পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের গুম নিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানো ইস্যুতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তিনি আসলে ভারতকে খুশি করতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন নাকি অন্য কোনো কারণে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক হচ্ছে। সুলতানা কামালের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সুলতানা কামাল মানবাধিকার কর্মী নয়, তিনি মূলত আওয়ামী অধিকার রক্ষার কর্মী’। বিএনপির এই নেতার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২২ বিশিষ্টজন। ফলে সুলতানা কামালের একটি বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক জমে উঠেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা বলছেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল যখন বাংলাদেশের গুম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সুলতানা কামাল অবস্থান নিয়ে বিএনপিকে টেনে এনেছেন। তিনি মানবাধিকার কর্মীর লেবাসে দিল্লিকে খুশি করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছেন।
বাংলাদেশে ‘বলপূর্বক গুমের শিকার’ শীর্ষক জাতিসংঘের প্রতিবেদনের ‘অযৌক্তিক’ তালিকা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেখা সাক্ষাৎকারে সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘মানবাধিকারের বিষয়ে বিএনপির মিথ্যার ইতিহাস রয়েছে’। এই দলটির বিরুদ্ধে ‘আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার’ আহŸান জানিয়েছেন তিনি।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিএনপি কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের সাজানো ঘটনাগুলো ইতিমধ্যেই তাদের ভাবমূর্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
বাংলাদেশে ‘বলপূর্বক গুমের শিকার’ শীর্ষক জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তালিকাটি অযৌক্তিকতায় ভরপূর এবং এই ধরনের ‘নিম্নমানের’ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও অধিকার কর্মীরা। ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী সেদেশে ফিরে যাওয়ার পরও গুমের তালিকায় তাদের নাম থাকাটা প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে অনেক কিছু পরিস্কার করে দেয়। গত রোববার ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে এই ধরনের ‘অস্বচ্ছ’ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। যেসব এনজিও বিএনপি কর্মীদের ঘনিষ্ঠ অথবা তাদের দ্বারা পরিচালিত, স্থানীয় সেই রকম কিছু এনজিওর উপর জাতিসংঘের মতো বিশ্বব্যাপী সংস্থার অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আর নিজেদের অনুগতদের দিয়ে মানবাধিকার বিষয়ে মিথ্যা বা বানোয়াট মামলা সাজানোর নাটক করার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির।
সুলতানা কামালের বক্তব্যের কঠোর সমলোচনা করে গত বুধবার রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যখন বিএনপির কর্মীদের হত্যা করা হয় তখন আপনারা (সুলতানা কামাল) কোথায় ছিলেন? আপনারা কিসের মানবাধিকারকর্মী? আপনারা আসলে আওয়ামী অধিকার কর্মী। এদেশের জনগণের যে অধিকার সেটা আপনাদের মধ্যে নেই। আপনারা সেটার প্রতিবাদ করেন না। আপনি চান আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আরো ক্ষমতায় থাকুক। তারা যে ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের গুন করছে খুন করছে সেটা চলতে থাকুক। তাই নিজ দেশে না অন্য দেশে সাক্ষাৎকার দিয়ে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। সুলতানা কামালের এই বক্তব্যকে ধিক্কার জানাই।’
এদিকে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালকে ‘আওয়ামী অধিকার কর্মী’ অ্যাখ্যায়িত করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ২২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। বিবৃতিতে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে সুলতানা কামালের সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা সর্বজনবিদিত। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক জন হামফ্রি ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ডে ভ‚ষিত হয়েছেন। সুলতানা কামালের বিরুদ্ধে রুহুল কবির রিজভীর এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ মানবিক মর্যাদার পরিপন্থি এবং ব্যক্তির মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। তারা আরো বলেন, সুলতানা কামাল সাধারণ জনগণের অধিকারের পক্ষে আজীবন কাজ করেছেন। তাকে আওয়ামী অধিকার কর্মী বলে অভিযোগ করা অনভিপ্রেত এবং এর মাধ্যমে মানবাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিএনপির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। পাশাপাশি তাকে ছোট করার হীন প্রয়াস বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবিরের মতো বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্যও অশোভনীয়, অগ্রহণযোগ্য ও চরম নিন্দনীয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তার সাক্ষাৎকারে কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য উদঘাটন করায় রিজভী যেভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার মাধ্যমে তিনি এবং তার দলের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তার বক্তব্য প্রকারান্তরে মানবাধিকার আন্দোলনকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা হিসেবে প্রতীয়মান হয় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের প্রতি এমন অন্যায় অগ্রহণযোগ্য এবং রিজভীর অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতি তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন- অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান হুমায়‚ন কবীর, লেখক শামসুল হুদা, অধ্যাপক মিসবাহ কামাল, অধ্যাপক সাদিকা হালিম, সঞ্জীব দ্রং, রবীন্দ্র সরেন, পল্লব চাকমা, সানায়া আনসারী, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, মোতাহার হোসেন আকন্দ, খুশি কবীর, জিনাত আরা হক, বেগম রোকেয়া, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, তাপস কুমার দাস, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মÐল, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।