে আজকের প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এজন্য এটি রেলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। তিনি রেলের উন্নয়নে এগিয়ে আসার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প সম্পর্কে জানেন। তাঁর নির্দেশনা পেয়েই আজকে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করতে এসেছি। রেলের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইনের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইনের কাজ শিগগিরি শুরু হবে, জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর, আখাউড়া থেকে সিলেট, খুলনা থেকে যশোর ডাবল লাইন, পার্ব্বতীপুর থেকে কাউনিয়া ডাবল লাইন নির্মাণসহ বিদ্যমান যমুনা সেতুর উপর পৃথক আরও একটি রেল সেতু নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা ছোট বেলায় একটা প্রশ্ন পড়েছি বাংলাদেশের কোন জেলায় রেল লাইন নেই। এর উত্তর ছিল ‘বরিশাল’। মন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তখন আর কেউ বলতে পারবে না বরিশাল জেলায় রেল লাইন নেই।   
ইংল্যান্ডের  লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলী বলেন, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খুবই শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুদেশের একই লক্ষ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ এক ও অভিন্ন। এ দেশের উন্নয়ন অভাবনীয়। ব্রিটিশ হাই কমিশনার এলিসন ব্লেইক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ  ফিরোজ সালাহউদ্দিন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ  আমজাদ হোসেন ও ডিপি রেল লিমিটেডের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে সাত হাজার একরের বেশি ভূমি জুড়ে নির্মিত হচ্ছে পায়রা বন্দর। ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রার উদ্বোধন করেন। তবে জাহাজ ভিড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ। বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণ, তীর রক্ষা বাঁধ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে কয়েকদিন আগে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ সরকার।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ-পরবর্তী পরিচালনার মেয়াদ (কনসেশন পিরিয়ড) ধরা হয়েছে ৯৯ বছর। আর ব্রিটেনের রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে যৌথভাবে রেলপথটি নির্মাণ করলে কনসেশন পিরিয়ড হবে ৬০ বছর। রেলপথটির ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রপোজাল তৈরি করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ব্যয় ধরা হয় ৪২ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, পায়রাবন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত কন্টেইনার পরিবহনে ডেডিকেটেড (পৃথক) রেলপথ নির্মাণ করতে চায় পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ। এজন্য গত বছর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। এতে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন জিটুজি ভিত্তিতে এবং ডিপি রেল পিপিপির ভিত্তিতে এফআইয়ের মাধ্যমে রেলপথটি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিপি রেলের বিপরীতে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ইস্যুর সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ডিপি রেলের সঙ্গে নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ।



 

Show all comments
  • Munna ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ পিএম says : 0
    প্রকল্পগুলো সঠিক সময় সফলভাবে শেষ করার প্রত্যাশা করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ