Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১৯৭৮ : গোঁফ কামিয়ে শিরোপা জেতান কেম্পেস

আর মাত্র ১১ দিন...

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শেষের বাঁশি বাজছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। এর মাঝেই বিশ্বকাপের আসল উত্তাপ নিয়ে দোরগোড়ায় হাজির ফুটবল। আসছে ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা বিশ্বকাপের। সেই রোমাঞ্চে ডুব দেবার আগে দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য প্রতিদিন থাকছে বিশ্বকাপের জাদুকরী কোনো মুহূর্ত।
স্পোর্টস ডেস্ক
মারিও কেম্পেস বিখ্যাত হয়ে আছেন ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের জন্য। তবে আরও একটা ব্যাপারে বিখ্যাত এই আর্জেনটাইন। তা হচ্ছে একই বিশ্বকাপে এই মিডফিল্ডারের ‘ক্লিন সেভেন’ ভাগ্যের জন্য। একটু অবাক হওয়ার মতই ঘটনা। দাড়ি কামানো কিভাবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হতে পারে? কিন্তু আর্জেনটাইন তৎকালীন ম্যানেজার সিজার মেনোত্তির ধারণা কেম্পেস সেভ করার পরই ভাগ্য খুলেছে গোটা আলবিসেলেস্তদেরা।
আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের স্বাগতিক ছিল। স্বাভাবিকভাবেই শিরোপার জয়ের প্রত্যাশা ছিল তাদের উপর। সে আসরে গ্রæপ পর্বের ৩ ম্যাচে গোল পাননি কেম্পেস। তবে তার গোল ক্ষরার ইতিহাস আরও লম্বা। আগের আসরের ৬ ম্যাচে একবারের জন্যও জালের সন্ধান মেলেনি তার। অবশেষে ৭৮ সালে ঘরের মাঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে, সেই সময়ের শক্তিশালী দল পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২ গোল করে বসেন এই মিডফিল্ডার। আসরে বাকি ৩ ম্যাচে আরও ৪ গোল করেন তিনি। আর্জেনটিনাও জেতে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা।
পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে, কেম্পেস ১১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট গোলবিহীন ছিলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। স¤প্রতি ফিফার সাথে একটি আলাপচারিতায় কেম্পেস বলেন, ‘অবশেষে বিশ্বকাপে গোল পাওয়াটা মুিক্ত ছিল, সত্যিই বিশাল মুক্তি। আমি আমার ক্যারিয়ারে হেডে বেশি গোল করতে পারিনি। কিন্তু পোলিশদের বিপক্ষে হেডেই আমি আমার প্রথম বিশ্বকাপ গোলের দেখা পাই। আমি পোলিশ রক্ষক, টমাসজেউস্কিকে পরাস্ত করতে পেরেছিলাম।’
ঠিক চার বছর আগে জার্মানিতে একটি প্রীতি ম্যাচে একই গোলরক্ষকের বিপক্ষে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন কেম্পেস। সেই ব্যাপারটা টেনে এনে এই মিডফিল্ডার জানান, ‘সে চার বছর আগে জার্মানিতে একটি প্রীতি ম্যাচে আমাদের বিপক্ষে খেলেছিল এবং খেলার এক মিনিটের সময়, সম্পূর্ণরুপে আনমার্কড থাকা আমি একটি সুযোগ মিস করেছিলাম। আপনি জানেন না কখন আপনার সামনে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আসবে। আমি সুযোগটি কাজে লাগিয়েছিলাম। এটা ছিল আমার প্রথম বিশ্বকাপ গোল। একই সাথে একটা বিধ্বসী গোল।’
হঠাৎ করেই কেম্পেসের ভাগ্যের এমন পরিবর্তনের পেছনের গল্পটাও খুবই রোমাঞ্চকর। পিছনের গল্পের রূপকার আসলে আর্জেনটাইন কোচ সিজার মেনোত্তি। অবশ্য এই গল্পের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। অস্বাভাবিক একটি পরামর্শের সাথে গুরুত্বপূর্ণ এক মনস্তাত্তি¡ক ভ‚মিকা পালন করেছিলেন মেনোত্তি। কেম্পেসের মুখ থেকেই শুনা যাক সেই গল্প, ‘আমরা সেই আসরে প্রশিক্ষণ শিবিরেই থাকতাম বেশিরভাগ সময়। হয়তো খেলায় বেশী মনোযোগ দিতেই আমি সেবার নিয়মিত দাড়ি কামাচ্ছিলাম না। ফলে দেখা গেল, প্রায় তিন সপ্তাহ পরে আমার দাড়ি এবং গোঁফ বেশ বড় হয়ে গেল। আমি প্রাকটিস করেই ক্যাম্পে চলে যেতাম। আমাদের প্রথম দুটি ম্যাচে আমি সেই মুখ ভরা দাড়ি ও গোঁফ নিয়ে খেললাম। আমাদের তৃতীয় খেলার আগে আমি দাড়ি কামিয়েছিলাম, তবে গোঁফটা ছিল। যখন আমরা সেই ম্যাচের পর ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছিলাম রোজারিওতে, আমাদের তখন পরবর্তী ম্যাচের চিন্তায় মাথায় ঘুরছিল। তখন কোচ আমাকে বললেন, “মারিও, তুমি গোঁফটা ফেলে দাও, দেখো তোমার ভাগ্য বদলায় কিনা?”
এই স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে কেম্পেস আরও টেনে আনলেন তার ক্লাব ক্যারিয়ারের কথা। সেই সময়টায় স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়াতে খেলতেন এই মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপের আগে তার সার্বিক পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতে স্পেনে গিয়েছিলেন মেনোত্তি। কেম্পেস এই ব্যাপারে যোগ করেন, ‘ভ্যালেন্সিয়ায় আমি কেমন খেলছি তা দেখার জন্য বিশ্বকাপের আগে কোচ আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তখন আমি ক্লিন-শেভ করা ছিলাম। সে ঘটনা টেনেই মেনোত্তি বলেন “তুমি যখন ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে খেলতে তখন দাড়ি বা গোঁফ ছিল না।” তিনি আমাকে আরও বললেন, “আমরা যখন রোজারিওতে পৌঁছব, তখন তুমি ক্লিন শেভ করে নিও। দেখো তোমার গোল ভাগ্য খুলে কিনা।”
কেম্পেস এখনও অবাক হন সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ‘আমি জানি না এটা ভাগ্য নাকি কাকতালীয়, কিন্তু আমি তার পরামর্শ নিয়েছিলাম এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার গোল করতে পেরেছিলাম। এটি আমার জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। এরপর যতবারই সে আমাকে দেখেছে ততবারই বলেছে, “আজকে তোমার শেভ করতে হবে মারিও, তাই না?” এটাই ছিল গোল এবং গোঁফের বিখ্যাত গল্প।’
কেম্পেস সেই বিশ্বকাপে পেরুর বিপক্ষে করেন আরও দুই গোল। এরপর ফাইনালে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে আর্জেনটিনা। ফাইনালে ২ গোল করে ও ১ গোল করিয়ে নিজের অবিশ্বাস্য দক্ষতার নজির রাখেন কেম্পেস। যেই মিডফিল্ডার বিশ্বকাপে গোল ক্ষরায় ভুগেছেন ৯ ম্যাচ, তার হাত ধরেই বিশ্বসেরা আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টে সর্বমোট ৬ গোল ও ১ এসিস্ট করে গোল্ডেন বল ও বুট দুটাই নিজের করে নিয়েছিলেন আর্জেনটিনার কেম্পেস। আলিবিসেলেস্তারা এই ফুটবলারকে তাদের প্রথম ‘বাঁ পায়ের জাদুকর’ নামে অভিহিত করে এখনও।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেম্পেস
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ