মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দি নিউইয়র্ক টাইমস : যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সাথে ফোনে কথা বলে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এ ফোনালাপ কয়েক দশকের কূটনৈতিক রীতিনীতি লংঘন করেছে এবং ট্রাম্পের চীন স্ট্র্যাটেজির ব্যাপারে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। পল হেনলির মতে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সাথে ট্রাম্পের ফোনালাপ এশিয়ায় মার্কিন লক্ষ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
ট্রাম্পের কর্মকা- ও এর পরিণতি বিষয়ে বেইজিংয়ে কার্নেগি-সিংহুয়া সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির পরিচালক পল হেনলির ভালো ধারণা রয়েছে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন হওয়ার পর পূর্ব এশিয়া বিষয়ে তার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচ বছর চাকরি করার আগে বেইজিং দূতাবাস ও পেন্টাগনে তিনি চীন সংক্রান্ত সামরিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ওবামার সময়ে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চীনবিষয়ক পরিচালক ছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির প্রেক্ষিতে পল হেনলি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক বিষয়ে তার চিন্তা-ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনাকৃত।
প্রশ্ন : ২ ডিসেম্বর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ইয়েনের সাথে ট্রাম্পের ফোনালাপের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
জবাব : ভাবি প্রেসিডেন্ট যখন এ কথা বলে তার ফোনালাপের সমালোচনা পরিবর্তন করলেন যে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনই তাকে ফোন করেছিলেন, মনে হয়েছে খেলাটা চীনের হাতে চলে গেছে। পরদিন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনকলটিকে তাইওয়ানের একটি ছোট্ট চালাকি বলে আখ্যায়িত করেন। এখন এ ঘটনার জন্য চীন সাইকে শাস্তি দেয়ার পথ খুঁজতে পারে। যদি সে রকম কিছু ঘটে তাহলে ভাবি প্রেসিডেন্ট কি তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াবেন? যারা ফোনকলটি নিয়ে প্রচারণার বিরুদ্ধে কাজ করছেন তাদের কাছে এটি এক প্রকৃত উদ্বেগের বিষয়।
প্রশ্ন : আসছে বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান সম্পর্ক বিষয়ে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কি? আপনি যখন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে ছিলেন, কিভাবে এ বিষয়টি সামাল দিয়েছেন এবং তখন থেকে কি বিষয়টির প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে?
জবাব : আগামী কয়েক বছরে প্রতিটি দেশে নেতৃত্বের প্রেক্ষিতে তাইওয়ান প্রশ্নে ওয়াশিংটন, বেইজিং ও তাইওয়ান কিভাবে ভালো অবস্থানে আসে তা দেখা কঠিন হবে।
চেন শুই-বিয়ান আমলে হোয়াইট হাউসে আমার কাজের অভিজ্ঞতা বলে, তাইওয়ান প্রণালীর উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র-মার্কিন সম্পর্কের বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন খেয়ে ফেলেছে। তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা যখন চীন-মার্কিন সম্পর্কের অগ্রভাগে এসে দাঁড়িয়েছে তা এমনভাবে আমাদের কর্মসূচি হজম করে ফেলতে পারে যার ফলে আমাদের অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যেমনÑ ক্রমবর্ধমানভাবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমস্যায় অগ্রগতি অর্জন।
প্রশ্ন : নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ও ট্রাম্প-সাই ফোনকল ঘটনায় আপনার চীনা সহযোগীদের প্রতিক্রিয়া কী?
জবাব : আমি যেসব চীনাকে চিনি তাদের অনেকেই নির্বাচনী প্রচারণাকালে মনে করেছিলেন যে চীনের জন্য ট্রাম্প ভালো হবেন। কারণ তিনি একজন লেনদেনকারী ও বাস্তববাদী নেতা হবেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির মতো তিনি সম্পর্কের মধ্যে মানবাধিকার ও মূল্যবোধ সংযুক্ত করবেন না। চীনারা তার নির্বাচনকালীন কথাবার্তায় মনে করেছিল যে ট্রাম্প এশিয়া থেকে সরে আসবেন, মার্কিন জোট প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কম গুরুত্ব প্রদান করবেন এবং তারপর চীনের ওপর কৌশলগত চাপ হ্রাস করবেন।
ট্রাম্প-সাই ফোনালাপ ছিল একটি বাস্তবতা পরীক্ষা। বেইজিংয়ে আমি যে সাধারণ প্রতিক্রিয়া শুনেছি তা হলো চীনাদের একটি প্রবাদ : কারো বিভ্রম পরিত্যাগ করা। এখন চীনে ক্রমেই অনুমিত হচ্ছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের এশিয়া-প্রশান্ত রূপকল্প অধিকতর চাপ প্রয়োগমূলক হবে, কম নয়। শুধু তাইওয়ানের ব্যাপারেই যে এ ইঙ্গিত মিলেছে তা নয়, দক্ষিণ চীন সাগরের ক্ষেত্রেও। ট্রাম্পের উপদেষ্টারা মার্কিন নৌবাহিনীকে পুনর্গঠন ও প্রতিরক্ষা পৃথকীকরণ বাতিলের অঙ্গীকার করেছেন। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে যাতে অগ্রগতি অর্জিত হয় সে জন্য ট্রাম্প চীনের ওপর আরো চাপ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন : আগামী চার বছরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ও সহযোগিতার সম্ভাব্য বৃহত্তম ক্ষেত্র হিসেবে কী দেখছেন?
জবাব : আমার দৃষ্টিতে অদূর ভবিষ্যতে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে আমরা যে সুস্পষ্ট হুমকির সম্মুখীন হতে যাচ্ছি তা হচ্ছে উত্তর কোরিয়া। গত এক বা দু’বছরে হুমকির মূল্যায়নে পরিবর্তন ঘটেছে এবং এ ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে যে, আগামী প্রশাসনের আমলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বিগুণ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কূটনীতির মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা চীনের সাথে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারব কি না তা খুঁজে দেখা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি চীন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে অনাগ্রহী হয় তখন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও এ অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের সাথে নিয়ে একতরফাভাবে অগ্রসর হতে হবে।
ট্রাম্প-সাই ফোনকল আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করি তার সাথে এ প্রশ্ন সম্পর্কিত। যদি আমরা উত্তর কোরিয়া বা ইরানি পারমাণবিক বিস্তারের হুমকিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি বলে গণ্য করি সেক্ষেত্রে এশিয়ায় আমাদের স্ট্র্যাটেজি নিরুপণকালে এ সব লক্ষ্য অর্জনে চীনের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ কি না তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে এটা বোঝা মুশকিল যে, বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থ ও লক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সাইয়ের সাথে ফোনালাপ কৌশলগতভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন : সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রতি আপনি কী উপদেশ দিতে চান?
জবাব : যেসব জায়গায় চীনের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতা করা প্রয়োজন এবং যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে বা মনে করি যে মার্কিন স্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে আমাদের কঠোর হতে হবে। বিশ্বে মার্কিন স্বার্থ সম্পৃক্ত বহু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একত্রে কাজ করতে পারবে কি না তা দেখতে হবে।
এ অবস্থান থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে ভাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগেভাগে সাক্ষাৎ এবং তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।