Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবীজীর ঘামের সুঘ্রাণ

মুহাম্মদ জিয়াউল হক | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

ইসলাম পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। ইসলামি শরিয়তে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজির জীবন চরিত অধ্যয়ন করলে আমরা পদে পদে দেখতে পাই- পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের প্রতি নবীজি কতটা যতœবান ছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা বেশি বেশি পাক-পবিত্র থাকেন তাদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ২২২)। বিশ^নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন- ‘পবিত্রতা ঈমানের অংশ।’ তিনি নিজে পরিপাটি ও সুবিন্যস্ত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। সৌন্দর্যকে পছন্দ করতেন এবং উম্মতকে এ ব্যাপারে তালিম দিয়েছেনÑ তারা যেন শরীর ও পোশাক পরিচ্ছন্ন ও সগন্ধিময় করে রাখে। আবর্জনা ও দুগর্ঘন্ধময় বস্তু থেকে দূরে অবস্থান করে। তাছাড়া কাচা রসুন-পেঁয়াজ ভক্ষণ করে মসজিদে আসতে বারণ করেছেন। নবীজির দেহ-নিঃসৃত ঘাম থেকে গোলাপের সুবাস পাওয়া যেতো। সাহাবায়ে কেরাম নবীজির হাতের ছোঁয়ায় অনুভব করতেন মিশকে আম্বরের সুবাস। নবীজির পদচারণায় বিরাজ করত চামেলির সুঘ্রাণ। আল্লাহ তাআলা স্বীয় ‘হাবিব’কে এমন কুদরতি বৈশিষ্ট্য প্রদান করে ছিলেন। চারটা বস্তু এমন রয়েছে যা সব নবীর সুন্নত। তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে আতর। একবার রাসুল সা. সাহাবাদের মজলিশে বললেন, ‘আমার কাছে তোমাদের দুনিয়ার কেবল তিনটি জিনিস অধিক পছন্দের। সাহাবায়ে কেরাম কোন তিনটা জিনিস তা শুনার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলেন। রাসুল (সা.) বলেনÑ সুগন্ধি, স্ত্রীলোক এবং নামাজের মাধ্যমে আামার আঁখিযুগল শীতল করা।’ (নাসাই : ৩৯৩৯)।
আরবের সিরাত বিষয়ক লেখক সালেহ আহমদ শামি লেখেনÑ ‘রাসুল (সা.) তাঁর শরীরের চমৎকার সুগন্ধির জন্য পরিচিত ছিলেন। এমনকি তিনি কোথাও পথ চললে, বাতাসে রেখে যাওয়া সুগন্ধির কারণে ওই পথ দিয়ে অতিক্রম করা ব্যক্তি সহজেই উপলব্দি করতে পারতেনÑ এ পথ দিয়ে রাসুল (সা.) হেঁটে গিয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ওই পথের বাতাস থেকে সুঘ্রাণ পাওয়া যেতো। (মিন মায়িনিস শামায়িল : ১২৪)। ‘মেশক আম্বর’ অতি উন্নত মানের সুগন্ধি। হরিণের মৃগনাভি থেকে তৈরি করা হয়। জাবের (রা.) বলেনÑ রাসুল (সা.) যে পথ দিয়ে হেঁটে যেতেন, কেউ তার তালাশে বের হলে সে সুবাস থেকে চিনে নিতে পারত। বলত রাসুল (সা.) এই পথ ধরে গমন করেছেন। পথিকগণ নববি সুবাসে বিমোহিত হত। আনাস (রা.) দশ বছর নবীজির খেদমত করেছেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন ‘আমি আম্বর, মেশক ও অন্য কোনো সুগন্ধি নববি সুবাস থেকে অধিক সুবাসিত পাই নি। (মুসলিম : ২৩৩০)।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত অপর হাদিসে বলেনÑ আমি রাসুল সা.Ñএর হাতের তালুর চেয়ে কোমল ও মসৃণ কোনো রেশম স্পর্শ করি নি। তাঁর ঘমের চেয়ে চমৎকার সুগন্ধি আমি কখনও পাইনি। মুসলিম : ২৩৩১) জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) তার গালে হাত বুলিয়ে ছিলেন। তিনি বলেনÑ তার হাতের এমন কোমলতা ও সুবাস অনুভব করেছি, যেন তা আতরের কস্তুরি থেকে বের করে এনেছেন। (মুসলিম : ২৩২৯)। আনাস (রা.) নবীজির চেহারা দেখার পর এভাবে বর্ণনা দিয়েছেনÑ নবীজির চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা মুক্তোর মতো দেখা যেত। জাবের (রা.) বলেন, ‘প্রভাতের নামাজ আমি নবীজির পেছনে পড়লাম। নামাজান্তে তিনি ঘরের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমি সাথে চললাম। রাস্তায় কয়েকটি শিশু নবীজির সামনে এলো। তিনি একেক করে প্রত্যেকের গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি আমার গালেও হাত বুলালেন।
আমি রাসুল সা. এর মোবারক হাতে শুধু শীতলতাই অনুভব করলাম না, বরং এমন একটি সুগন্ধি অনুভব করলাম যেন তিনি সে সুবাস আতরে শিশি থেকে নিয়ে এসেছেন। রাসুল (সা.) যখন কারো সঙ্গে মুসাফাহা করতেন, সারাদিন সে হাত থেকে মুসাফাহার সুগন্ধি সুবাস ছড়াত। কোনো শিশুর মাথায় হস্ত বুলিয়ে দিলে, সুগন্ধির কারণে অন্যদের থেকে তাকে পৃথক করা যেত। রাসুল (সা.) এর বিশেষ খাদেম আনাস (রা.) এর মাতা উম্মে সুলাইম (রা.)-এর বাসায় গিয়ে কায়লুলা করতেন (অর্থাৎ দুপরের আহারের পর যে বিশ্রাম নেওয়া হয়) উম্মে সুলাইম চামড়ার বিছানা পেতে দিতেন। নবীজি প্রচুর ঘর্মাক্ত হতেন। উম্মে সুলাইম রা. সেই ঘাম জমা করতেন। তিনি তা সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে নিতেন। একবার রাসুল সা. জাগ্রত হলে জিজ্ঞাসা করলেন, উম্মে সুলাইম, এগুলো কী? আরজ করলেন, আপনার ঘাম। এগুলো আমি সুগন্ধির সাথে মিলিয়ে নিচ্ছি। কেননা আপনার ঘাম সকল সুগন্ধির চেয়ে উত্তম। (মুসলিম : ২৩৩১)।
রাসুল (সা.)-এর শরীর মোবারক ঐশীভাবে সুগন্ধিময় থাকা সত্তে¡ও তিনি প্রচুর পরিমাণে খোশবু ব্যবহার করতেন। আন্যদেরও ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতেন। শেষরজনীতে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। নামাজের জন্য আতর মাখতেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অজু করে খোশবু লাগাতেন। কেউ সুগন্ধি হাদিয়া দিলে খুশি মনে গ্রহণ করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিতÑ ‘রাসুল (সা.) কখনও সুগন্ধি-আতর ফেরত দিতেন না।’ (শামায়েলে তিরমিযি : ২৭১৩)। অপর বর্ণনায়Ñ রাসুল (সা.)-এর সুগন্ধির পাত্র ছিল। যা থেকে তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। মেশক ও ধুপকাঠি খুব পছন্দ করতেন। নারীরা নিজ গৃহে স্বামীর আকর্ষণের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় রাসুল (সা.) বলেছেন- পুরুষের সুগন্ধি ওই জিনিস, যার সুঘ্রাণ ছড়ায় কিন্তু রং থাকে অদৃশ্য। আর মহিলাদের সুগন্ধি ওই জিনিস যার রং দৃশ্যমান কিন্তু ঘ্রাণ উহ্য থাকে। (তিরমিযি : ২৭৮৮)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ