Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলহ-বিবাদ দ্বীন ধ্বংস করে দেয়

মুফতী আবদুল মাজীদ | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা অসংখ্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন কিন্তু কারো সাথে কারো চেহারার কোন মিল নেই। কারো আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি এমনকি কারো আঙ্গুলের ছাপের সাথে অন্য কারো আঙ্গুলের ছাপের কোন মিল নেই। এত সব অমিলের মধ্যে দুজন লোক মিলে মিশে থাকা বিস্ময়কর ব্যাপার এবং বিচ্ছেদ, বিভেদ, বিরোধ, বিবাদ অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কিছু কিছু স্বভাবজাত বিষয় রয়েছে যা অকল্যাণক বয়ে আনে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করা। আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন : তোমরা ঝগড়া-বিবাদ করো না, অন্যথায় হিম্মত হারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা আনফাল : ৪৬)।
তিনি অন্যত্র বলেন : নিশ্চয় যারা কেয়ামত সম্পর্কে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তারা গভীর গোমরাহীতে রয়েছে। (সূরা শূরা : ১৮)। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই জন্য ইলম শেখে যে, তা দ্বারা সে আলেমদের উপর গর্ব করবে অথবা নির্বোধদের সাথে বিতর্ক করবে অথবা মানুষদের দৃষ্টি তার প্রতি ফিরিয়ে নেবে, সে ইলম তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যাকে ঝগড়া-বিবাদ, ক্রোধ ও লোভ থেকে মুক্ত রাখা হলো সেই সফলকাম। (আলবিদায়া অন নেহায়া : ৯/২০৯)। হযরত সোলাইমান ইবনে দাউদ আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বলেছেন, ঝগড়া ছেড়ে দাও। কারণ তার লাভ অনেক কম এবং ভাইদের মধ্যে শত্রæতার বীজ বপন করে দেয়। (দারেমি : ১/১০২)।
অতএব কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথা স্পষ্ট যে কলহ বিবাদ অত্যন্ত জঘন্য কাজ এ থেকে আমাদের সকলকে দূরে থাকা চাই।
যে ব্যক্তি হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেও ঝগড়া ছেড়ে দেয়, প্রিয় নবী (সা.) তার ব্যাপারে বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথে থেকেও ঝগড়া ছেড়ে দেয় আমি তার জান্নাতের কিনারায় একটি অট্টালিকার জিম্মাদার। যে ব্যক্তি মিথ্যা ছেড়ে দেয় আমি তার জান্নাতের মাঝখানে একটি অট্টালিকার জিম্মাদার। আর তার জন্য জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে একটি অট্টালিকার জিম্মাদার যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আবু দাউদ রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, কারো জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের অধিক এমন ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ নয়, যে দু’জন মিলিত হলে একজন এদিকে ও আরেকজন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এই দু’জনের মধ্যে উত্তম ওই ব্যক্তি যে আগে সালাম করে। বোখারী, মুসলিম ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া পুণ্যের কাজ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে বলব রোজা, নামাজ ও সাদাকা থেকে শ্রেষ্ঠ আমল কী? তা হচ্ছেপরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। আর পরস্পরের মধ্যে কলহ-বিবাদ মুন্ডিয়ে দেয় অর্থাৎ দিন ধ্বংস করে দেয়। (আবু দাউদ)।
মিথ্যা একটি জঘন্য অপরাধ। কিন্তু কোন বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার জন্য মিথ্যা বলার অনুমতি আছে। হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে ওকবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয় যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। সে কল্যাণের জন্যই মিথ্যা কথা বলে এবং কল্যাণের জন্যই চোগলখুরি করে। (বুখারী)। প্রকৃত মুসলমান কে? তার পরিচয় দিতে গিয়ে প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী)। প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, যার অনিষ্ঠা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম)। অতএব আসুন আমরা কলহ-বিবাদ বাদ দিয়ে, রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে, শান্তিময় সমাজ গঠন করি। আল্লাহ সহায় হোন, আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ