পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ-এর সভাপতি ও ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী (৭৩) গতকাল সোমবার ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ৩ মেয়েসহ বহু আত্মীয়স্বজন এবং গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুম নুরুল ইসলাম জেহাদীর ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মাদরাসায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাওলানা জিহাদী ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরুং গ্রামের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রশীদ। গতকাল বাদ এশা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী তার নামাজে জানাজার ইমামতি করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কবরের পাশে মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীর লাশ দাফন করার কথা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী গতকাল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা, হাটহাজারী মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল আওয়াল নারায়ণগঞ্জ, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান শায়খ সাজিদুর রহমান, আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, জামিয়া মুহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালাম, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বসুন্ধরা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রহমানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফতে ইসলামীর মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, নেজাম ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাইউম, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, হাব ওলামা ফোরামের মহাসচিব মুফতি জুনায়েদ গুলজার, ইনসাফ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর ছেলে মুফতি জাবের কাসেমী, ডেমরা নান্নু মুন্সি মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আরিফ বিল্লাহ, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সদস্য সচিব খালেদ মাহমুদ প্রমুখ।
মরহুমের ইন্তেকালের পর ল্যাব এইড হাসপাতালে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বসে তাৎক্ষণিকভাবে হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনোনীত করেছেন মাওলানা সাজেদুর রহমানকে।
মরহুম মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী দীর্ঘদিন যাবত আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ-এর সভাপতি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে মরহুম জেহাদী জীবনের সর্বশেষ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ঐ সম্মেলনে তিনি কারাবন্দি নির্দোষ সকল আলেম-ওলামাকে দ্রæত মুক্তি এবং আলেমদের হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানান। ঐ দিনই সন্ধ্যার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তার ছেলে মাওলানা রাশেদ বিন নূর বলেছিলেন যে, তার বাবা অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা ও বিশ্রামহিনতার কারণে হঠাৎ স্ট্রোক করেন। এরপর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক : এদিকে, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীর ইন্তেকালে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। নেতৃবৃন্দের শোক বার্তায় বলেন, মাওলানা জেহাদী (রহ.) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। খুব বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে আলেম-ওলামাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে গেছেন। তার ইন্তেকালে জাতি একজন কর্মবীরকে হারাল। তার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়। নেতৃবৃন্দ মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, ফটিকছড়ির কৃতিসন্তান, শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম জিহাদীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আমীরে হেফাজত, ফটিকছড়ির জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরের মহাপরিচালক আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
গতকাল সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও শীর্ষ একজন প্রবীণ আলেমেদ্বীন ছিলেন। ইসলামি আন্দোলনের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন বীর সিপাহসালার। বাংলাদেশের জন্য তিনি ছিলেন রত্মতুল্য। তার ইন্তেকালে দেশের ইলমি আকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে পড়েছে। ইলমের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন। দেশবাসী হারিয়েছে একজন নিবেদিতপ্রাণ মুখলিছ আলেমে দ্বীনকে। তার ইন্তেকালে আমি গভীরভাবে শোকাহত।
হেফাজত আমীর আরো বলেন, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী অনেক বছর অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে জামিয়া মাখজানুল উলূম ঢাকার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদীসের গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। দীর্ঘদিন হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফের পাঠদান করেছেন। হাজার হাজার মুহাদ্দীসীনরা তার ছাত্র।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদীর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (হাফি.)।
গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি ষড়যন্ত্রের প্রতিরোধ এবং ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপ‚র্ণ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবে তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তার সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং প্রচার-প্রসারেও গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রেখেছেন। ৯০-এর দশক থেকেই বিরামহীনভাবে এযাবৎ তিনি কাদিয়ানীবিরোধী আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। তার এই বিদায়ে অন্য সকলের সাথে আমিও গভীরভাবে বেদনাকাতর ও শোকাহত।
মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী’র ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি। প্রতিমন্ত্রী মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মরহুমের ইন্তেকালে আরো যেসব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, তারা হচ্ছেনÑ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকীব অ্যাডভোকেট ও মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল করীম, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা জাফরুল্লাহ খান ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান, জাতীয় তাফসীর পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, মহাসচিব শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা শহিদুল ইসলাম আনসারী, মাওলানা নুরুল হক বট্টগ্রামী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল হক কাওছারী ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কা, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান ও নির্বাহী সভাপতি মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা সারওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (একাংশ) এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আজম খান ও ঢাকা মহানগরী আমির মাওলানা হোসাইন আকন্দ ও বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন বকুল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।