Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সত্যিই চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে গ্রæপ-২ এ নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ডাচদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে চোকার্স খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল অ্যাডিলেডে বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ১৩ রানে প্রোটিয়াদের হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই হারে দক্ষিণ আফ্রিকা আরেকটি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়লো।
টস জিতে প্রোটিয়ারা প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় নেদারল্যান্ডসকে। ব্যাটিংয়ে নেমে ডাচরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে তুলে ১৫৮ রান। জবাবে জয়ের জন্য ১৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৪৫ রান তুলে নির্ধারিত ওভার শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে চমকে দেওয়া জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নেদারল্যান্ডস।
এই হারে পাঁচ খেলায় ৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয়স্থানে থেকে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করলো প্রোটিয়ারা। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট পেয়ে গ্রæপ সেরা হয়ে ভারত, আর ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রæপের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে উঠলো পাকিস্তান। পাঁচ ম্যাচে সমান ৪ পয়েন্ট করে পেলেও রানরেটে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে চতুর্থস্থানে নেদারল্যান্ড এবং ৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় সবার শেষে জায়গা পেয়েছে জিম্বাবুয়ে।
জিতলেই সেমিফাইনালে, আর হারলে ছিটকে পড়তে হবে বিশ্বকাপ থেকে। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে কাল সুপার টুয়েলভে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বোলিংয়ে নেমে ডাচ ব্যাটারদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। ব্যাট হাতে নেদারল্যান্ডসকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার স্টেফান মাইবার্গ ও ম্যাক্স ও’দাউদ। ৫১ বল খেলে দলীয় সংগ্রহে ৫৮ রান যোগ করেন তারা। ৮.৩ ওভারে দলীয় ৫৮ রানে নেদারল্যান্ডসের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন দক্ষিণ আফ্রিকার অকেশনাল স্পিনার আইডেন মার্করাম। ৩০ বলে ৭ চারের মারে ৩৭ রান করে আউট হন মাইবার্গ। দ্বিতীয় উইকেটে দ্রæত ২৫ বল খেলে ৩৯ রান করেন টম কুপার এবং ও’দাউদ। ১২.৪ ওভারে দলীয় ৯৭ রানে আউট হন ও’দাউদ। তাকে ফেরান কেশব মহারাজ। ফেরার আগে ৩১ বলে ১টি করে চার ও ছয়ের মারে ২৯ রান করে ও’দাউদ। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করে ১৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৫ রান তুলে আউট হন টম কুপার। ইনিংসের ১৫তম ওভারে দলীয় ১১২ রানে মহারাজের শিকার হন কুপার। ১৭.১ ওভারে নেদারল্যান্ডসের সংগ্রহ যখন ১২৩ তখনই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাস ডি লিডে। মাত্র ১ রান করে নরকিয়ার বলে বোল্ড হন তিনি। শেষ পর্যন্ত কলিন অ্যাকারম্যানই দলকে টেনে নিয়ে যান। তিনি অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক স্কট এডওয়াডর্সকে সঙ্গে নিয়ে মারমুখি ব্যাটিংয়ে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ বলে অপরাজিত ৪১ রান করলে লড়াই করার পুঁিজ পায় নেদারল্যান্ডস। এডওয়াডর্স ৭ বল খেলে ২ চারের মারে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ চার ওভারে ২৭ রান খরচায় ২ উইকেট পান।
শেষ চারের টিকিট পেতে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তৃতীয় ওভারে দলীয় ২১ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩ বলে ১টি করে চার ও ছয়ের মারে ১৩ রান করে আউট হন ডি কক। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে বিদায় নেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ২০ বল খেলে ২ চারের মারে ২০ রান করেন তিনি। দুই ওপেনারকে হারিয়ে ৬ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩৯। তবে দুই ওপেনারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মিডলঅর্ডার ব্যাটারদেরও বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি নেদারল্যান্ডসের বোলাররা। রিলি রৌসু ১৯ বলে ২৫, মার্করাম ১৩ বলে ১৭, ডেভিড মিলার ১৭ বলে ১৭ এবং ওয়েন পারনেল শূন্য রানে ফেরত যান। ফলে ১৬তম ওভারে ১১৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে প্রোটিয়ারা।
জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে ৪৪ রান দরকার পড়ে তাদের। স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে তখন উইকেটে ছিলেন হেনরিচ ক্লাসেন। ১৮তম ওভারে দলীয় ১২০ রানে ব্যক্তিগত ২১ রান করে বিদায় নেন তিনি। তার ১৮ বলের ইনিংসে ১টি ছয়ের মার ছিল। ১৯.৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ যখন ১৪১ তখনই ফেরেন কেশব মহারাজা। তিনি ১২ বলে এক ছক্কায় করেন ১৩ রান। শেষ পর্যন্ত রাবাদা ৯ ও নরকিয়া ৪ রানে অপরাজিত থাকলেও লক্ষ্য স্পর্শ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। বল হাতে নেদারল্যান্ডসের ব্র্যান্ডন গেøাভার দুই ওভারে ৯ রান খরচায় পান ৩টি উইকেট। ফ্রেড ক্লাসেন ২০ ও বাস ডি লিডে ২৫ রানে পান ২টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা হন কলিন অ্যাকারম্যান।
এই হারে দক্ষিণ আফ্রিকা আবারো প্রমাণ করলো যে, তারা সত্যিই চোকার্স! চোকার্স একটি ইংরেজি শব্দ হলেও ভিন্ন আঙ্গিকে যার অর্থ দাড়ায় ‘যারা নির্দিষ্ট সময়ে টেনশনের জন্য শেষ মুহূর্তে কাজের সুন্দর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তারাই চোকার্স’। সেই ১৯৯২ সাল থেকে এই চোকার্স খেতাব নিয়েই ক্রিকেটে পথ চলছে প্রোটিয়ারা। ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোনো আসরের সেমিফাইনালের গন্ডিই পেরুতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চোকার্স
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ