পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র' অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কসহ ৪ জনকে কুমিল্লার লাকসাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, যেকোনো সময় বড় ধরনের নাশকতা করার জন্য সংগঠিত হচ্ছিল নতুন জঙ্গি সংগঠনটি। গত ৮ মাসে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র কেনায় তারা ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছে। সংগঠনটির আমির আনিসুর রহমান তমাল ও মূল সমন্বয়কারি শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তার করতে পারলে কারা তাদের অর্থায়ন করছে তা জানা যাবে।
বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে কুমিল্লার লাকসাম এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য মো. আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল (২৪), মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর (২২), মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু (২৩), হেলাল আহমেদ জাকারিয়াকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রশিক্ষণ সিলেবাস, লিফলেট, ডায়েরি।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র” অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক সমন্বয়কসহ ০৪ জনকে কুমিল্লার লাকসাম এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, এর আগে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামে নামকরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। তারা কোমলমতি তরুণদেরকে টার্গেট করত। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ভিডিও এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করা হত।
র্যাব আরও জানায়, আগের গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পারি যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরূদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫৫ এর বেশি। যার মধ্যে ৫৫ জনের নাম-ঠিকানা আমরা এরমধ্যে উপস্থাপন করেছি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিখোঁজ তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যের তত্বাবধানে সেইফ হাউজে রাখা হত। আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।
খন্দকার মঈন বলেন, এর আগে গ্রেপ্তারদের তথ্য অনুযায়ী র্যাব আরও জানতে পারে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ তরুণদেরকে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পার্বত্য এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হত। দুর্গম পার্বত্য পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হত। বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণে তাদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরি, চোরাগুপ্তা হামলা, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিভিন্ন কৌশলসহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও তাত্তিক জ্ঞান বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হত বলে জানা যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে মোট প্রশিক্ষণার্থী ৫০ এর বেশি রয়েছে বলে জানা যায়। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটির আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়াও, উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে যারা দাওয়াতী, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতী শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে। তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়। তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন থেকে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করত।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ২-৪ বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রানিত হয়ে সংগঠনের জেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্বিক, শারীরিক সশস্ত্র প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। গ্রেপ্তার বাচ্চু সংগঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, সোহেল ও হানজালা সমগ্র দেশে হিযরতকৃত সদস্যদের সার্বিক সমন্বয়ক এবং জাকারিয়া সামরিক শাখার ৩য় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। দেশব্যাপী ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর কার্যক্রমে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয়দের পরামর্শে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
খন্দকার মঈন বলেন, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্য ও সহানুভুতিশীল/সমমনা/সমব্যথীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করত এবং সাংগঠনিক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ পাঠাত। এছাড়াও, তারা পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করত এবং বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের অর্থ প্রেরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা করত।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটির আমীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। সংগঠনের আমীর মাহমুদ কুমিল্লা সদর দক্ষিনের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরী করত। প্রায় দুই বছর আগে সে চাকরী ছেড়ে দিয়ে প্রায় নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে ১ বছর আগে কুমিল্লার প্রতাপপুরে অবস্থিত তার সেমি পাকা বাড়িসহ জমি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে বান্দবানের নাইক্ষংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি ক্রয় করে এবং পরিবার নিয়ে সেখানে স্থানান্তরিত হয়। সে সেখানে চাষাবাদ, পোল্ট্রি ফার্ম ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করত বলে জানা যায়।
এছাড়াও, তারা সংগঠনটির মহিলা শাখার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে। আমরা বেশকিছু মহিলা সদস্যের বিষয়ে জানতে পেরেছি যারা সংগঠনের চাঁদা প্রদানসহ দাওয়াতী কার্যক্রমে জড়িত ছিল।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মুনতাছির আহম্মেদ চট্টগ্রামে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকিং বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল। সে সংগঠনটির অর্থ ও গনমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন এর অন্যতম সহযোগী এবং অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। জঙ্গি সদস্য শিশির এবং রাকিব এর মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রানিত হয়ে দুই বছর আগে সংগঠনে যোগ দেয়। পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য সে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রেরণ করত।
সে আরও জানায়, গত ৮-৯ মাসে বিভিন্ন ধরণের ভারী অস্ত্র কেনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে। এছাড়াও, সে ফুড কার্ডের ব্যবসার লভ্যাংশ সংগঠনের পাহাড়ী এলাকায় প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করত। সাংগঠনিক প্রয়োজনে সে বিভিন্ন সময়ে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে গমন করেছে বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হানজালা ৩-৪ বছর আগে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আমীর মাহমুদের মাধ্যমে সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়। উল্লেখ যে, কুমিল্লা হতে নিরুদ্দেশ তরুণরা উগ্রবাদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর তাদের মাধ্যমেই পরিবার থেকে নিরুদ্দেশ হতে আগ্রহী হয়। সংগঠনটির আমীর মাহমুদের একান্ত সহযোগী হওয়ায় তারা সারাদেশে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তাত্তি¡ক ও সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণের কার্যক্রম সমন্বয় করত। পটুয়াখালী, ভোলাসহ সমতলের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ শেষে সদস্যরা তাদের সহযোগিতা ও তত্ত¡াবধানে কুমিল্লাতে তাদের সেইফ হাউজে অবস্থান করত। পরবর্তীতে, সুবিধাজনক সময়ে তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হিজরতকৃত সদস্যদের পর্যটক বা অন্যান্য ছদ্মবেশে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রেরণ করত। গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে ১৭ জন এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ১২ জন তরুণকে পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানে পাঠিয়েছে বলে জানা যায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হেলাল আহমেদ ওরফে জাকারিয়া সিলেটের একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল সম্পন্ন করে। সে অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল। সে প্রায় ৩-৪ বছর আগে মানিকের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়। সে সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি মানিক এর একান্ত সহযোগী ও সংগঠনটির সামরিক শাখার ৩য় সর্বোচ্চ ব্যক্তি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।