পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বর হামলা বন্ধ হোক। বন্ধ হোক মানবতার বিরুদ্ধে ইহুদি ইসরাইলি ঘৃণিত অপরাধ। কোনো ধর্মেই মানুষ হত্যার স্বীকৃতি দেয়নি। সকল মানুষেরই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। ইসলামী অনুশাসন চর্চা না করার কারণেই বিশ্বে মুসলমানরা আজ মার খাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর মসজিদগুলোতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লিকে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়।
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারি খতিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ গতকাল জুমার খুৎবা পূর্বে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে স্বাধীনভাবে নিরাপদে বেঁচে থাকার। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে এক মানুষের হাতে অন্য মানুষ খুন হচ্ছেন, একজনের সম্পদ অন্যজন ধ্বংস করছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ। গত এগারো দিনে ৬৪ শিশুসহ প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। যারা অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। সরকারি-বেসরকারি অনেক সম্পদও নষ্ট হয়েছে এ আক্রমণে। ফিলিস্তিনের জনজীবন আজ বিঘ্নিত ও বিপর্যস্ত। ইসরাইলি এ আক্রমণের ঘটনা নতুন বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। মাঝে মাধ্যেই ইসরাইল তার বর্বররূপ নিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে।
এই বর্বরতা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ থাকলেও কেউ এ ধরনের নিপীড়ন চালাতে পারে না। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদে মানুষের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সকল ধর্মেই এ নির্মমতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে, স্রষ্টা ছয়টি জিনিসকে ঘৃণা করেন। অন্যায়ভাবে মানব হত্যা ঘৃণিত ছয়টি বিষয়ের একটি। (প্রবচন, ৬ : ১৬-১৭) অন্যত্র বলা হয়েছে, নর হত্যা করো না। কেউ নর হত্যা করলে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। (মথি, ৫ : ২১)
খতিব বলেন, পবিত্র কোরআনেও অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করাকে গোটা মানব জাতিকে হত্যার সমান অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৩২) ধর্মীয় বিবেচনায়, মানবিক বিবেচনায় ইসরাইলের এ হত্যাযজ্ঞ এই মুহূর্তে বন্ধ হোক এবং অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, শধু ফিলিস্তন নয় বরং পৃথিবীর নানা প্রান্তেই মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এক সময় পৃথিবী থেকে অন্যায়, অত্যাচার দূর করার নেতৃত্ব দিয়েছে মুসলিম জাতি। অথচ তাদেরই আজ অত্যাচারিত হতে হচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধানও অত্যন্ত জরুরি। এর প্রধান কারণ মুসলিম হিসেবে জীবনের সকল স্তরে ইসলামী অনুশাসন চর্চা না করা। অথচ মহান আল্লাহর নির্দেশ এর বিপরীত। মহান আল্লাহ বলেন, কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আল ইমরান, আয়ত নং-৮৫) মহান আল্লাহ মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-১০৩) অথচ মুসলিম জাতি আজ শতধা বিভক্ত, যা মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া, নেতৃত্বের দুর্বলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে পড়া ইত্যাদিও মুসলিম জাতিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুণ। আমাদের সকল দুর্বলতা দূর করার তৌফিক দিন। ফিলিস্তিনসহ গোটা পৃথিবীকে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ও নিরাপদ করে দিন। আমীন!
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ইসলাম আল্লাহ তায়লার মনোনীত ধর্ম। আর যারা ইসলামের অনুসারী তাদেরকে বলা হয় মুসলিম বা মুসলমান। যে সকল মুসলমান আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধি-বিধানকে সামনে রেখে জীবন-যাপন করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেক আমল করবে চাই সে নারী হোক অথবা পুরুষ হোক আমি আল্লাহ অবশ্যই তাকে (দুনিয়াতে) হায়াতে তাইয়্যেবাহ অর্থাৎ উত্তম জীবন ব্যবস্থা দান করব। এবং উত্তম আমলের বিনিময়ে আমি তাদেরকে (আখিরাতে) অবশ্যই পুরস্কৃত করব’। এখন যদি কোনো মুসলমান মুসিবতগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য উচিত হলো আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। রাসুলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন ‘মুমিনের বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত! যখন তার সুখের কিছু হয় আর সে শোকর আদায় করে সেটাও তার জন্য কল্যাণকর। যখন কোনো কষ্টের কিছু হয় আর সে ধৈর্য ধারণ করে সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। সবকিছুর মধ্যেই তার কল্যাণ আর কল্যাণ। অন্য হাদিসের মধ্যে রাসুলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন ‘মুমিনের ওপর যে কোনো মুসিবত আসুক না কেন, এমনকি একটা কাঁটাও যদি তার পায়ে বিধে, এর জন্যও তার পাপ মোচন হবে। সুতরাং মুসিবত বা বিপদ-আপদ কষ্ট-ক্লেশের কারণে মুসলমানদের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। তাদের জন্য তো অকল্যাণ বলতে কিছুই নেই। সবই তাদের জন্য রহমত আর রহমত। সবই তাদের জন্য কল্যাণ আর কল্যাণ। অতএব মুসলিম উম্মাহর উচিত ঈমান এবং নেকআমলের ওপর মেহনত করা। মুসিবতের সময় সবর করা আর নেয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার পরে শুকরিয়া আদায় করা। সাথে সাথে কুফরীশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আল্লাহ তায়ালা সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন!
মাগুরার নিজনান্দুয়ালী বায়তুল নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা ওসমান গণী সাইফি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমরা পবিত্র মাহে রমজান শেষে পবিত্র শাওয়াল মাসে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং এ মাসে বড় একটি নেকীর কাজ রয়েছে। পবিত্র শাওয়াল মাসে ছয়টা নফল রোজা রাখা। আর এই ছয় রোজার ফযিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যারা রমজানের রোজা রাখে, এবং পরে শাওয়াল মাসে ছয়টা রোজা রাখে, তাদের সারা বৎসর রোজা রাখার ছওয়াব হয়। (মুসলিম) এ ছয় রোজা শাওয়াল মাসের মধ্যে যে কোনো সময় রাখা যাবে। তবে উত্তম হলো ভেঙে ভেঙে রাখা। যেহেতু এক বৎসরের রোজা রাখার ছওয়াব অর্জন হয়। আল্লাহর কাছে হয়তো এ রকম হিসাব আছে যে, যেহেতু প্রতিটা নেকী কম পক্ষে ১০ গুণ দেয়া হয়। অতএব রমজানের ৩০টা রোজা, আর শাওয়ালের ৬টা রোজা, এই ৩৬ টাকে ১০ গুন দিলে ৩৬০টা হয়ে যায়। এভাবে রমজানের রোজার সাথে ছয় রোজা রাখলে পুরো এক বছরের রোজা রাখার ছওয়াব হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে ছয় রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।