পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্যাস, বিদ্যুৎ আর ডলার সঙ্কটে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের কল-কারখানায় উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ছে। কমছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় সঙ্কটের মুখে শতভাগ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। ডলার সঙ্কটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতেও ভাটা পড়েছে। এর ফলে ইস্পাত, সিমেন্টসহ সব ধরনের শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমছে।
নতুন কারখানা স্থাপন, বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ তথা উন্নয়ন-বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে কমে আসছে রফতানিও। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় এ খাত গভীর সঙ্কটের দিকে ধাবিত যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় আটকা পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার রফতানি পোশাক।
উৎপাদন কমে যাওয়ায় কাজ নেই, তাই শুরু হয়েছে শ্রমিক ছাঁটাই। এ অবস্থায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন লাখ লাখ শ্রমিক। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হলে পোশাক শিল্পের জন্য মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। সঙ্কটের কালো ছায়া ইস্পাত, সিমেন্ট, শিপব্রেকিংসহ অন্যান্য খাতেও। আমদানি-রফতানিতে নেতিবাচক ধারায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনারের সংখ্যা কমছে। টান পড়ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণে। চট্টগ্রাম বন্দরে গেল সেপ্টেম্বর মাসে আগের মাসের তুলনায় আমদানি কন্টেইনারের সংখ্যা ১১ দশকি ৬৮ শতাংশ এবং রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের সংখ্যা ১৬ শতাংশ কমেছে। তিন মাসের ব্যবধানে কাস্টম হাউসের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ কমেছে। বিগত চার মাসে টার্গেটের তুলনায় রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে তিন হাজার ৫৫ কোটি টাকা। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে এ নেতিবাচক ধারা সামনের দিনগুলোতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে দেশে চরম জ্বালানি সঙ্কট। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে শিল্পোৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে বাড়ছে ব্যয়। আবার বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রফতানিও কমছে। সব মিলিয়ে কঠিন সঙ্কটে পড়েছে রফতানিমুখী শিল্প খাত। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। আবার মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ক্রয় আদেশও কমে গেছে।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রয় আদেশ কমেছে ৩০-৩৫ শতাংশ। এর ফলে কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে কারখানা মালিকেরা শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করে দিয়েছেন। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার তৈরি পোশাক কারখানা আউট-ফিট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মাসে গড়ে দুই লাখ পিস পোশাক রফতানির অর্ডার পেতেন তিনি। এখন তা এক লাখে নেমে এসেছে। আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে ব্যয়ও বেড়ে গেছে। উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে অথচ ৬৫০ জন শ্রমিকের বেতন-ভাতা ঠিকই দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিক ছাঁটাই করা ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না বলে জানান তিনি।
কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক জানান, ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় কারখানা পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না। আবার বসিয়ে রেখে শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বেশিদিন কারখানা সচল রাখা যাবে না। ডলার সঙ্কটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে সামনের দিনে পোশাক শিল্পে কাঁচামাল সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠবে। বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে যতটা না ক্ষতি হয়েছে রফতানি কমে যাওয়ায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ক্রয় আদেশ ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে গেছে। অর্ডার দিয়েও পণ্য নিচ্ছেন না বিদেশি ক্রেতারা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয় আদেশ দিতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিলম্ব করেছে। সেই ক্রয় আদেশ আসতে শুরু করেছে। আগামী ১৫-২০ দিন তা আসবে। এই সময়ের মধ্যে ভালো ক্রয় আদেশ না এলে সামনে পোশাকশিল্পের জন্য মহাসঙ্কট আছে।
তৈরী পোশাক রফতানিকারকেরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানকার মানুষ নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাতে গুদামে পণ্যের মজুত বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয় আদেশ দেয়া কমিয়ে দেয়। চট্টগ্রামে প্রায় ৪০০টির মতো পোশাক কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় সাত লাখের মত শ্রমিক কর্মরত। এসব কারখানার মধ্যে ২০০টি সরাসরি পোশাক রফতানি করে বাকি ২০০টি কারখানা সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে। এমন কারখানার বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক কারখানা সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। অনেক কারখানা মালিককেই ঋণ করে শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে। কারখানা মালিকরা বলছেন, এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসনে সরকারের বেশি জোর দেয়া উচিত। যাতে করে যখন ক্রয় আদেশ আসবে, তখন যেন তা নেয়ার মতো সক্ষমতা থাকে। বিজিএমইএর হিসেব বলছে, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে চার হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়। এ সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও রফতানি ভালো ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে রফতানি সাড়ে ৭ শতাংশ কমে যায়। ওই মাসে রফতানি হয় ৩১৬ কোটি ডলারের পোশাক। যদিও অক্টোবরে পোশাক রফতানিতে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে এলসি খোলার হার কমে যাওয়ায় ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন আগেই হ্রাস পেয়েছে। তবে ডলার সঙ্কটে এখন কাঁচামাল আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জিপিএইচ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (এফ অ্যান্ড বি ডি) কামরুল ইসলাম এফসিএ বলেন, কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোতে ডলার সঙ্কট চলছে। গত পনের দিনে এলসি খোলা প্রায় বন্ধ। জ্বালানি সঙ্কটে এমনিতেই উৎপাদন কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন আরো কমে যাবে।
একই অবস্থা সিমেন্ট খাতেও। সার্বিক পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কলকারখানা সচল রাখার স্বার্থে যেকোন ভাবেই হোক কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে এলসি খোলা স্বাভাবিক রাখতে হবে। তা না হলে উৎপাদনে ধস নামবে। নতুন বিনিয়োগ আসবে না। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব বাড়বে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও হবে না। সরকার জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুত এ উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে। কারণ শিল্পোৎপাদন বন্ধ হলে দেশের অর্থনীতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
পোশাকের দাম কমালে অস্তিত্ব থাকবে না
অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, অর্ডার কম আসার দোহাই দিয়ে যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে কম দামে পোশাকের অর্ডার না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীতে শেরাটন হোটেলে প্রাক-মেইড ইন বাংলাদেশ উইক বিষয়ে বিজিএমইএর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বায়াররা পোশাকের দাম কমায় না, দাম কমান পোশাক কারখানা মালিকরা। বিশ্ব মন্দার কারণে এখন আমাদের অর্ডার কমেছে, এই অজুহাতে যৌক্তিক মূল্যের চেয়েও কম মূল্যে পোশাক রফতানির অর্ডার নিচ্ছেন কারখানা মালিকরা। যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে কম দামে পোশাক রফতানির অর্ডার নিলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা সবাই বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা জানি। এর মধ্যেই আমরা আমাদের কাজ করে যাবো। বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি এবং ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে এই অনুষ্ঠানে বিদেশি বায়ারের কাছে তুলে ধরা হবে। আমরা যে কাজটি করছি তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।
ফারুক হাসান বলেন, বেশ কিছু ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের ডিজাইন জমা দিয়েছে। এগুলো ফ্যাশন শোতে তুলে ধরা হবে। এছাড়া এখান থেকে আয়ের একটি অংশ দিয়ে সরকারের রাজস্বতে অবদান রাখতে পারবো।
প্রাক-মেইড ইন বাংলাদেশ উইক উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে গলফ টুর্নামেন্ট, ফ্যাক্টরি পরিদর্শনসহ নানা আয়োজন থাকছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।