পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংকে টাকার কোন সঙ্কট নেই, দেশে রিজার্ভের কোন সঙ্কট নেই
‘আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেবেন’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকে টাকার কোনো সঙ্কট নেই। দেশে রিজার্ভের কোনো সঙ্কট নেই। রিজার্ভের টাকা দেশবাসীর কল্যাণে ব্যয় করেছি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আর আমরা দেশবাসীকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছি। যশোরে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ সম্পন্ন হয়েছে। বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। আমাদের সরকার দেশের মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
যশোরে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হাজির হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ বছর পূর্বে যে স্থানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন সে জায়গায় লাল গালিচা দিয়ে সাজানো হয়েছিল সভামঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে প্রবেশ করেন সেই পথ থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত লাল গালিচায় মুড়ে দেয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ব্যানারে ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম জনসভা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে গোটা যশোর জেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। বৃহত্তর যশোরজেলাসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকেও হাজার হাজার নেতাকর্মী এ সমাবেশে যোগদান করেন।
ঐতিহাসিক যশোর জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। দ্রæতই সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আর স্টেডিয়ামের অবস্থা খুব খারাপ। জরাজিন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ এটাকে আমরা ১১ স্তরবিশিষ্ট স্টেডিয়াম করে দেবো।
তিনি আরো বলেন, ‘অভয়গরে ইপিজেড করে দিচ্ছি। সেখানে ৫০০ একর জমি নেয়া হয়েছে। সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। যুব সমাজের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। শুধু চাকরি খুঁজলে হবে না। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। জামানত ছাড়া ঋণ পাওয়া যাবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কেউ বেকার থাকবে না। কেউ কিছু না কিছু করতে পারবে। আমরা সেটা করে দিয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, রিজার্ভ গেল কোথায়? রিজার্ভ কোথাও যায়নি। রিজার্ভ মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, নিষেধাজ্ঞা, যে গম ২০০ ডলারে আনতাম সেই গম এখন ৬০০ ডলার। তারপরও আমরা কিনে নিয়ে এসেছি, আমাদের দেশের মানুষের জন্য। ভুট্টা, সার, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। পরিবহন খরচ বেড়েছে, তারপরও আমরা খরচ করছি এবং কিনে নিয়ে আসছি, আমার দেশে কোনো মতে যেন খাদ্য ঘাটতি না দেখা দেয়। সে জন্য আমি দেশের মানুষের প্রতি আহŸান করেছি, ১ ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকটা জমি আবাদ করতে হবে। যাতে করে আমাদের কোনোদিন খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারো কাছে হাত পেতে-চেয়ে চলতে না হয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে খালেদা জিয়া সময় প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। এটাকে আমরা কমিয়ে ২০ ভাগে এনেছি। আমরা যদি আরো কমাতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশে দরিদ্র বলে কেউ থাকতো না। হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল, সেটা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমরা মানুষের কথা চিন্তা করি। করোনার সময় আমরা নগদ অর্থ বিতরণ করেছি মানুষের মধ্যে। এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই যাদের আমরা সহযোগিতা করিনি। যেসব স্কুল এমপিওভুক্ত না, সেসব শিক্ষকের কাছেও আমি টাকা পাঠিয়েছি। মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন থেকে শুরু করে আমাদের শিল্পী, প্রত্যেককে আমরা সহযোগিতা দিয়েছি। আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। টাকা আমরা জনগণকে দিয়ে দিয়েছি। গ্রামে গ্রামে টাকা পাঠিয়েছি যেন করোনার সময় কোনো মানুষের কষ্ট না হয়। বিনা পয়সায় খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি, বলেন শেখ হাসিনা।
সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা গুজবে কান দেবেন না। বিএনপির কাজই হচ্ছে সব সময় গুজব ছড়ানো। ওরা নিজেরা কিছু করতে পারে না। ক্ষমতায় যখনই এসেছে, লুটপাট করে খেয়েছে। ’৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, তার আগে বিএনপি ছিল ক্ষমতায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রেখে গিয়েছি। ২০০৯-এ যখন দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলাম, তার আগে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছিল, রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আওয়ামী লীগ প্রধান আরো বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স আসছে, বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। আমদানি-রফতানি আয়, ট্যাক্স কালেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশ যেখানে হিমসিম খাচ্ছে, নিজেরা অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। সেখানে বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে আজকে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অর্থনীতিকে এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
দুরবিন দিয়ে জনস্রোত দেখলেন শেখ হাসিনা : সকাল থেকেই যশোর জেলার আট উপজেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সাধারণ মানুষের আসতে শুরু করেন। বেলা হতেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যশোরের জনসমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছানোর আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মঞ্চে বসেই দুরবিন দিয়ে উপস্থিত জনতাকে দেখলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে তিনি মঞ্চে ওঠেন। এই সময় দলীয় নেতাকর্মীরা সেøাগানে সেøাগানে তাকে স্বাগত জানান।
এর আগে ঢাকঢোলের তালে নেচে-গেয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশে যোগ দেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা নারীরা। তারা লাল-সবুজ শাড়ি পরিধান করে বর্ণিল সাজে ঢাকঢোল বাজিয়ে দল বেঁধে যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়ামে গিয়ে জড়ো হন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নানা অঙ্গভঙ্গিতে নেচে গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি করেন তারা। তাদের মিছিলের বহরে ছিলেন পুরুষ নেতাকর্মীরাও। মিছিলে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।
আল্টিমেটাম কাদেরের : যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ারদের বলছি, যশোর খুলনার রাস্তা ঠিক না হলে খবর আছে। একমাসের সময় দিলাম, ঠিক না হলে খবর আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জনগণের দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু, মধুমতী সেতু করেছেন। এখন ঢাকা থেকে যশোর আসতে লাগে আড়াই ঘণ্টা, আগে লাগতো ৮ ঘণ্টা। তিনি আরো বলেন, যশোরের মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে এক মহাসমুদ্র, বাইরে আরেক মহাসমুদ্র। বিএনপি বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক। পলাশীর সেনাপতি ইয়ারলতিফ, আর পঁচাত্তরের ইয়ারলতিফ হচ্ছে জিয়া। ঢাকা শহরে বাড়ির বাইরে লেখা থাকতো কুকুর থেকে সাবধান, আর আমি বলছি, বিএনপি থেকে সাবধান। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।
বিএনপি খুলনায় মঞ্জুরুল ইমাম, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালু, যশোরের শামসুর রহমান কেবলকে হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা ছাড় দিয়েছে। কিন্তু আগুন নিয়ে আসলে খেলা হবে, আমরা ছাড় দিবো না। যশোরের মানুষ, খুলনার মানুষ প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁতে হবে। উন্নয়নের জন্যে আরেকবার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার।
জনসমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি আর কোনোদিন আসতে পারবে না। তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, রাজনীতি ছাড়ার মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছে বিএনপির এক নেতা। সেখান থেকে সে ঘোষণা দিয়েছে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন, তাদের ‘গো ব্যাক পাকিস্তান’ করে দেবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমদ প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।