Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসুস্থতা ও চিকিৎসা

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

আমাদের জীবন যখন আছে। দুঃখ বেদনা, রোগ শোক, বিপদ মসিবত আসবে এটাই স্বাভাবিক। দুঃখ, রোগ, বিপদ এলে প্রত্যেক মানুষ দুঃখ রোগ বিপদ থেকে মুক্তি চায়, মুক্তি পেতে চেষ্টা করে এটাও স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম। পৃথিবীতে একজন মানুষ ঁেবচে আছে, অথচ তাকে কোন রোগ শোকে পায়নি, দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করেনি, বিপদ ঘিরে ধরেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। সুস্থতা-রোগ, সুখ-দুখ, বিপদ-শান্তি, পেরেশানী-প্রশান্তি একটি অপরটির সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। একটি এসে অপরটির মূল্যায়ন বাড়িয়ে দেয়। মন্দ আর ক্ষতি, কষ্ট থেকে বাঁচার, বিপরিতটি অর্জন করার জন্য পাগল পারা হয়ে যায়।
ক্ষুধা লাগলে মানুষ খাবার সন্ধান করে, খাবার খায়। পিপাসা লাগলে পানি খোঁজ করে, পানি পান করে পিপাসা দুর করে। এটা সকল মানুষের চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু একজন ইমানদার আর একজন কাফের তার মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। কাফের শুধু চতুস্পদ জন্তুর মত খাবার সাবার করে, শুধু উদর পূর্তি করে। আর একজন ইমানদার খাবার নিতে তাঁর ¯্রস্টার নাম নেয়, খাবার গ্রহনের সময়, খাবার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। মানব জীবনে দুঃখ- কষ্ট, রোগ-শোক, দুশ্চিন্তা-পেরেশানী, বিপদ-মসিবত, অভাব-অনটন বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে। সৃষ্টিগত কারন, ব্যক্তিগত কারন, শত্রæতাগত কারন, জ্বিনগত কারন, জাদুগত কারন ইত্যাদি। একমাত্র মৃত্যু রোগ ছাড়া, মৃত্যুগত বিপদ ছাড়া সব বিপদের, সব রোগ শোক থেকে উদ্ধারের পথ মহান রব রেখে দিয়েছেন। এমন কোন রোগ নেই যার ঔষধ মহান রব সৃষ্টি করেননি। এমন কোন পেরেশানী নেই যা দুর করার পথ দয়ালু আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। এমন কোন অভাব অনটন নেই যা কখনো দুর হবার নয়।
ইমাম মুসলিম রাহ. তাঁর সহিহ মুসলিমে বর্ণনা করেন, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক রোগের ঔষধ আছে। যখনই রোগের ঔষধ পাওয়া যায়, তখন আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তা সুস্থ হয়ে যায়। ইমাম বুখারী রার. সহিহ বুখারী তে বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ এমন কোন রোগ দেননি যার আরোগ্যের কোন ব্যবস্থা করেননি। ইমাম আহমাদ রাহ. মুসনাদ বর্ণনা করেন, উসামা ইবনে শারিক রাঃ বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এস দেখলাম তাঁর সাহাবীগনের মাথার উপর যেন কোন পাখি বসে আছে। অর্থাৎ এক্বেবারে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি যেখানে সালাম দিয়ে বসলাম। এমন সময় এদিক সেদিক থেকে কিছু বেদুইন এসে বলল হে আল্লাহর রাসুল আমরা কি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করব। তিনি বললেন, তোমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করো। কেননা মহান আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেছেন।
ইমাম আহমাদ রাহ. মুসনাদে আহমদে বর্ণনা করেন এছাড়াও সুনানে হমায়দীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি। যার ঔষধ তিনি সৃষ্টি করেননি। যাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তিনি জেনে গেছেন। আর যাকে অজ্ঞ রেখেছেন তিনি মুর্খ থেকেছেন। আব খুজামা ইবনে কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল এই যে ঝাড়ফুঁক করানো অথবা ঔষধ ব্যবহার করা হয় অথবা সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। আপনি কি মনে করেন এর দ্বারা আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জবাবে বললেন, এটিও (চিকিৎসা গ্রহন) আল্লাহর তাকদীরের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর সৃষ্টিতে প্রত্যেকটি সৃষ্টির প্রতিপক্ষ রয়েছে। একটি অপরটির ক্ষতি করে, বা উপকার করে, সাহায্য করে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সফলতা এনে দেয় বা ব্যর্থ করে দেয় বা ব্যর্থ করে দিতে চেষ্টা করে। এখানে কেউ সহযোগী কেউ প্রতিযোগী। কেউ শত্রæ, কেউ মিত্র। কেউ কল্যানকামী কেউ ক্ষতিকর। এখানে সুখ দুখ, হাসি কান্না, সফলতা ব্যর্থতা, রোগ শোক, পেরেশানী প্রশান্তি, উপকার ক্ষতি সবকিছু বিদ্যমান। এই সৃষ্টি নিপুনতায় মহান রবের প্রভুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব প্রকাশ পায়। প্রতিপক্ষ, শত্রæ থেকে বাঁচতে চাই মহা শক্তিমানের দয়া মায়া করুণা।
এই কষ্ট ক্লেষ, প্রশান্তি সুখ বিপরিত ধর্মী জীবনের বাকে বাকে আমরা সহযোগিতা, চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক, আমালিয়াত, দান সাদাকা বিভিন্ন পথ গ্রহন করে থাকি বা সমম্বিত পথ অবলম্বন করে থাকি। এখানে কেউ ভুল পথে অগ্রসর হই। কেউ সঠিক পথ তালাশ করি। মহান রব এত দয়ালু, এত দয়া আর মমতায় ভরা যার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। চিকিৎসাকে মহান রব অনেক সহজলভ্য করে দিয়েছেন। তবে আজকাল টাকা কামাইর ধান্ধা হিসেবে কিছু কিছু রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল। এখানে সেবার চেয়ে ব্যবসা অর্থাৎ টাকা মুখ্য। মহান রব আমাদের জানা চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে ইউনানী, আয়ুর্বেদীক, এ্যালুপেথিক, হোমিওপেথিক, থেরাপি, আকুপ্রেশার, আকুপাংচার, সেরাজেম, ব্যায়াম, একক ভেষজ, সমম্বিত ভেষজ, কোরআন হাদিসের আমালিয়াত, ঝাড়ফুঁক, বিভিন্ন এলাকায় প্রচলিত টুটকা ইত্যাদি চিকিৎসার ব্যবস্থা দিয়েছেন। তাছাড়া রোগ শোক বালা মসিবতে দান সাদাকাও একটি বিপদ মুক্তির মহৌষধ।
মহান রব প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রেখেছেন। এটা মহান মালিকের কত বড় দয়া। কোন রোগীকে, কোন বিপদ গ্রস্থকে, কোন ব্যথাতুর হৃদয়কে একা ছেড়ে দেননি। তার চিকিৎসা তার শান্তনা, তার বিপদ মুক্তি সবকিছু তিনি রেখে দিয়েছেন।



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০২ এএম says : 0
    আমার ১টি মেয়ে মৃগীরোগে আক্রান্ত বহু ডাক্তার কবিরাজ দেখাইয়াছি।ঐষধ নিয়মিত খাওয়াইতেছি।তারপর ও মাজে মাজে রোগটা উঠে।আমরা দিশেহারা।একটু পরামর্শ দিবেন কি? দিলে কৃত্ঙ থাকবো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ