Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ব্যাংকিং-সঞ্চয়ের হাতেখড়ি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:০০ পিএম

রাজধানীর একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহিরা। ডিফেন্সে চাকুরির সুবাদে প্রায়ই দেশের বাইরে থাকতে হয় মাকে। ভিন দেশ থেকে মায়ের পাঠানো টাকা পদ্মা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন তাহিরার নানু। সেখানেই স্কুলের বাচ্চাদের পোস্টার দেখে প্রশ্ন জাগে তাহিরার, কি করে বাচ্চাটা স্কুল বাদ দিয়ে ছবির ভেতরে!

হাসতে হাসতে শাখায় থাকা স্টুডেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা অনন্যা, তাহিরাকে জানালো স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কে। পছন্দ হলো বিষয়টা তাহিরার, বুদ্ধিমতি তাহিরা তার নানুকে বলল আমার নামেও একটা একাউন্ট খোল, মাটির ব্যাংক না এখন থেকে আসল ব্যাংকে টাকা জমাবো।

তাহিরাদের মত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নজরদারিতে শুরু হয় স্কুল ব্যাংকিং। স্কুলে যায় এমন শিশু-কিশোররা হলো এই ব্যাংকিংয়ের আওতাধীন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উৎসবে তাদের বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে উপহার বা নগদ টাকা অথবা স্কুলের টিফিন বা যাতায়াত খরচ বাবদ অর্থ পায়। এখান থেকেই কিছুটা বাঁচিয়ে ভবিষ্যৎতের জন্য রেখে দেয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার জন্যই স্কুল ব্যাংকিং। বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেছেন,‘ব্যয় করার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় করো না, বরং সঞ্চয় করার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা ব্যয় করো’। শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবনে যদি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, তাহলে তারা শিক্ষা জীবন শেষ করে যখন কর্মজীবনে রোজগার শুরু করবে, তখন এ সঞ্চয়ের অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ে সাড়ে আঠাশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর একাউন্ট খোলা হয়েছে এবং এর বিপরীতে, জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এরমধ্যে ১২শ কোটি ছেলেদের আর ১৩শ কোটি মেয়েদের।

বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও এখন ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা তৈরী করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছ। যা পুরো ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংকও ঢেলে সাজিয়েছে তাদের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খানের তত্ত্বাবধানে চলছে এর কেন্দ্রীয়করণ বিপ্লব। তারই একটি নতুন দিক স্টুডেন্ট ব্যাংকিং এর উন্নয়ন।

নতুন চারটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে পদ্মা ব্যাংকের স্টুডেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন। পদ্মা নেক্সটজেন একাউন্ট, পদ্মা মাস্টার মাইন্ড একাউন্ট, পদ্মা স্পিরিট মান্থলি ডিপোজিট প্ল্যান এবং পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ফাইল।

পদ্মা নেক্সটজেন একাউন্ট: প্রি-স্কুল থেকে ১৮ বছরের নীচে যে কেউ মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে খুলতে পারবেন এই একাউন্ট। আকর্ষণীয় রেটে করা যাবে ভবিষ্যৎতের জন্য সঞ্চয়।

পদ্মা মাস্টারমাইন্ড একাউন্ট: তারুণ্যের শক্তি এই একাউন্টটি। ১৮ থেকে ২৮ বছরের নীচে যে কেউ পরিচালনা করতে পারবেন। পাঁচশ টাকাতেই খোলা যাবে আর দেশের যে কোন এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠাতে লাগবেনা এক পয়সাও।

পদ্মা স্পিরিট মান্থলি ডিপোজিট প্ল্যান: হাতখরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে খুলে ফেলা যাবে এই ডিপোজিট প্রোডাক্টটি। কোন রকম কোন ঝামেলা ছাড়াই বিভিন্ন মেয়াদে পরিচালনা করা যাবে। যা ছায়া হয়ে পাশে থাকবে যে কোন বিপদে। পদ্মা নেক্সট জেন একাউন্ট হোল্ডারের পিতা-মাতা ও পদ্মা মাস্টামাইন্ড একাউন্ট হোল্ডারের জন্য এই স্কিমটি।

পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ফাইল সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মত সবসময় পাশে থাকে এটি। চীন, জাপান, কোরিয়া ভারত এবং সার্কভুক্ত দেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা দেশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন স্বাচ্ছন্দে।

পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ব্যাংকিং এর হেড নাফিসা আরা বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা ঢাকা,সিলেট,কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের এগারো জেলায় রোডশো করেছি। এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছি, যা আসলে শিক্ষণীয়। ক্ষুদে প্রজন্ম যেভাবে সঞ্চয়ের কথা ভাবে অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিও সেটার ধারে কাছে যাননা। যেমন- গোয়ালাবাজারের উদয়ন কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষার্থী মাকে জোর করে এনে একাউন্ট খুলেছে। বলল আমরা তিন বোন, মা সবসময় চিন্তা করে বিয়ের টাকা কিভাবে জোগাড় করবে তাই এখন থেকেই আমি আমার বড় আপুর বিয়ের টাকা জমাতে চাই। ঘরে থাকলে খরচ হয়ে যাবে কিন্তু ব্যাংকে থাকলে সেটা ভাঙ্গতে কষ্ট লাগবে। মাত্র ১০০ টাকায় একাউন্ট খুলল রানী। আসলে করোনা মহামারীর পর পরিবারের অনেকের চাকরি হারানো দেখে বাচ্চারা এখন টাকা জমানোর প্রতি বেশি সচেতন হয়ে উঠেছে।”

নাফিসা আরো বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় সব ব্যাংকই পরিচালনা করছে স্টুডেন্ট ব্যাংকিং সেবা। তবে আমরা একটু আলাদা, কেননা আমরা দিচ্ছি ফ্রি চেক বই ও ডেবিট কার্ড, কোন পরিচালনা ফি নেই।”

হেড অব রিটেইল এন্ড এসএমই ব্যাংকিং রকিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, নতুন প্রজন্মের বন্ধুই হলো আধুনিক টেকনোলজি। এখন সময় এসেছে ফিনটেককেও আপন করে নেয়ার।যার জন্য সেরা মঞ্চ হলো স্টুডেন্ট ব্যাংকিং। তাদের সহযোগীতায় চ্যালেঞ্জটা আমাদেরই বেশি। তাই আমরা অত্যাধুনিক সব সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর।

পদ্মা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি ওও জাবেদ আমিন বলেন,হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারবে নতুন প্রজন্ম, এই চেষ্টাই করে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংক। স্কুল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশনটা দ্রুতই আমাদের পদ্মা ওয়ালেট ও পদ্মা আই ব্যাংকিং-এ পাওয়া যাবে।

বিন্দু থেকে সিন্ধু, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এটাই চূড়ান্ত সত্য। সঞ্চয় হল বিপদের বন্ধু, স্বপ্নের সোপান এবং ভবিষ্যত গড়ার কারিগর। বিপদে আর্থিক সংকট মেটানো, দেশ-বিদেশে ভ্রমণসহ বিদেশে পড়তে যাওয়ার খরচ মেটাতে সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়াটা খুবই জরুরী।

শিক্ষার বিপরীতে ছাত্রদের সঞ্চয় ভবিষ্যতের উত্তম বিনিয়োগ। এক্ষেত্র বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক গুরুজনরা এগিয়ে আসতে পারেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকে। তবেই স্বার্থক হবে স্টুডেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ