গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়লে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিবিদ না হয়েও গণতন্ত্রের স্বার্থে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন। দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জন্য, সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য অতুলনীয় অগ্রপথিক ছিলেন তিনি। বাম-ডান সব পন্থীদের জন্য গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলেন অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণার উৎস। সত্যকে প্রকাশ করাই ছিল তার একমাত্র সাধনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে'র আয়োজনে গিয়াস কামাল চৌধুরীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে “স্বৈরশাসনে সাংবাদিকতা” শীর্ষক স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গিয়াস কামাল চৌধুরী জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে ও ডিইউজে’র সভাপতি ছিলেন।
বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও শওকত মাহমুদ, দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি মোরসালীন নোমানী, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সহ-সভাপতি বাছির জামাল, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আবু বকর, আবদুস সেলিম, একেএম মহসিন ও জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য রফিক লিটন ও আবদুল হালিম প্রমুখ। এসময় গিয়াস কামাল চৌধুরীর রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, লোডশেডিং কেন মিউজিয়াম থেকে জনগনের ঘরে ফিরে এসেছে? এর জবাব এই অবৈধ সরকারকে জনগনের কাছে দিতে হবে। কিন্তু তারা এর জবাব দিতে পারবে না। তাই এ সরকারকে হঠানো ছাড়া বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বাঁচানো যাবে না। তিনি বলেন, খুলনার গনসমাবেশের আগে যানবাহনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সে বাধা অতিক্রম করে জনগন জেগে উঠেছে। জনগনকে আর থামিয়ে রাখতে পারবে না।
মন্ত্রী হবার সময় যে শপথ নিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী, সে শপথ অনুযায়ী সঠিক তথ্য তিনি দিচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। সাগর-রুণী হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না, তদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গনবিরোধী সরকার, এদেশে গণতন্ত্র নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয় এটা প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আমেরিকার সরকার কর্তৃক গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি। ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয় জনগণের আন্দোলন।
গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগঠক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ভয়েস অব আমেরিকা'য় সাংবাদিকতায় মাধ্যমে গিয়াস কামাল চৌধুরী জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন।
রুহুল আমীন গাজী বলেন, সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের চারণ সাংবাদিক। গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের এই ঘোর দুর্দিনে গিয়াস কামাল চৌধুরীর মত সাংবাদিকের প্রয়োজন ছিল। সাহসের সঙ্গে সত্য ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করে তিনি যে ঈর্ষনীয় সুখ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশে বিরল। ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয় করে তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল অপরিমেয়। তিনি বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে স্বৈরাচার আইয়ুব খান, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সময় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে এসব শাসনামলের সমালোচনা করতেন এবং জনগণের কথা তুলে ধরতেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। গণমাধ্যম কর্মীদের কন্ঠরোধের আইন করছে সরকার দাবি করে বক্তারা বলেন, এসব আইনের বিরোধীতা করার মাধ্যমেই গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পেতে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই সকল অধিকার আদায় সম্ভব।
শওকত মাহমুদ বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মানবিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ভয়েস অব আমেরিকায় সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে দেখিয়ে গেছেন একনায়কের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কিভাবে কাজ করতে হয়। গণতন্ত্রের জন্যে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এখন স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারলেই গিয়াস কামাল চৌধুরীর প্রতি সম্মান জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজ কেউ সত্য কথা বলতে পারছে না। বললেই তাকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের কোনো মানুষ আজ নিরাপদে নেই। সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার পতনের লক্ষন শুরু হয়ে গেছে। এই স্বৈরশাসক ভয়ের মধ্যে আছে। একটা ধাক্কা দিতে পারলেই এই স্বৈরশাসকের বিদায় হবে। এই জালিম শাসকের বিদায় হলেই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ফিরে আসবে এবং গণতন্ত্র রক্ষা পাবে।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলেন একজন সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি সব সময় মানুষের কথা ভাবতেন। মানুষের কথা ভাবতেন। তার কর্মকান্ডকে স্মরন করে আমরা চলতে পারলে আমরাও সফল হবো। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আল্লাহ যেনো তাকে বেহেসত নসিব করেন সেই প্রার্থনা করছি।
সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশে কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকতো তার কণ্ঠ শোনার জন্য। অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী। তিনি মানুষের উপকার করার জন্য, অগণিত মানুষকে চাকরি দেয়া এবং সাহায্য করার জন্য নিরন্তর ছুটে বেড়াতেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি এটা করতেন। রাজনীতির প্রতি তার কোন মোহ বা উচ্চাভিলাস ছিল না। বহুমুখী প্রতিভা তাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। অভাবী ও দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম বিরোধী সরকার একের পর এক কালো আইন করে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা ছাড়া বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বাক-স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এসময় তিনি সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
নুরুল আমিন রোকন বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। তিনি ছিলেন আপোসহীন নেতা। অন্যের উপকারে তিনি সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তার কাছে এসে কেউ উপকার না পেয়ে ফিরে যেতো না। তিনি আমাদের গর্ব। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। অন্যের বিপদে-আপদে তিনি সব সময় ঝাপিয়ে পড়তেন। রাজনীতির প্রতি তার কোনো মোহ ছিল না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয় করে তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তার মধ্যে কোনো লোভ-লালসা ছিল না। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী। তার কর্ম তাকে সারাজীবন আমাদের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে থেকে দেখিয়ে গেছেন কিভাবে সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করতে হয়। আমি তার রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।