পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির সমাবেশ যেন জনসমুদ্র। গতকাল তীব্র রৌদ্রের মধ্যেও মাঠে দাঁড়ানোর ঠাঁই ছিল না। মাঠে জায়গা না পেয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়কের অলিগলিতে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। হাঁটা চলার মতো ছিল না কোনো জায়গা। বিভিন্ন জেলা থেকে খন্ডখন্ড অনেক মিছিল মাঠ ও রাস্তাঘাটে নেতাকর্মীদের চাপে সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। সমাবেশস্থলের চারদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
রংপুরের সমাবেশের মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি ফাঁকা আসন রাখা হয়। এর আগে, ময়ময়সিংহ ও খুলনা বিএনপির সমাবেশে এমনটি রাখা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা বলছেন, অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে সরকার। তিনি মুক্ত থাকলে এখানে উপস্থিত থাকতেন। তাই আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। এর ধারাবাহিকতায় রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির চতুর্থ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিএনপি নেতাদের একটাই দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তার আগে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করবে। সবার অংশগ্রহণ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হবেÑ সেই সরকার হবে জাতীয় সরকার। সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের একটাই দাবি সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তার আগেই আমাদের এমপিরা পদত্যাগ করবে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তাদের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দ এবং মনের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচন করবেন। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।
ফখরুল বলেন, সবার অংশগ্রহণ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হবেÑ সেই সরকার হবে জাতীয় সরকার। সেই সরকার বাংলাদেশে যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, দেশে অর্থনৈতিক যে দুরবস্থা দেখা দিয়েছে, রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে সেসব আবার মেরামতের জন্য জাতীয় সরকার কাজ করবে। তিনি জনগণকে সরকার পতনের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের দলের যে কয়েকজন এমপি রয়েছে তাদের দল যখনই নির্দেশ দেবে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবে। এ জন্য তারা সবসময় প্রস্তুত। ২০১৪ আর ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন বাংলাদেশে আর করতে দেবো না, সেটা হবেও না। সোজা কথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অধীনে কোনো নির্বাচন হবে নাÑ বাংলাদেশে এটা আমাদের সাফ কথা।
লক্ষাধিক মানুষের এই বিশাল সমাবেশ সফল করার জন্য রংপুর বিভাগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে এই আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি সরকারের যত অর্জন সব শেষ করে দিয়েছে। চারিদিকে শুধু চুরি আর চুরি। বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, ব্রিজ, কালভার্ট, আশ্রয়ণ প্রকল্প সব জায়গায় শুধু লুটপাট আর চুরি। এরা যেন মুনতাসীর ফ্যান্টাসী চরিত্রের মতই সর্বভুক সরকারে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা দিয়েছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ ৬ শত নেতাকর্মী সাধারণ মানুষকে গুম করেছে। আলেম-ওলামাদেরও ছাড়েনি। এরপরও এদের ক্ষমতায় রাখা যায় বলে প্রশ্ন করেন তিনি। ব্যর্থ সরকারপ্রধান যখন নিজেই আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা বলেন, তখন মানুষ কোথায় যাবে?
পরিষ্কার বলতে চাই, দুর্ভিক্ষ হলে তার দায় নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই। তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ তার বাবার আমলেও হয়েছিল। সেদিন লজ্জা নিবারনের জন্য চিলমারীর বাসন্তীকে জাল পরতে হয়েছিল। মৃত মানুষের জন্য কাফনের কাপড়ও পাওয়া যায়নি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পতন অবশম্ভাবী বলে উল্লেখ করে বলেন, এখন আবার নতুন একটি ধুয়া তুলছে। জঙ্গিবাদ আবার বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা হচ্ছে আরেকটি চক্রান্ত। বলেছে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত, তাদের রেহাই দেয়া হবে না। ওই অস্ত্র আপনাদের ভোঁতা হয়ে গেছে। ওই অস্ত্র আর চলবে না। আপনাদের আসল চেহারা সবাই জেনে গেছে। পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা তাদের রিপোর্টে লিখেছে এই সরকার যা বলে মিথ্যে বলে।
ফখরুল আরো বলেন, রংপুরের মানুষ বলেন, রংপুর অঞ্চলেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ফকির ও সন্যাসী বিদ্রোহ হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ অঞ্চলেই বেড়ে উঠেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম পুরোধা মশিউর রহমান যাদু মিঞা রংপুরের এবং পাশের বগুড়া জেলায় শহীদ জিয়ার জন্মভূমি। তারেক রহমানের রাজনৈতিকভাবে বেড়ে ওঠা বগুড়া থেকেই। শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে আমরা মুক্তি যুদ্ধ করেছি হাসিনার অগণতান্ত্রিক শাসনের জন্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ করেছি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না, তাহলে দুইদিন আগে গাড়ি বন্ধ করল কেন? বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই জেগে উঠবে এবং এই ভয়াবহ একনায়ক হাসিনা সরকারের পতন ঘটাবে। এই সমাবেশের একটাই কারণ। একজন মাত্র ব্যক্তি, একটামাত্র দল গত ১৫ বছর ধরে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন করছে। বিএনপির ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের সমস্ত দেশটাকে তারা কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলছে।
ফখরুল বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কেন? হাসিনার এই বাংলাদেশ দেখার জন্য? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারব সেজন্য। এখন কি আমরা ভোট দিতে পারি? আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। এর আগে ১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। আমরা সেই নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেব না।
আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন কি ঘরে ঘরে চাকরি আছে? চাকরি দিয়েছে? আওয়ামী লীগের লোক হলে চাকরি দেয়। ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তাই এ ঘুষখোর, এই ভোট চোরদের আর মানুষ দেখতে চায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার মানবাধিকার সম্পর্কে যে সব রিপোর্ট দেয় তা মিথ্যে। এখানে মানবাধিকার নেই। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে, কথা বলতে দেয় না। নির্বাচনের পূর্বে সভা করতে দেয় না, নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয় না। কথায় কথায় হকিস্টিক, রামদা, আর বন্দুক নিয়ে আসে।
ফখরুল বলেন, আর এভাবে চলতে দেবে না এদেশের মানুষ। দেশের মানুষ এখন রুখে দেবে। ওই বন্দুক, ওই পিস্তল, ওই লাঠি, ওই হকিস্টিক সব ভেঙে চুরমার করে দেবে।
এই জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু। রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজুন্নবী ডন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাতুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
জনসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা রংপুরে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু রংপুরবাসী সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১ দিনের সমাবেশকে ৩ দিনের কর্মসূচিতে রূপান্তর করে দিয়েছে। তারা আন্দোলন কর্মসূচিকে বিপ্লবে পরিণত করেছে। তাই সরকারের আর নিস্তার নেই, পতন তাদের অনিবার্য।
তিনি বলেন, আগে সরকারকে কাবু করতে বিরোধী দল হরতাল করত। এখন বেসামাল হয়ে সরকারই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হরতাল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। জনগণ নয়, এরা এখন পেটোয়া লীগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের টাকা লুটপাট করে রিজার্ভ খালি করে প্রধানমন্ত্রী এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেগম সেলিনা রহমান বলেন, জনগণ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার হয় জেগে ওঠে, তখন তাদের আর দমিয়ে রাখা যায় না। রংপুরের মানুষ আজ সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদী জনতাকে সাথে নিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জের শহীদ শাওনসহ সকল শহীদের রক্তের বদলা নেয়া হবে।
গণসমাবেশের সমন্বয়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হাসান বলেন, রংপুরে ৭৯ সালের মতো ফের বিএনপির উত্থান হবে। নতুন করে ধানের শীষের চারা গজাবে ফের।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল খালেক, গ্রামবিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাদল, ড্যাব মহাসচিব ডাক্তার আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি আব্দুল মোমেন মুন্না, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, ওলামা দলের সভাপতি নেছারুল হক, মৎসজীবীদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহাতাব, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।