চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই ধর্মপ্রবণ। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই মন্তব্যটি প্রযোজ্য। হিন্দু সমাজে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আচার-উপাচারে পুরোহিতের ভূমিকা রয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মেও তাই। বর্তমানের নাগরিক সমাজে আবেদন খানিকটা কমে গেলেও সার্বিকভাবে মুসলমান সমাজে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আলেম সমাজের অবদান অবিস্মরণীয়। বর্তমান সমাজে আলেম সমাজ বিভিন্নভাবে ইসলামের জন্য খেদমত করে যাচ্ছেন। কেউ হয়তো কম কেউ হয়তো বেশি। কেউ তাবলীগ করে, কেউ মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকতা করে, কেউ ওয়াজ নসিহাত করে, কেউ ইমামতি করে, কেউ ইসলামী সংগঠন করে,কেউ ইসলামি বই পুস্তক লিখে, কেউ আবার খানকাহ বা দরবার শরিফের মাধ্যমে।
প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমত ইসলামের কাজ করে যাচ্ছেন, অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তাবলীগ জামাত দ্বীন প্রচারের কাজ করছে, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার আলেমগণ শিক্ষার্থীর মধ্যে কুরআন হাদিসের জ্ঞান বিতরণ করছেন, ওয়ায়েযগণ সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের মর্মবাণী পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, ইমাম-খতীবগণ মুসল্লীদের মাঝে ইসলামের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করছেন, ইসলামি সংগঠনগুলো ইসলামি সিয়াসাত নিয়ে কাজ করছেন, ইসলামি লেখকগন ইসলামের পক্ষে এবং অপসংস্কৃতির বিপক্ষে কলমযুদ্ধ করে যাচ্ছেন, পীর- মাশায়েখগণ ভক্তদের ইসলাহে কলবের কাজ করে যাচ্ছেন।
এদের প্রত্যেকের কাজই ইসলামের একএকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, সন্দেহ নেই। উল্লেখিত গোষ্ঠীগুলো ইসলামের এক একটি শাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন,তবে কেউই অন্য শাখাকে অস্বীকার করেন না, করার সুযোগও নাই। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটি নিছক একটি ধর্মীয় আচার -অনুষ্ঠানের নাম নয়। এটি একটি বটগাছের মত, এর বহু শাখাপ্রশাখা রয়েছে। একএকজন একএক ডালে আছেন, এবং স্ব স্ব ডালকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটাইস্বাভাবিক। আপনি অপর জনকে অন্য ডালে বলে সে ইসলামের বাইরে ধারনা করতে পারেন না। যে এরূপ মনে করবে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতারই প্রমাণ হবে। কেউ যদি মনে করে, যে ব্যক্তি একটি শাখার উপর আমল করলো অন্য গুলোর উপর আমল করলো না সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে অথবা সে পূর্ণ মুসলমান হতে পারবে না এ ধারণা সঠিক নয়।
কারণ, ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম-যার বহু দিক রয়েছে, যেমন রাজনীতি, সংস্কৃতি, যুদ্ধনীতি, রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষানীতি, পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি, শাসননীতি, বিচারনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি ইত্যাদি। একই ব্যক্তির পক্ষে সকল সেক্টরে কাজ করাতো দূরের কথা জ্ঞান অর্জন করাও সম্ভব নয়, যা স্বয়ং সাহাবাগনও সকল বিষয়ে সমান জ্ঞানী ছিলেন না, সকল সেক্টরে সমানভাবে কাজকরতে পারেননি। একক সাহাবা একক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। যেমন-কিছু সাহাবা ওহি লেখক ছিলেন, কিছু সাহাবী হাদীস বেত্তা ছিলেন কিছু সাহাবী কারী ছিলেন কিছু সাহাবী যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন, কিছু সাহাবী তাফসীরে পারদর্শী ছিলেন, কিছু সাহাবী ফিকহ শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন আবার কেউ কেউ সকল বিষয়েই পারদর্শী ছিলেন। আবু বাকার রা রাষ্ট্র পরিচালনায় যতটা সময় দিয়েছেন হাদীস বর্ণনায় ততোটা সময় দিতে পারেননি,আবুহুরায়রা রা হাদীস বর্ণনায় যতটা সময় দিতে পরেছেন রাষ্ট্রপরিচালনায় ততোটা সময় দিতে পারেননি, খালিদ বিন ওয়ালিদ রা যতটা যুদ্ধ করেছেন তাতোটা হাদীস বর্ণনা করেননি। তাই বলে তারা একে অপরকে মন্দ ভাবতেন না বরং একে অপরকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন। তাদের শানে আল্লাহ তাআলা রাদিআল্লাহু আনহুম ওরদূ আনহু বলেছেন।
আমাদের এ যুগে একজন আলেম যদি একটি সেক্টরে কাজ করেন তাহলে তাঁর অপরাধটা কী আমার বুঝে আসে না। আমরা কেন একজন আর একজনের বিরোধিতা করছি, কেন একজন অপর জনকে গালমন্দ করছি, কেন কাফের, ফাসেক, মুনাফেক,বাটপার জাহেল, দালাল, গুমরাহ, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি বলছি? ইসলামের জন্য? নাকি ব্যক্তি সার্থের জন্য? আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য? নাকি নাফসের তাবেদারীর জন্য? ইসলামের কল্যানে? নাকি শয়তানের কল্যানে? তাকওয়ার কারণে নাকি তাকাব্বরির কারণে? ইসলামের দরোদে নাকি জ্ঞান গরিমার ফখরে? মুসলমানদের উপকারে? নাকি ইসলামের শত্রুদের কল্যাণে? ইসলামের স্বার্থ বজায় রাখার জন্য নাকি রাজত্ব কায়েম রাখার জন্য,আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। আলেম সমাজের ভূমিকা দেখে বাংলাদেশের মানুষ হতবাক। আগে আলেমরা আম জনতার হেদায়েতের জন্য দোয়া করতেন এখন আমজনতা আলেমদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করে। এটা জাতির জন্য ভালো লক্ষ্মণ নয়।
আলেমরা হচ্ছেন জাতির নেতা,জাতির বিবেক, নেতায় পচন ধরলে ঐ জাতির ধ্বংস অনিবার্য। আজ মানুষ অপসংস্কৃতির আগ্রসনে দিশেহারা হয়ে ইসলাম থেকে যোযন যোযন মাইল দূরে সরে গিয়ে শিরক-বিদাত কুফুর -কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে সেই মুহূর্তে আলেমরা মুস্তাহাব, উত্তম -অনুত্তম আমল তথা হাত নীচে-উপরে বাধা, আ-মীন আস্তে-জোড়ে বলা,মিলাদ-কিয়াম নিয়ে বাহাস করে বেরাচ্ছেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাই আফসোস করে বলেছিলেন-‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা রয়েছি পিছে, বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজি কিতাব কুরান চুষে।
পরিশেষে বলতে চাই, আলিম সমাজের উচিত লোভ, হিংসা, আলস্য, দম্ভ, অবিশ্বাস, মোনাফেকী, অর্থপূজা, ফাঁকিবাজি, চালাকী, স্বার্থপরতা, চাটুকারিতা ক্ষমতাতোষণ ইত্যাদি কুৎসিত ব্যাধিগুলো ত্যাগ করে সত্যিকারের অরাসাতুল আম্বিয়ার দায়িত্ব পালনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসা জাহান্নামের আযাব থেকে নিজেকে এবং মুসলিম সমাজকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক। আ-মীন ছুম্মা আ-মীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।