পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : কৃষকের চঞ্চল চোখ এখন রোমাঞ্চকর ধান কাটার দিকে। মাঠে মাঠে পাকা ফসলের মৌ মৌ গন্ধ। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রধান ফসল আমন মৌসুমের দিকে আমজনতা কৃষক তাকিয়ে আছে অধীর আগ্রহে। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের জন্য কৃষকরা ব্যাপক পরিশ্রম করে ক্ষেতের পর ক্ষেত ফসল ফলিয়েছে। আর কয়েক দিন পরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। এখন ইরি, বেতি বালাম, চিনি কালাই, জটাই বালাম, স্বর্ণা ধান কাটা চলছে। গত বছরের তুলনায় এসব জাতের প্রতি মণ ধান ২০০ থেকে ২৩০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৫০০ টাকার ধান বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকায়। চিনি কানাই বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৩শ’ ৫০ টাকা। বেতি বালামের দাম ৯শ’ টাকা। বাজার এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। গত বছর ভরা মৌসুমে আমন ধান বিক্রি হয় ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা। এবার বাজার অনুযায়ী এ ধান ৯শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকা বিক্রির আশা করছে কৃষক। এদিকে, ধান কাটার এই চূড়ান্ত মুহূর্তে কৃষকরা খানিকটা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। চলতি মৌসুমে খুলনায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য মূল্যের জন্য এবার আশাবাদীও বটে।
সূত্র মতে, রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর। রোপণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমি। ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর অনাবাদি রয়ে গেছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ৬৮ হাজার ২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২৭ হাজার ২৪৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। রোপণ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ৬৭ হাজার ৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২১ ও ২২ আগস্ট অতিবৃষ্টির কারণে এ দু’দিন পানি আটকে থাকায় কৃষকরা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি। ফলে আবাদ কম হয়েছে।
অপরদিকে, চলতি মৌসুমে চাষাবাদ সামান্য কিছু কম হলেও আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। তবে কৃষকও নানা সমস্যায় জর্জরিত। এনজিও সমিতির ঋণ করে আবার কেউ কেউ মহাজন ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জমি চাষ করেছেন। বর্গা চাষিদের পাশে কৃষি ব্যাংক না থাকায় তাদের এনজিও ও মহাজনদের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।
জেলা মার্কেটিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডুমুরিয়া চুকনগর বাজারে প্রতি মণ ধান ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রোপা আমন ধানের দাম আরো বেড়েছে। রোপা আমন ধানের ফলন ভালো এবং ধানের মূল্য সন্তোষজনক। এদিকে গত মঙ্গলবার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাজার এলাকার সাপ্তাহিক হাটে রোপা আমন ধান মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা। জেলার রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের কৃষক মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। এ আবাদ করে তিনি প্রায় ৮০ মণ ধান পেতে পারেন বলে ধারণা করছেন। রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের তিলক গ্রামের কৃষক মনিরুল জানান, তিনি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ আবাদ করে তিনি ৪৫ মণ ধান পাবেন বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, ধানের দাম এবার একটু ভালো পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাদে কিছুটা মুনাফা পাবেন। রূপসার বাগমারা গ্রামের কৃষক মো: সত্য রায় জানান, তিনি এ বছর ১২ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার সর্বসাকুল্যে ব্যয় হয়েছে ২৫-২৬ হাজার টাকা। তিনি বিঘাপ্রতি ১৩-১৫ মণ ধান পাবেন বলে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর ধানের বাজারমূল্য ভালো থাকায় উৎপাদন খরচ বাদে আশানুরূপ মুনাফা চোখে দেখা যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ ইনকিলাবকে জানান, ইতোমধ্যে খুলনা মেট্রোসহ জেলার ৯ উপজেলায় শতকরা ১০ ভাগ রোপা আমন কর্তন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্জিত বেশি হয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবায়েত আরা ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝর্ণা। বর্তমানে উঁচু জমির ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। নিচু জমির ধান পৌষের প্রথম সপ্তাহে কাটা হেেব। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কৃষকদের জন্য ও তাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।