নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিদায়ের রাগিণীতো সপ্তাহখানেক আগেই বাজিয়ে দিয়েছিলেন। যে রাফায়েল নাদালের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে ৪০টি ম্যাচে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন, তাকে নিয়েই খেলবেন টেনিস জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। এই বার্তাও দেওয়া ছিল। র্যাকেট হাতে ২৫ বছর, নানা রঙে বিশ্বময়ী টেনিসকে রাঙানোর পর, খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানতে প্রস্তুত ছিল রজার ফেদেরার নিজেও। কিন্তু এরপরও ম্যাচ শেষে অঝোরে কাঁদলেন, নেমে এলো বিষাদের সুর। অস্ট্রেলিয়া ওপেন ২০০৯ সালের ফাইনালে নাদালের বিপক্ষে হারের পর যেভাবে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই। সারা দুনিয়ার টেনিসপ্রেমীরা আশা করেছিলেন লেভার কাপে ডাবলস জিতে বিদায় নিবেন ফেদেরার। কিন্তু টিম ইউরোপের হয়ে দ্বৈত জুটি হিসেবে বন্ধু নাদালকে নিয়ে ৪-৬, ৭-৬ (৭ /২), ১১-৯ গেমে হেরে গেলেন টিম ওয়ার্ল্ড জুটি ফ্রান্সিস টিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে। বন্ধুকে জয়ের মাধ্যমে বিদায় দিতে ব্যর্থ হয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি নাদালও। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ফেদেরার কাঁদতে কাঁদতেই জানালেন তার খারাপ লাগছে না। এই অশ্রু যে আনন্দের। তাও টেনিস দর্শকদের মনটা যে বড্ড খারাপ! এবার যে বিদায় বলতে হচ্ছে প্রিয় ফেদেরারকে।
লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় এই ম্যাচের ফলাফল ছিল গৌণ। গতবছর উইম্বলডন থেকে বাদ পড়ার পর বার কয়েক যেতে হয়েছিল ছুরি কাঁচির নিচে। তাই কোর্টে আর আগের ঝলক নেই। এক হাতের ব্যাক হ্যান্ড আর পূর্বের মতো প্রতিপক্ষকে ছারখার করতে পারে না। ২০১৭ সালের প্রাগে সর্বশেষ জুটি বেঁধে খেলা, বন্ধু নাদালও লড়াই করেছেন চোট নিয়েই। এতো প্রতিকূলতায় ম্যাচটা হারতে হলো। কিন্তু হার-জিতের পরোয়া কে করে? মাঠের দর্শকরা গিয়েছিলেন শেষবারের মতো র্যাকেট হাতে ফেদেরারকে দেখতে। আর সারা বিশ্বের কোটি কোটি চোখ টেলিভিশন পর্দার সামনে ছিলো সেই একই কারণে। জয় পরাজয়ের ঊর্ধ্বে উঠে গেল টেনিস। হবেই না বা কেন? দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে এই মানুষটা ছিল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। নিপাট ভদ্রলোকের সমার্থক ছিলেন ফেদেরার। চোখে, মুখে আগ্রাসন না এনে, পাওয়ার টেনিসের কাছে না ঘেষেও যে ২০টি গ্র্যান্ড সø্যাম জেতা যায়, তার উদাহরণ তো সুইস তারকায়।
খেলা শেষ হতেই জায়ান্ট স্ক্রিনে বর্তমান ও প্রাক্তন টেনিস তারকারা ফেদেরারকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতির কথা বললেন। জন ম্যাকেনরো দাবি করেন, ‘আমার দেখা সব থেকে সুন্দর টেনিস খেলোয়াড়।’ বিয়ন বর্গ বলেন, ‘ইশ, আমি যদি ওর মতো টেনিস খেলতে পারতাম।’ অন্য দিকে বিখ্যাত শিল্পী এলি গোল্ডি গাইছিলো ‘স্টিল ফলিং ফর ইউ’ গানটি। সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে ফেদেরার জানান, ‘আমরা এই সময় কাটিয়ে উঠব। দারুণ দিন। সবাইকে বলতে চাই, আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। শেষবারের মতো নিজের জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সবকিছুই ছিল শেষবারের মতো।’
এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে ৪১ বছর বয়সি কিংবদন্তি জানান, ‘এখানেই সবকিছুর শেষ নয়। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারো দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। সামনের বছরগুলোয় শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই সবাইকে, যারা এতো দিন ধরে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’
এই শতাব্দীতে এসে আম জনতার কাছে টেনিসের মানেই ছিল ফেদেরার-নাদাল। ম্যাচের পর স্প্যানিশ তারকা নাদালও কাঁদলেন প্রতিদ্বন্দী ও বন্ধুর জন্য। এরপর আবেগঘন হয়ে নাদাল জানান তার ক্যারিয়ারের একটা অধ্যায়ের অবসান এই ম্যাচের মাধ্যমে হয়েছে, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।’
খেলা শেষে সুইস তারকা প্রথম গিয়েছিলেন মা-বাব ও স্ত্রীর মিরকার নিকট। এরপর এলেন তার দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষদের কছে, যারা লেভার কাপে আবার তার সঙ্গী। সেখানে হাজির হলেন কিংবদন্তি রড লেভারও। এরপর পুরো কোর্ট ঘুরলেন ফেদেরার। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন। শেষে নাদাল, জোকোভিচ, মারেদের কাঁধে চড়ে বিদায় নিলেন টেনিসের ‘রাজা’। এবার লেভার কাপে টিম ইউরোপের পোষাকের রঙ নীল। ফেদেরার যাওয়ার বেলায় সেই নীলের আরেক নাম বেদনায় ঢেকে দিলেন টেনিসকেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।