পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের পর যখন বিচারের পথ আটকানোর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে খুনিদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এখন আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ, কতকিছুই হয়। কই? তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, যারা এই ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল, চক্রান্তের সঙ্গে ছিল তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া, প্রমোশন দেয়া; এমনকি, যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা, এই অন্যায়-অবিচার তো আমি এসে নিজের চোখে দেখেছি। তাহলে আজকে আমরা মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত কথা গালভরা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে? গতকাল বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২২’-এর উদ্বোধনী এবং ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আস্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই আয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় হত্যা করা হয় তার ১১ বছরের সন্তান শেখ রাসেলকেও। তার জন্মদিন ১৮ অক্টোবর পালিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহন, তার আমলের জাতীয় নির্বাচন ও নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্রের কিছু শেখার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র, ভোট ও মানবাধিকারের কথা শোনা দুর্ভাগ্যজনক। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহন এবং তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন, একজন সেনাপ্রধান হিসেবে সে দায়িত্ব নিল। কখন? যখন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হলো এবং অবৈধভাবে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেয়া হলো। তাদের (বিএনপি) মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়! অথচ এদের হাতেই তো বারবার, আমার ওপরেও কতবার আঘাত এসেছে! জানি না বেঁচে গেছি, আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন বোধহয় এদিনটি দেখার জন্য যে নামগুলো মুছে ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে; আমার বাবার নাম, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, যেখানে তার নামটাও নেয়া যেতো না এমন একটা পরিবেশ ছিল। সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা, বিচারহীনতার যে কালচার তৈরি হয়েছিল, আজকে জাতি সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট নিরাপরাধ নারী ও শিশু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়, কেউ খুনীদের বিচার করতে পারবে না। অর্থাৎ আমি আমার বাবা, মা, ভাই এবং যে স্বজনদের হারিয়েছি তাদের জন্য বিচার চাইতে পারবোনা, মামলা করতে পারবোনা। সে সময় তিনি এবং ছোট বোন শেখ রেহানার বিদেশে থাকার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তাদেরকে সে দেশে ফিরতে না দেয়ায় তারা হয়ে পড়েন রিফিউজি। ৬টি বছর সেই রিফিউজি হয়েই বিদেশে কাটাতে বাধ্য করা হয়। এরপর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে তার অবর্তমানে সভাপতি নির্বাচিত করলে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একরকম জোর করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ফিরে এসে আমি যখন মামলা করতে যাই বা তার আগেও চেষ্টা করেছি কিন্তু সেই মামলা করা যায়নি কারণ আইনে বাধা। আমার প্রশ্ন- আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়, কারো অস্বাভাবিক মৃত্যুতে বিচার চাওয়া হয়। তাহলে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, তারা কি অপরাধ করেছিলাম?
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বাবা-মা হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে, ভাই হারিয়েছে, বোন হারিয়েছে তাদের অপরাধটা কোথায় ছিল?
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার প্রশ্ন, আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। একটা কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? ১৫ আগস্ট আমরা যারা অপনজন হারিয়েছি...আমাদের অপরাধটা কোথায় ছিল? আমার অধিকার, আমার মানবাধিকার, আমার বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়া, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়া, এই অধিকার তো আমার ছিল। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম, রেহানা ছিল, আমরা তো বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেটা সমাধান করতে হলো। বাংলাদেশে কি বিবেকবান কোনো মানুষ ছিল না?
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ করতে যেসব বিচারক ‘বিব্রতবোধ’ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ‘খুব বড় বড় দার্শনিক’ হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কিছু বলি না। কারণ, আমার একটাই লক্ষ্য। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, নিরাপদ জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।
বাংলাদেশে এমন অন্যায় আর ঘটুক সেটা চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ, কতকিছুই হয়। কই? তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, যারা এই ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল, চক্রান্তের সঙ্গে ছিল এবং হত্যার পর যারা এই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে, শুধু পুরস্কৃত না, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া, প্রমোশন দেয়া, এমনকি, যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা, এই অন্যায়-অবিচার তো আমি এসে নিজের চোখে দেখেছি। তাহলে আজকে আমরা মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত কথা গালভরা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে যেমন জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া প্রত্যেকেই খুনিদের মদদ দিয়েছে। পুরস্কৃত করেছে। এমনকি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সে খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের রাজনৈতিক দল করেছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন। খালেদা জিয়া খুনি রশিদ এবং হুদাকে জনগণের ভোট চুরি করে, আজকে তারা ভোটের কথা বলে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে তাদেরকে নির্বাচিত করে সংসদে বসিয়েছে। তাদের মুখেই ভোটের কথা শুনতে হয়!
তিনি আরও বলেন, জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল। তাদের মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। অথচ এদের হাতে বারবার..আমার উপরে তো কত আঘাত এসেছে। যে নামগুলো ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা হয়েছিল, বিচারহীনতার যে কালচার শুরু হয়েছিল, আজকে জাতি তা থেকে মুক্ত হয়েছে।
এ সময় নিজের শরণার্থী ও যুদ্ধবন্দি জীবনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ, ধ্বংস ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার বদলে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার কথা বলেন। শেখ হসিনা বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, কত শিশু আজকে এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু আজকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সেখানকার শিশুরাও রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে।
১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গেছেন দেশের বাইরে থাকায়। তিনি জানান, সে সময় তারা রাসেলকেও বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাবা-মা দেননি। সেই আক্ষেপের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তখন সে অসুস্থ ছিল। তাছাড়া কেন যেন মা, আব্বা রাজি ছিলেন না। সবাই চলে গেলে বাসা খালি হয়ে যাবে। এখন মনে হয়, তাকে যদি সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম, তাহলে রাসেলকে এভাবে ঘাতকের হাতে জীবনটা দিতে হতো না। আজকে তার বয়স হতো ৫৯ বছর। হয়তো সে জীবনে অনেক বড় হতে পারতো। তার জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকে বলত সেনা অফিসার হবে। বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা দেখতাম, কিন্তু তাকে বাঁচতে দেয়া হয়নি। ছোটভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা ছোট্ট শিশু, একটা ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। ঝরে গেল চরম নির্মমতার মধ্য দিয়ে, ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে, আমাদের ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হাজারো অফিসার-সৈনিক হত্যা করা হয়েছে, স্বজনরা তাদের লাশও পায়নি, গুম করে ফেলা হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, কারাভোগ করেছে, মৃত্যুবরণ করেছে, কাজেই আর আমরা এই স্বজন হারানোর বেদনা, কান্না শুনতে চাইনা।
তিনি বলেন, আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। আমরা পাঁচ হাজার কম্পিউটার ল্যাব এবং ৩০০ টি স্কুল অফ ফিউচার উদ্বোধন করলাম। এর আগে আরো আট হাজার করেছিলাম, প্রায় ১৩ হাজার ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।