চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
বন্ধু শব্দ শুনলেই কেমন যেন মনের মধ্যে এক ভালো লাগা কাজ করে। বন্ধু মানে উপকারী, শুভাকাক্সিক্ষ, বিনয়ী নম্র, ইহকাল ও পরকালে এক কল্যাণকামী। মোটকথা বন্ধু মানে একজন ভালো সঙ্গী। কিন্তু প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যুবকদের মাঝে বন্ধুত্বের যে, নিয়মাবলী দেখা যায় তাতে করে বন্ধু যেন বন্ধু নয়, সে যেন কোন আমলের শত্রু ছিল। কেননা, যেই বন্ধুর উপকার করার কথা ছিল সে উপকার না করে পারতপক্ষে উপকারের নামে ক্ষতি করছে।
বন্ধু যেভাবে উপকারের নামে ক্ষতি করে : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বিড়ি-সিগারেট খেতে প্রন্তাব দিয়ে থাকে। শুরু হয় সিগারেট দিয়ে শেষ হয় তার কত পর্যায়ের মাদক দিয়ে তা বলা বাহুল্য। অনেক দিন পরে বন্ধুর সাথে দেখা হইছে তাকে প্রথমেই পান সিগারেট খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। অথচ ইসলাম বিড়ি-সিগারেটসহ যাবতীয় নেশাজাত দ্রব্য নিষেধ করেছে। কেননা এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও একই সাথে কবিার গুনাহ। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে- ‘ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী করীম (স.) বলেন. প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু খামর (মাদক)। আর প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু হারাম। -(বুখারী) অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে- ‘আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী (স.) বলেছেন. উপকার করে খোঁটা দানকারী আর মাতা-পিতার অবাধ্যতাকারী এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
বন্ধুরা যখন কোন আড্ডায় থাকে অধিকাংশ বন্ধুদের আড্ডাতেই যে পরিমান অশ্লীল ও নোংরা ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা শুনলে হয়ত অনেকেই আতকে উঠতে পারেন। বন্ধুরা নিজেদের আড্ডাতে নিজের ক্লাসের কোন মেয়েকে নিয়ে, বা তার অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে যেসব আলোচনা করে থাকেন তা কোন সভ্য সমাজের মানুষ শুনতে পারে না। সার্কেলে থাকা কোন বন্ধু এর প্রতিবাদও করে না। কেউ প্রতিবাদ করলেও তাকে মোল্লা, সূফী, ভদ্র, ইনোসেন্ট ইত্যাদি বলে টিটকিরি বা ভর্ৎসনা করা হয়ে থাকে। অথচ ইসলাম এগুলোকে সম্পূর্ন নিষেধ করেছে।
হাদীস শরীফে বলা হয়েছে- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী করীম (স.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের উপর যেনার (ব্যািভচার) একটি অংশ লিখা হয়েছে। সে তা পাবেই। মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহ্বার যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাক্সক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে’ -(মুসলিম)।
এরকম হাজারও কর্মকান্ডে বন্ধুরা লিপ্ত থাকে যে সমস্ত কর্মকান্ড ইসলামে সম্পূর্ন নিষেধ করেছে। এমনকি কবিরা গুনাহও বটে। তাহলে বুঝা গেলো প্রচলিত বন্ধু নামের সঙ্গীরা সাময়িক আনন্দ উপভোগের প্রসÍাব দিয়ে তা উপভোগ করলো। অপর বন্ধু কাছে সেটা উপকার মনে হলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা কোন উপকারও হলো না এবং এটা বন্ধুত্বের প্রকৃত আচারণও হলো না।
বন্ধু বানাবো কাদেরকে : প্রথমেই বলেছি বন্ধু হবে কল্যাণকামী। যিনি পরকালীন জীবনের কল্যাণকামনা করবে ও পার্থিব জীবনে এক আল্লাহর দাসত্ব নিজে মান্য করবে ও অন্যকে আহ্বান করবে। কুরআনে বলা হয়েছে- ‘হায়! আমার দুর্ভাগ্য, হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম। তার প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আসা উপদেশ আমি মানিনি। মানুষের জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাস ঘাতক প্রমাণিত হয়েছে।’ সূরা (ফুরক্কান-২৮ ও ২৯)। অনেকেই মনে করে থাকেন বন্ধুত্বের মাঝে একটু আধটু দুুষ্টুমি, বিড়ি-সিগারেট খাওয়া, অশ্লীল আড্ডা নাইট ক্লাবে যাওয়া এটা কোন ব্যাপারই না। এই বয়সে না করলে আর কখন করবো? অথচ যুবক ভাইয়েরা আজ এতটাই অজ্ঞতায় নিমজ্জিত যে, নিজেদের সময় সম্পর্কে জ্ঞান নেই। প্রত্যেকটি কথা, বাক্য, প্রত্যেকটি মুহুর্তের হিসাব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দিতে হবে। সেদিন এসব বন্ধুরা আফসোসের কারন হবে। এমনকি জাহান্নামের যাওয়ার কারনও হতে পারে একজন বন্ধু। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- ‘পড়ো, (তোমার) নিজের আমলনামা, আজ নিজের হিসেব করার জন্য তুমি নিজেই যথে’। (বনী ইসরাইল : ১৪)।
শেষ কথা : স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা কিংবা ইউনিভার্সিটি যে লেভেলের বন্ধুই হোক না কেন বিন্দু পরিমান অশ্লীলতা কে প্রশ্রয় না দিতে পারলেই ভালো। যেখানে নিজের অকল্যান ও যেখানে গেলে নিজেকে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে সে সমস্ত জায়গা ও সে সমস্ত লোকজন/বন্ধুবান্ধব এড়িয়ে চলাটাই উচিৎ। যদি ক্ষনিকের এ বন্ধুত্ব নষ্টও হয়ে যায় তারপরও তাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। কেননা কেয়ামত দিবসে এসব বন্ধুগণ আফসোসের কারন হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথে থেকে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।