পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম আলোচনায় এসেছিল।বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম দীর্ঘ সময় বিরতির পর আবার তাদের সংগঠনকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে আগামী ১৭ই ডিসেম্বর ঢাকায় ধর্মীয় নেতা বা ওলামা মাশায়েখদের সম্মেলন ডেকেছে। হেফাজতে ইসলাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে। -বিবিসি বাংলা
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, হেফাজতের অতীত অনেক কর্মকাণ্ডের পেছনে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় সংগঠনটি প্রভাব হারিয়ে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা থেকে এর সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে। কিন্তু বছর খানেক আগে সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ব নেয়ার পর সংগঠনটির তৎপরতা চলে যায় অন্য একটি মাদ্রাসায়। এখন আবার হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত রোববার। এই বৈঠকে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সারাদেশে সব পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেছেন, তারা এখন তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার দিকে নজর দিচ্ছেন। সেজন্য তাদের সংগঠনের মহাসচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার আহমদ শফী ছিলেন হেফাজতে ইসলামের প্রধান নেতা।"সংগঠনে ঘাটতি বা দুর্বলতাগুলো যেন না থাকে, সেজন্য পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে" বলেন মি: আজহারী। হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে গঠিত হয়েছিল আহমদ শফীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে। ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে হেফাজত একটি প্রভাবশালী সংগঠন হিসাবে আলোচনায় এসেছিল। সে সময় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে হেফাজত নেতা আহমদ শফীর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। ২০২০ সালে তার মৃত্যুর পর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। তবে তখন জুনায়েদ বাবুনগরী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর থেকে এক বছরের বেশি সময়ে সংগঠনটির তেমন কোন তৎপরতা ছিল না। হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারীদের অন্যতম একজন শরীফ মোহাম্মদ বলেছেন, হেফাজতের প্রতিষ্ঠার মূল দু'জন নেতার একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল আলেম বা ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে। সংগঠনটি অকার্যকর হওয়ার পেছনে তাদের অনুপুস্থিতিও একটা বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন। শরীফ মোহাম্মদ বলেন, "যে প্রভাব এবং আবেগ নিয়ে এই সংগঠনটি (হেফাজতে ইসলাম) তৈরি হয়েছিল, এই পর্যায়ে এসে আমরা বলতে পারি যে, সেই গতি এবং আবেগের জায়গায় এটি নেই।"
শুরুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘাতে গেলেও পরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের।এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনীতি, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসন-এগুলো একটা কারণ হতে পারে। "এছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক জটিলতাও আরেকটি কারণ" বলেন শরীফ মোহাম্মদ। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফী হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক বা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর আগের দিন ২০২০ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর তাকে ঐ মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
হাটহাজারী মাদ্রাসার সেই সঙ্কটের পটভূমিতে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকেও মাদ্রাসাটির শিক্ষকের পদ ছাড়তে হয়েছিল। এর প্রভাবে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ বা নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। আহমদ শফীর সমর্থকরা সংগঠনটিতে থাকতে পারেননি। সংগঠনটির বিপর্যয়ের পেছনে এই বিষয়গুলোকেও কারণ হিসাবে দেখেন বিশ্লেষকরা। পর্যবেক্ষক এবং বিশ্লেষক শরীফ মোহাম্মদ বলেন, "সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতার সংগঠনে থাকা না থাকা-এটিও কারণ হতে পারে।"
অন্যদিকে, হেফাজত যখন আহমদ শফীর নেতৃত্বে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে আলোচনায় এসেছিল, এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আল্লামা শফীর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার অধ্যায় শেষ হলে জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে একটা ভিন্ন অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তখন হেফাজতের ওপরে সরকারের দমননীতি চালানোর অভিযোগ ওঠে। সে সময় মামুনুল হকসহ তাদের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়। হেফাজতে ইসলাম মূলত কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক একটি সংগঠন। সেই প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি সরকারের সাথে আবার সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছিল। জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যায় বলে এর নেতাদের অনেকে বলেছেন। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, হেফাজতের অতীত কিছু কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের মতো ছিল-এমন অভিযোগ ওঠায় সংগঠনটি বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে। শরীফ মোহাম্মদ বলেছেন, অতীতে রাজনীতি বা নানা ধরনের কর্মকাণ্ড অথবা সংঘাত, এগুলো প্রশাসন বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে একটা অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে ইসলামের জায়গা থেকে একটা প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করার জন্য ভারসাম্যের যে অবস্থানে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, সেটা হয়নি" বলেন শরীফ মোহাম্মদ। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সাথে কখনও দূরত্ব হতে পারে। কিন্তু আবার তাতে ভারসাম্য আনা-এই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে হয়নি।তবে হেফাজতের নেতারা এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন।
সংগঠনটির নেতা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেছেন, তারা অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হিসাবেই প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন। এখনও নির্বাচন বা রাজনীতি তাদের কোন বিষয় নয়। তিনি উল্লেখ করেন, তারা শুধু একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসাবেই কর্মকাণ্ড চালাবেন। "এটা একটা ধর্মীয় সংগঠন। যাতে করে মানুষের ঈমান সম্পর্কে শেখা বা হেফাজত করা এবং এনিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য হেফাজতে ইসলাম কাজ করছে এবং তা অব্যাহত রাখবে" বলেন হেফাজত নেতা কিফাতুল্লাহ আজহারী। তিনি আরও বলেন, "ইসলামের বিপক্ষে যদি কেউ অবস্থান নেয় বা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, এসবের বিরুদ্ধে ঈমানের তাগিদেই এই সংগঠনটা মজবুত থাকা দরকার।" হেফাজতে ইসলাম এখন তাদের সংগঠন পুনর্গঠনের কর্মসূচির পাশাপাশি ডিসেম্বরে ঢাকায় ধর্মীয় নেতা বা ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের কর্মসূচি নিয়েছে। কিন্তু এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে হেফাজত নেতারা এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।