পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের স্বল্পকালীন ক্ষমতায় থাকা প্রিমিয়ার তিনি : আগামী শুক্রবারের মধ্যে নতুন নেতা
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগ করেছেন। গত কিছুদিন ধরেই তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে তার প্রশাসন ও কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে নজিরবিহীন তোলপাড় চলছিল। তার সরকারের দু’জন মন্ত্রী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, এক ডজনেরও বেশি এমপি প্রকাশ্যেই তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তার পদত্যাগ দাবি করছিলেন। এ প্রেক্ষাপটেই গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের কথা জানান লিজ ট্রাস।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যে ম্যানডেটের ভিত্তিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই ম্যানডেট তিনি পূরণ করতে অপারগ। তাই তিনি রাজা তৃতীয় চার্লসকে তার পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কনসারভেটিভ পার্টি তার উত্তরসূরীকে বেছে না নেয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাখা বক্তব্যে বলেন-
‘আমি একটি বড় অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ে অফিসে এসেছি। পরিবার এবং ব্যবসায়ীরা তাদের বিল কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ইউক্রেনে পুতিনের অবৈধ যুদ্ধ আমাদের সমগ্র মহাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশ অনেক দিন ধরে পিছিয়ে আছে’।
‘আমি কনজারভেটিভ পার্টির মাধ্যমে এটি পরিবর্তনের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমরা শক্তি বিল এবং জাতীয় বীমা কাটাতে বিতরণ করেছি এবং আমরা একটি স্বল্প কর উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেছি যা ব্রেক্সিটের স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করবে’।
‘যদিও আমি স্বীকার করছি, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমি যে ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টির দ্বারা নির্বাচিত হয়েছি তা দিতে পারছি না। তাই আমি মহামান্য রাজার সাথে কথা বলেছি যাতে তাকে জানানো হয় যে, আমি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে পদত্যাগ করছি’।
‘আজ সকালে আমি ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডির সাথে দেখা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পন্ন হবে’।
‘এটি নিশ্চিত যে, আমরা আমাদের আর্থিক পরিকল্পনাগুলো সরবরাহ করার এবং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার পথে আছি। উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকব। ধন্যবাদ।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে লিজ ট্রাস হচ্ছেন সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টিতে তার উত্তরসূরী নির্বাচনের জন্য আবার ভোটাভুটি হবে। ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের একটি বিশেষ কমিটির প্রধান জানিয়েছেন আগামী শুক্রবারেই নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ফল জানা যাবে। তবে বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টার্মার অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচন দাবি করেছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও নতুন নির্বাচন দাবি করেছে।
কেন পদত্যাগ করতে হলো লিজ ট্রাসকে : প্রধানত দুটি কারণে লিজ ট্রাসকে ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হল। প্রথমতঃ লিজ ট্রাসের ঘোষিত অর্থনৈতিক কর্মসূচির ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয়তঃ তার নিজ দলের এমপির মধ্যে আস্থা ও সমর্থন হারানো।
প্রধানমন্ত্রী হবার সময়ই লিজ ট্রাস বলেছিলেন, তিনি নিম্ন কর হার এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্রিটেন গড়ে তুলবেন। তার প্রথম অর্থমন্ত্রী কোয়াজি কোয়ার্টেংকে যে মিনি বাজেট দেন তাতে ব্যাপক কর ছাঁটাইয়ের কথা ছিল, কিন্তু এর জন্য অর্থসংস্থান করতে সরকারকে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ নিতে হতো। এ বাজেট ঘোষিত হবার পরপরই তা অর্থখাতে নজিরবিহীন সঙ্কট সৃষ্টি করে এবং মি. কোয়ার্টেং পদত্যাগ করেন। নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এসে সেই পরিকল্পনার অধিকাংশই বাতিল করে নতুন পরিকল্পনা হাজির করেন।
এর পর থেকেই এমপিদের আস্থা হারাতে থাকেন লিজ ট্রাস। অন্তত ১৩ জন এমপি প্রকাশ্যে তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে পদত্যাগ দাবি করেন। লিজ ট্রাস প্রশাসন, দল এবং পার্লামেন্ট - সর্বত্রই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। গত বুধবার তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানও পদত্যাগ করেন। পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি নিয়ে সরকারি দলের এমপিদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থেকে প্রায় ধস্তাধস্তির উপক্রম হয়। বিশ্লেষকরা বলছিলেন, এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে মিজ ট্রাস ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভোট দেওয়ার পর রাজনৈতিক সঙ্ককটে জর্জরিত ব্রিটেন এর আগে তিন জন প্রধানমন্ত্রীকে হারিয়েছে। আর ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রæতি দিয়ে গত মাসে কনজারভেটিভ পার্র্টির নেতৃত্বে আসেন লিজ ট্রাস। ক্ষমতায় এসেই অজনপ্রিয় বাজেট প্রণয়ন এবং কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। এসব পদক্ষেপ তার দলকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। যার ফলশ্রæতিতে তাকে এখন রাজনৈতিকভাবে টিকে না থাকতে পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি।
নতুন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে হবেন, কে হবেন?
লিজ ট্রাস তার ভাষণে বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। সাধারণত কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে এ নির্বাচনের প্রক্রিয়া কয়েক মাস ধরে চলে। প্রথম এমপিরা কয়েকজন প্রার্থীকে নির্বাচন করেন এবং তাদের মধ্যে যিনি পার্টি সদস্যদের ভোট সবচেয়ে বেশি পান তিনিই প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। ‘১৯২২ কমিটি’ নামে এমপিদের বিশেষ কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি বলেছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যেই এ নির্বাচনের ফল জানা যাবে এবং তাতে পার্টি সদস্যরাও জড়িত থাকবেন।
বরিস জনসনও প্রার্থী হতে পারেন?
ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে এখন নানা জল্পনা চলছে। লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হবার সময় যারা তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন - তার মধ্যে অন্তত দুজন ঋষি সুনাক এবং পেনি মরড্যান্টের নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। এছাড়া আছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের নাম। অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, তিনি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন না।
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও আবার প্রধানমন্ত্রী হবার প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন। এক জনমত জরিপে বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় এক নম্বরে আছেন ঋষি সুনাক।
পাউন্ডের দর বেড়েছে : প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগ করার ঘোষণায় পাউন্ডের দর বেড়েছে। তিনি তার বক্তৃতা দেওয়ার আগে ব্রিটিশ পাউন্ড ১.১৩ ডলারে উন্নীত হয়, কারণ বাজার আশা করেছিল ট্রাস চলে যাবে। কিন্তু তারপর থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এটি তার বিবৃতির প্রায় ৩০ মিনিট পরে ১.১২৬ ডলারে ০.৪ শতাংশ আপ ট্রেড করেছে।
বাইডেন ‘অংশীদারিত্ব’-এর জন্য ট্রাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য শক্তিশালী মিত্র এবং স্থায়ী বন্ধু এবং সেই বাস্তবতা কখনই বদলাবে না। আমি প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশীদারিত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ‘আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখব, কারণ আমরা আমাদের দেশগুলোর মুখোমুখি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসাথে কাজ করি’।
যুক্তরাজ্যের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থিতিশীলতা প্রয়োজন : ম্যাখোঁ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, যুক্তরাজ্যের পক্ষে ‘যত দ্রæত সম্ভব স্থিতিশীলতা’ খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সর্বোপরি, আমরা স্থিতিশীলতা চাই’। ‘ব্যক্তিগত স্তরে, একজন সহকর্মীকে চলে যাওয়া দেখে আমি সবসময় দুঃখ বোধ করি’।
আগামী সাধারণ নির্বাচন কবে?
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন - যেখানে সংসদের ৬৫০ জন সদস্য হাউস অফ কমন্সে নির্বাচিত হন - অবশ্যই পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠিত হতে হবে। আগাম না হলে পরবর্তী নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হবে না। এটি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে (১৭ ডিসেম্বর ২০১৯) পাঁচ বছর এবং প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
কে আগাম নির্বাচনের আহŸান জানাতে পারে? : আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করে। তবে, খুব স¤প্রতি পর্যন্ত এটা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল না। ২০১১ সালে একটি আইন পাস করা হয় যা আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রত্যাহার করে এবং পরিবর্তে হাউস অফ কমন্সে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে। এসব নিয়মের অধীনে প্রাথমিক নির্বাচন শুধুমাত্র কিছু শর্তের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে - যেমন যদি সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য একটিতে সম্মত হন।
তবে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর রক্ষণশীলরা একটি নতুন আইন প্রবর্তন করে - যাকে বলা হয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং আমন্ত্রণ আইন ২০২২। এটি তাদের পছন্দের সময়ে নির্বাচন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহ্যগত ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।