Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনকল্যাণে সদকার গুরুত্ব

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফিরোজ আহমাদ : অসহায়, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মান্নোয়নে সদকার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিত্তবান ব্যক্তির দেয়া সদকায় একজন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণমুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। সদকা দ্বীনের পথে অনুরাগী ব্যক্তিকে দ্বীন-ধর্ম পালনে আরো উৎসাহিত করে। সদকা অসহায় মানুষের মনোবল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও সদকার নানামুখী গুরুত্ব রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সদকা হচ্ছে ফকীর মিসকীনের জন্য, এর (ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত) কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তকরণ (দ্বীনের প্রতি) অনুরাগী করা প্রয়োজন তাদের জন্য, গোলামি থেকে মুক্ত করার জন্য, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের (ঋণ মুক্তির) জন্য, আল্লাহপাকের পথে ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহপাকের নির্ধারিত ফরয’। (সূরা তওবা, আয়াত : ৬০)।
বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ সম্পদ থেকে সদকা প্রদান করাই উত্তম। সদকার উপকরণ কিংবা বস্তু ছোট বড় কম বেশি যা হউক, একটি খেজুর সমপরিমাণ হলেও হালাল হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেরা যা অর্জন করেছো, সে পবিত্র (সম্পদ) এবং যা আমি যমীনের ভেতর থেকে তোমাদের জন্যে বের করে এনেছি, তার থেকে উৎকৃষ্ট অংশ ব্যয় করো, নিকৃষ্টতম অংশগুলো বেছে রেখে তার থেকে ব্যয় করো না, যা অন্যরা তোমাদের দিলে তোমরা তা গ্রহণ করবে না, অবশ্য যা কিছু তোমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করো তা আলাদা’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৬৭)।
সদকা প্রদানের জন্য জাকাত আদায়ের মতো নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকার প্রয়োজন হয় না। ইচ্ছা করলে অসহায় অসচ্ছল ব্যক্তির কল্যাণের জন্য একটি খেজুর পরিমাণ বস্তু সদকা হিসেবে দেয়া যাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সচ্ছল হোক কিংবা অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ যারা মাফ করে দেয়; ভালো মানুষদের আল্লাহপাক ভালোবাসেন’। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৩৪)।
সদকা নানাভাবে আদায় করা যায়। সদকা শুধুমাত্র নগদ অর্থ কিংবা গরু-ছাগল দিয়ে প্রদান করতে হয় বিষয়টি এমন নয়। হযরত আবুজর গিফারী (রা.) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ বলাও একটি সদকা, আল্লাহু আকবার বলাও একটি সদকা, ভালো কাজের উপদেশ দেয়াও একটি সদকা এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করাও একটি সদকা’। (মেশকাত : ১৮০৪)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমানকে বস্ত্র পড়াবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন; কোনো মুসলমানকে অন্নদান করলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে খাদ্যরূপে ফল দান করবেন, কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে আল্লাহ কেয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন’। (মেশকাত : ১৮১৮)।
সদকা প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রদান করা যায়। সদকা প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। দিন-রাত যে কোন সময় সদকা দেয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দিন রাত প্রকাশ্যে ও সংগোপনে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফলন (সুরক্ষিত) রয়েছে, তাদের উপর কোনো রকম ভয়ভীতি থাকবে না, তারা চিন্তিতও হবে না’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৪)।
কোনো বিত্তবান ব্যক্তির দেয়া সদকার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে বিশেষ নেয়ামত দান করবেন। সদকা প্রদানকারীর সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহপাকের পথে ব্যয় করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতো, যে বীজটি বপন করার পর তা থেকে সাতটি শীষ বের হলো, আবার এর প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত শস্য দানা; আল্লাহপাক যাকে চান, তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)। সদকার মতো একটি জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্য আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক : ইসলামিক চিন্তাবিদ ও সুফিতাত্ত্বিক গবেষক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ