Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যেসব আমলে ঈমানি মৃত্যু নসিব হয়

মুফতি আবুল কাসেম | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রাণীমাত্রই মৃত্যুবরণ করতে হবে তাকে। যেতে হবে রবের কাছে। পৃথিবীতে এমন কোনো সুস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে মৃত্যুকে অস্বীকার করে। প্রতিটি প্রাণীর নির্ধারিত একটি হায়াত রয়েছে, যখন তার সেই হায়াত ফুরিয়ে যাবে এক মুহূর্তের জন্যও সে এই পৃথিবীতে থাকতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা আম্বিয়া : ৩৫)। অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, কোনো জাতি তার নির্দিষ্ট সময় ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করতে পারে না। (সূরা হিজর : ৫)। ঈমান মুমিনের অমূল্য সম্পদ। ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সুন্দর ও ঈমানি মৃত্যু লাভের জন্য ইসলামে রয়েছে, কার্যকরী কিছু আমল।
ঈমানের ওপর অটল থাকা : যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং এর ওপর অটল থাকে তার জন্য রয়েছ জান্নাতের সুসংবাদ । ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময়) তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করতো, এটা তারই প্রতিফল।’ (সূরা আহকাফ : ১৩-১৪)। কোরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা : যদি কেউ পরিপূর্ণভাবে কোরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে পারে, তবে সে লাভ করতে পারবে ঈমানি জীবন-যাপন। লাভ করতে পারবে ঈমানি মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু‘ রেখে যাচ্ছি, তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না, যতদিন তোমরা সেই দু’টো বস্তু‘কে আকঁড়ে ধরে রাখবে। বস্তু‘ দু’টি হলো, ১.আল্লাহর কিতাব ২. তাঁর রাসূলের সুন্নাত’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৮৬)।
নেককাজে আত্মনিয়োগ : কারো শেষ পরিণাম ভালো হওয়ার লক্ষণ হলো, মৃত্যুর আগেই বেশি বেশি নেককাজ করতে পারা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন, তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কীভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? নবীজি (সা.) বললেন, তিনি সেই বান্দাকে মৃত্যুবরণের আগে সৎ কাজের সুযোগ দান করেন। (তিরমিজি : ২১৪২)। আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ : বান্দা আল্লাহর প্রতি এই সুধারণা রাখবে , যে তিনি অবশ্যই মৃত্যুর সময় আমার মৃত্যু কষ্ট লাঘব করবেন; কারণ আল্লাহর প্রতি যে যেমন ধারণা করবে আল্লাহ তার সঙ্গে তেমন আচরণ করবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার প্রতি তেমনি আচরণ করি, যেমন সে আমার সম্পর্কে ধারণা রাখে।’ (সহিহ বুখারি : ৭৪০৫)। আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (সহিহ মুসলিম : ৭১২১)।
পুণ্যের কাজে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা : পুণ্যের কাজ পছন্দ করা এবং পুণ্যময় কাজের চেষ্টা করা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আর এ প্রচেষ্টা তার মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভালো ও পুণ্যের কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধ ঠাণ্ডা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক (রক্ষা করা) আয়ূ বৃদ্ধি করে। (আল-মুজামুল কাবির : ৮০১৪)। বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ: অধিক পরিমাণে মৃত্যুর কথা স্মরণ করার বড় একটি উপকার হলো,এতে অন্তর থেকে দূর হয় দুনিয়ার আসক্তি এবং জাগ্রত হয় হৃদয়-মাঝে পরকালের ভাবনা । রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিজি : ২৩০৭)।
কবর জিয়ারত : কবর জিয়ারত মৃত্যু ও পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সৃষ্টি করে অন্তরে আখিরাতের ভয়। ফলে সে বেঁচে থাকে পাপ কাজ থেকে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করে মৃত্যু ও পরকালের জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম; এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৫৭১)। একান্তে দোয়া করা : জীবনের শেষ মুহূর্তে যেন ঈমানি মৃত্যু নসিব হয়, সেজন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। বিশেষত কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত দোয়াগুলো মনোযোগ সহকারে পাঠ করবে। এব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহয় বহু দোয়া বিবৃত হয়েছে।
তারমধ্য থেকে এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো- ১. রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বায়দা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব। অর্থ : হে আমাদের প্রভু! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তর সত্য লঙ্ঘনে ধাবিত করো না এবং তোমার কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো। নিশ্চয় তুমিই সবকিছুর দাতা। (সূরা আলে ইমরান : ০৮)। ২. আল্লাহুম্মা আছলিহলি দ্বীনি আল্লাজি হুয়া ইছমাতু আমরি,ওয়া আছলিহলি দুনয়ায়া আল্লাতি ফিহা মাআশিয়া,ওয়াজ আলিল মাওতা রহমাতান লি মিন কুল্লি সুয়িন। অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনের ব্যাপারে আমাকে সংশোধন করে দাও, যা আমার সকল কাজের রক্ষাকবচ। তুমি আমার পার্থিব জীবনকে সংশোধন করে দাও, যেখানে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা এবং প্রতিটি অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমার মৃত্যুকে আমার জন্য রহমতের উৎস বানাও। (আদাবুল মুফরাদ : ৬৭৩)। ৩. আল্লাহুম্মা মুছাররিফাল কুলুবি ছাররিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা। অর্থ: হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের উপর স্থির রাখুন।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৬৪৩)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানি মৃত্যু দান করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ