চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলামে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা মানুষের মধ্যে যখন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার মনমানসিকতা তৈরী হয়, তখন সমাজে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন বাসা বাঁধতে পারে না। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ করা সহজ থেকে সহজতর হয়। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা- সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমের মধ্যে বলেন: আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)।
তিনি আরো বলেন: তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। তিনি অন্যত্র বলেন: আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে। ( সূরা তওবাহ : ৭১)।
এই প্রসঙ্গে হাদিসে এরশাদ হয়েছে: আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত : আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা ( উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান (সহীহুল বুখারী ৯৫৬)।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, হুযাইফাহ (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী (সা.) বলেন : তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দো‘আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না। (তিরমিযী : ২১৬৯; রিয়াদুস সলেহিন : ১৯৮)। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে, শুধুমাত্র মনুষ্য জাতিকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সমাজে এর ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজ থেকে পরস্পর ভালোবাসা ও সাহায্য-সহযোগিতা করার মনোভাব ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন একজন মানুষ পথভ্রষ্ট হলে কিংবা অন্যায়, জুলুমের শিকার হলে অন্য মানুষ হক কথা বলতে এগিয়ে আসে না।
তারা মনে করে আমরা তো ভালো আছি, অন্য জনের যা হয় হোক। দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার ভাবে প্রতিয়মান হলেও ভালো কাজের আদেশ দিতে কেউ চায় না।
আবার কেউ মন্দ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেও কোনো মানুষ মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এগিয়ে আসে না। তারা এটাকে ঝামেলা মনে করে। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। যদি কোনো সমাজের বিবেকবান, ধর্মভীরু মানুষ সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধাবোধ করে কিংবা অন্যায় বা অসৎ কাজ দেখে প্রতিবাদ করার জন্য এগিয়ে না আসে তাহলে সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। সে সমাজে কখনও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে না। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। মানুষে মানুষে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়, ইত্যাদি। যা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য শুভকর নয়।
আর মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করার নিদের্শ দিয়েছেন এবং রসুল (সা.) ও এবিষয়ে মনুষ্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাই কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান যদি কোনো মন্দ কাজ দেখে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ না করে এবং ভাল কাজে আদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার আদেশ অমান্য করার কারণে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক শাস্তির সম্মুখীন হবে। অতএব, আসুন মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করি- মন্দ কাজ দেখলে প্রতিবাদ করি, শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।