চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
বাংলাদেশ ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ। এ দেশ শহীদ-গাজী, অলী-আউলিয়া সাধক-সুফীদের পূণ্যস্মৃতিধন্য। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে মসজিদের সুউচ্চ মিনার থেকে ভেসে আসা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির সুর মূর্ছনায়। তাদের সারা দিনের কর্মযজ্ঞের অবসান ঘটে এ ধ্বনির মাধ্যমে। এ ধ্বনির আহŸানে সাড়া দিতেই লক্ষ-কোটি মুসলিম প্রতিদিন পাঁচবার ছুটে যান মসজিদ পানে। এদেশের আনাচে-কানাচে প্রতি মুহূর্তে অযুত কন্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয় এই পবিত্র ধ্বনি। এদেশের গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দর-নগরে প্রতি বছর হাজার হাজার তাফসীর মাহফিল, ইসলামী জলসা, ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে তাকবীর ধ্বনির ক্ষেত্রে সাধারণত ‘লিল্লাহি তাকবীর’, ‘নারায়ে তাকবীর’ ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি এবং এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘আল্লাহ আকবার’ ¯েœাগান প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।
মোটকথা, বাঙালি মুসলমানদের সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস, নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে মিশে আছে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি। এ ধ্বনি তাদের অস্তিত্বের অংশ। শুধু বাংলাদেশী মুসলমানই নয়; বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহ আকবার’ ধ্বনির সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ ধ্বনি বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়। এ ধ্বনি বিশ্বমুসলিমের হৃদয়ের স্পন্দন। তাদের জাতিসত্তার পরিচয়। এ ধ্বনি মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতির অপর নাম। তাদের চেতনার বাতিঘর এবং প্রেরণার উৎস। এ ধ্বনি মুসলমানদের প্রতিবাদী শ্লোগান, প্রতিরোধের ভাষা, বিজয়ের মন্ত্রণা। এ ধ্বনি বিশ্ব মুসলিমের সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অংশ। এটি বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় শ্লোগান। এ ধ্বনির মাধ্যমে মুসলিম হৃদয়ে জাগ্রত হয় বিশ্বাসের ফল্গুধারা, অমিত তেজ, অসীম বিক্রম।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- মুসলিম সন্তানদের অনেকেই আজ ইসলাম, ইসলামী আচার-সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ এবং উদাসীন। তারা মুসলমানদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে বিজাতীয়দের অন্ধ অনুকরণে মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত। সে কারণে ¯্রষ্টার মহত্ব ও বড়ত্ব সম্বলিত ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির পরিবর্তে তারা সৃষ্টির নামে ধ্বনি দিচ্ছে, শ্লোগান দিচ্ছে। অনেকেই আল্লাহর নামের শ্লোগানকে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট করে ফেলছে। কেউ কেউ আল্লাহর নামের ধ্বনিতে বিব্রত বোধ করছে। কেউ কেউ আল্লাহর নামের ধ্বনি পরিত্যাগ করে কিংবা এড়িয়ে চলে কিংবা দূরত্ব বজায় রেখে বিজাতীয় প্রভুদের সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করছে। কেউ আবার আল্লাহর নামের ধ্বনিকে নিজের বাপ-দাদার ধ্বনি বলে দাবি করছে। কেউ আবার ইনিয়ে বিনিয়ে ‘নারায়ে তাকবীর’ ‘আল্লাহু আকবার’ এর মধ্যে বিশেষ জাতি গোষ্ঠীর গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এখানেই শেষ নয়, ইসলাম বিদ্বেষীদের একাংশ ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিকে সমালোচনা, প্রতিরোধ, চ্যালেঞ্জ, মোকাবেলা এমনকি উৎখাত করার ঘোষণা দেয়ার মতো স্পর্ধা দেখাচ্ছে। অথচ এ দেশে যেসব দল বা গোষ্ঠী রাজনীতির মাঠে আছেন তাদের নামের সাথেও ঐ বিশেষ ভাষা গোষ্ঠীর নাম জড়িত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল ‘আওয়ামী লীগ’। ‘আওয়াম’ উর্দু শব্দ, এর অর্থ জনগণ আর ‘লীগ’ ইংরেজি শব্দের অর্থ দল। একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগ অর্থ জনগনের দল। পূর্বে এ দলটির নাম ছিল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। তখন উর্দু, আরবি এবং ইংরেজি- তিন ভাষার শব্দ নিয়ে দলটির নামকরণ হয়েছিল। দলীয় নামকরণে উর্দু শব্দ থাকায় এ দলটিকে বিশেষ রাষ্ট্র বা ভাষা কিংবা গোষ্ঠীর তাবেদার বলার অবকাশ কিংবা সাহস কারো আছে কি? অবশ্যই নেই। এমনিভাবে অন্যান্য দলগুলোর নামকরণ ইংরেজি কিংবা আরবি শব্দে হওয়ার কারণে তাদেরকে সে ভাষাভাষির তাবেদার বা অনুসারী বলা যাবে কি? তাও বলা যাবে না। আসলে নানা ভাষার সংমিশ্রণে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিদ্বেষীদের তাকবীরের বিরোধীতার ক্ষেত্রে দল, গোষ্ঠী, ভাষা কোনো সমস্যা নয়। তাদের কাছে সমস্যা হলো-ইসলাম, ইসলামী পুনর্জাগরণ ও বিজয়। ‘নারায়ে তাকবীর, লিল্লাহি তাকবীর’, ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগানের বিরোধীতাকারীরা আসলে ইসলামেরই বিরোধীতা করতে চায়। ইসলামের আওয়াজকে সংকুচিত কিংবা স্তব্ধ করতে চাই। কিন্তু কোটি মুসলমানের দেশে তাদের এ স্বপ্ন-সাধ কোনো দিনই পূরণ হবে না। কাফির-মুশরিক-মুনাফিক এবং শয়তানের উত্তরাধিকারীরা যতোই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীনকে বিজয়ী রাখবেনই। সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রামে এক রাজনৈতিক নেতার ‘নারায়ে তাকবীর’ শ্লোগান নিয়ে, আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের খবর সচেতন মহলের সবারই জানা। অথচ এসব অপরিণামদর্শীরা এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রভাব, গভীরতা জানে না। জানে না তাকবীরের প্রভাব, তাকবীরের ইতিহাস। যারা অন্তরে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি বিশ্বাস, ধারণ ও লালন করেন তাদের মোকাবেলা কিংবা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দুনিয়ার কারো নেই। এদেশে শাহজালালের সন্তানরা যদি সম্মিলিতভাবে তাকবীর ধবনি দেয় তাহলে সে তাকবীরের ধ্বনিতে গৌরগোবিন্দদের দম্ভ-মসনদ মুহূর্তের ব্যবধানে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো আল্লাহর মোকাবেলায় অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারে না। সুতরাং ‘নারায়ে তাকবীর’ লিল্লাহি তাকবীর’ ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি নিয়ে সমালোচনা করা, প্রক্রিয়া দেখানো, গোস্সা করা, ক্ষোভ দেখানো কোনো মুসলমানের পক্ষে শোভনীয় নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।