Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মন্ত্রীর ক্ষমতার দাপটে দিশেহারা জেলা আ.লীগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সরকারের একজন দাপুটে মন্ত্রী। যিনি নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে দলের পদ নিয়ে দিচ্ছেন, নিজের অনুসারিদের দলের মনোনয়নের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। সব কিছুই নিজের মত করে সাঁজিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এক সময় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলেও তা এখন দা-কুমড়া সম্পর্কে রুপান্তরিত হয়েছে।

মন্ত্রীর কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন না জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানেও সংসদ সদস্যকে দাওয়াত দেয়া হয় না। বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই আছে। চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির সাথে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এ সমস্যা যেন মিটছে না, বরং বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত এপ্রিলে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে দুর্নীতি, পদ্মা-মেঘনার অবৈধ বালু উত্তোলন ও খাসজমি নিয়ে অনিয়মের ঘটনাগুলোতে শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নাম আসে। এরপর থেকে চাঁদপুর এবং শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী আসনের নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসতে শুরু করে।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য, দিপু মনি জেলার প্রবীন নেতাদের মূল্যায়ন করছেন না এবং বিতর্কিত নেতাদের নিয়ে বলয় তৈরী করেছেন। নিজের অনুসারীদের বিভিন্ন পদে বসানোর জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বাগিয়ে দিচ্ছেন অনুসারিদের। কিন্তু সেই কর্মী নেতা হবার যোগ্য কী না বা বিতর্কিত কাজে যুক্ত কী না তা ভেবে দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী। সম্প্রতি তিনি একজন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামীর পক্ষ নিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইউসুফ গাজীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের অপকর্মের কথা পুরো জাতি নয়, এখন পুরো বিশ্ব জানে। দিপু মনির প্রশ্রয়ে ছেচড়া চোর থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সেলিম।

সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বন্দ্বের বিষয়টি ফের আলোচনায় এসেছে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। ৪২০ ধারায় চেক জালিয়াতির মামলায় সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী ইউসুফ গাজীকে সমর্থন দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে সহযোগিতা করেছেন দিপু মনি। ইউসুফ গাজী তার অনুসারি। সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটোয়ারীর সাথে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে বলে অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের। তবে এক সময় ওচমান গণি পাটোয়ারী ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে দিপু মনির প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নাসির উদ্দিন আহমেদ শিক্ষামন্ত্রীর বিরাগভাজন হয়ে মেয়র পদ হারিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতাদের অভিমত। পৌর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান জুয়েল। নাসির উদ্দিনের অনুসারীরা জানান, দীপু মনি পৌর নির্বাচনের আগে থেকেই জিল্লুর রহমানের পক্ষ নেন এবং তিনি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন নেতা জানান, সিনিয়র নেতাদের সাথে দিপু মনির দ্বন্দ্বের কারণ দিপু মনির বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জাওয়াদুর রহিম টিপু। ওই অঞ্চলের সব কিছুই একক নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান টিপু। তার কথার বাইরে কেউ গেলে তাকে টিপু রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করে দেন। নির্বাচনের সময় ওই নেতা যেন মনোনয়ন না পান সেই ব্যবস্থা করেন। যদি মনোনয়ন পেয়েও যান তাহলে ওই প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য পদক্ষেপ নেন। টিপুর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সেলিম চেয়ারম্যান এতো অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দ্বন্দ্বের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, এখানে দ্বন্দ্বের কিছু না। আমরা মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যাই না। কারণ তিনি যাদের নিয়ে চলেন, যারা তার পাশে বসা থাকে, তাদের সঙ্গে বসতে আমাদের সম্মানে বাধে। মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে থাকা একজন চোরের জন্য চাঁদপুর আজ শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তার অনুসারিরা বিতর্কিত কাজ করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। জেলা আওয়ামী লীগ সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম খানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। অথচ তারা এখনো সেলিম খানকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন।

যুবলীগের সাবেক একজন নেতা জানান, মন্ত্রীর দাপটে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাই শুধু নন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সকল নেতারাই কোনঠাসা। প্রবীন নেতাদের পাশে না পেয়ে ছাত্রলীগ আর যুবলীগ নিয়েই চলেন মন্ত্রী। ছাত্রলীগের গত কমিটির নেতাদের যুবলীগের কমিটিতে দিয়েছেন। আর বর্তমান কমিটির ছাত্রলীগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী চলেন। জেলা আওয়ামী লীগ এবং এই আসনের বেশিরভাগ প্রবীন নেতাদের সাথেই দিপু মনির মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বিরাজ করছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্বের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গণমাধ্যমে বলেন, আমার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র নির্বাচনের আগে থেকে আমার কর্মসূচিতে আসেন না। কী কারণে আসেন না, সেটা তারাই বলতে পারবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ

১২ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ