মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিনিরা সাধারণত জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। কিন্তু আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে বিভিন্ন জরিপে ভোটারদের ক্ষুব্ধ মনোভাবের চিত্র উঠে আসছে। সম্ভবত এ কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বার্নি স্যান্ডার্সের মতো প্রার্থীরা বাছাইপর্বে সাফল্য পাচ্ছেন। কিন্তু মার্কিন ভোটারদের এই হতাশার কারণ কী? বিবিসি অনলাইনের সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্প্রতি সিএনএন/ওআরসির এক জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যা কিছু হচ্ছে, এতে ৬৯ শতাংশ মার্কিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বা কিছুটা রুষ্ট। এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফল বলছে, অন্তরালে থাকা বিত্ত ও প্রতাপশালীদের পক্ষেই কেবল মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় ৬৯ শতাংশ আমেরিকান রুষ্ট।
এদিকে, দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মনে করেন, রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না। মার্কিন জনগণ ট্রাম্পের মত কাউকে কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবে না বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে আলপটকা মন্তব্য করে বিতর্কিত বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়নে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। ইতিমধ্যে নিউহ্যাম্পশায়ারের প্রাথমিক মনোনয়নে তিনি জিতেছেনও তবে ক্যালিফোর্নিয়ায় আসিয়ান ইকোনমিক সামিটে বক্তব্য রাখা ওবামা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি এটা বিশ্বাস করি ট্রাম্প কখনো প্রেসিডেন্ট হবেন না। এবং এই বিশ্বাসের কারণ হচ্ছে আমার মার্কিন জনগণের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে।
ট্রাম্প রিয়ালিটি শো ও টক শোতে বেশ জনপ্রিয়। দেশ চালানো তার থেকে ভিন্ন উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ভোটাররা কখনো তাকে বেছে নেবে না। কারণ তারা জানে প্রেসিডেন্ট হওয়া অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ। এটা কোনো টক শো বা রিয়ালিটি শো না, কোনো প্রচারণা বা বিপণন কৌশল না এটা অনেক কঠিন। আজে বাজে কিছু করে সংবাদ শিরোনামে পরিণত হওয়া আর প্রেসিডেন্ট হওয়া এক নয়। বরাবরের মতোই ওবামার বক্তব্যের পরে চুপ থাকেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, যে প্রেসিডেন্ট দেশের এত ক্ষতি করেছে তার কাছ থেকে সমালোচনা পাওয়া প্রশংসার মতো শোনায়।
এর আগে, গত মাসে এনবিসি/এসকয়ারের এক জরিপে বলা হয়েছে, অনেক মানুষ শুধু রুষ্টই নয়, তারা আগের বছরের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটারদের এই বিরূপ মনোভাব বুঝে সেই অনুসারে কথা বলছেন। এ কাজে যে কারও চেয়ে ট্রাম্প এগিয়ে। মার্কিনিদের এই ক্ষুব্ধ হওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচটি কারণকে চিহ্নিত করা যায়। অর্থনীতি নিয়ে মার্কিনিদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। এ বিষয়টিকে তাদের ক্ষোভ ও হতাশার সবচেয়ে মৌলিক উৎস বলা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর ভাষণেও মার্কিনিদের এই উদ্বেগ প্রশমনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জনগণের মধ্যে সংকটবোধ রয়েই গেছে।
অভিবাসীদের ব্যাপকভিত্তিক আগমনে আমেরিকার জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। ১৯৬৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক কোটি অভিবাসী এসেছে। তাদের সবাই বৈধভাবে আসেনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, অভিবাসী ইস্যু দেশটির রাজনীতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। কেউ কেউ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছে। আর কেউ করছে সমালোচনা। অভিবাসীরা প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষোভের শিকার হচ্ছে। তারা বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের ওপর আস্থাহীন এমন জনগণের সংখ্যা বাড়ছে। পিউ রিসার্চের গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, অভিবাসনের মতো নানা সমস্যার ভিড়ে খোদ সরকারকেই একটা সমস্যা হিসেবে দেখে অনেকে। জনগণ দেখছে, রাজনীতিবিদেরা কলহে জড়াচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। ওয়াশিংটনের ওপর জনগণ যে ক্ষুব্ধ, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যেও তা উঠে আসছে। আমেরিকাকে পরাশক্তি হিসেবে দেখা হয়। তবে বিশ্ব পরিম-লে দেশটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে সন্দেহ ঢুকে গেছে। অনেকেই মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই দিন আর নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্মান হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশের বাইরের রণাঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র নাস্তানাবুদ হচ্ছে। ওদিকে লাল পতাকা ওড়াচ্ছে চীন। ক্ষমতার প্রতাপ দেখাচ্ছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হচ্ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা আদর্শগতভাবে অধিক বিভক্ত। বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে অভিবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই দল একমত হতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার পাশাপাশি জনগণের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।