পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে রেললাইন কেন্দ্রিক বস্তি ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট। আর বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের নিরাপদ মাদক সেবনের স্থান হাতিরঝিল। গোয়েন্দা সূত্রমতে, রেল লাইনের আশপাশে মাদক ব্যবসা হচ্ছে প্রকাশ্যে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় রেললাইন সংলগ্ন বস্তি, ছাপড়াঘর, ছোটখাটো দোকানগুলো মাদক কেনাবেচার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মাদক বিক্রেতারা নিম্নশ্রেণির হলেও তাদের আশ্রয়দাতার তালিকায় রয়েছে মাদকের গডফাদারদের নাম। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে খুচরা মাদক বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও অন্তরালে থাকা গডফাদাররাই তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে।
রাজধানীতে রেলওয়েকেন্দ্রিক মাদক স্পটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিটিপাড়া, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, উত্তরা রেলেওয়ে স্টেশন এবং জুরাইন রেলগেইট এলাকা। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয় এসব স্পটে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল। এসব স্পটে সরবরাহকৃত বেশিরভাগ মাদকই আসে ট্রেনের মাধ্যমে। ট্রেনে মাদক আনা নেয়া অনেকটাই নিরাপদ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও তেজগাঁওয়ে মাদক কেনাবেচা বন্ধ করতে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। ব্লক রেইড দিয়েও অভিযান হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে মাদক বিক্রেতারা অভিযানের খবর আগেই জানতে পেরে মাদকসহ সটকে পড়ে। অভিযানে সামান্য সংখ্যক বিক্রেতা গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যুগ যুগ ধরে টিটিপাড়া মাদক এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানের মাদকের স্পট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু মাদক কখনো বন্ধ হয়নি। সেখানে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে প্রকাশ্যে।
টিটিপাড়া মেতড়পট্টিতে অধিকাংশ ঘরে ও পান-সিগারেটের দোকানে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হচ্ছে। গন্ধে এলাকায় বিচরণ করা যায় না। অভিযোগ রয়েছে, অসাধু পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত মাসোহারা নেয় সেখান থেকে। টিটিপাড়ায় স্পটগুলোতে প্রতিদিনই বিক্রেতার পরিবর্তন করা হয়।
একজন যে স্পটে দাঁড়িয়ে মাদক বিক্রি করে পরদিন তাঁকে আর সেখানে পাওয়া যাবে না। ভিন্ন স্পটে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
পুলিশ সূত্র বলছে, টিটিপাড়ায় একাধিক থানার এলাকা পড়েছে। এর একটি অংশ মুগদা থানায় পড়েছে, একটি অংশ শাহজাহানপুরে, রেলপথ রেলওয়ে থানার মধ্যেও কিছু এলাকা আছে। কেউই মাদক বিক্রির দায় নিতে চায় না।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, জুরাইন রেল গেইট থেকে বড়ইতলা আলমবাগ মদিনা মসজিদ পর্যন্ত মাদক কারবারিদের গডফাদারদের তালিকায় রয়েছে শানু, বাপ্পা, মোক্তার, মোটা জনি, সাইফুল বাবু, তানভীর রহমান, শামীম, আলাউদ্দিন, শাহজাহান, সোহেল ইউসুফ ও নাকা। এরা স্থানীয় থানা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে মাদক ব্যবসা করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। তাদের নামে রয়েছে একাধিক মামলা। তবে পুলিশের খাতায় তারা পলাতক আসামি।
রেললাইনভিত্তিক মাদক সেবন ও বিক্রি বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আগে তেজগাঁও কিংবা কারওয়ানবাজার রেল লাইনের ধারে মাদকের ব্যবহার বেশি ছিলো। কিন্তু এখন আর নির্দিষ্ট জায়গায় নেই। ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্টেশনে। মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও, জুরাইন, বিমানবন্দর ও কুড়িল ফ্লাইওভার ব্রীজ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এর বিস্তার ঘটেছে। রাশেদুজ্জামান আরো বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। অভিযানে মাদকসেবী যেমন গ্রেফতার হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও গ্রেফতার হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট জেল জরিমানা করছে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে। কিন্তু জামিনে এসে এরা একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, শুধু গ্রেফতার আর জেল জরিমানার মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকিনি। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হচ্ছে। আসলে মাদকসেবিরা খুব স্বল্প সময় কারাগারে থাকে। তাই সংশোধনের সুযোগ পায় না। তাদের উপযুক্ত চিকিৎসারও দরকার।
তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মাদকসেবীরা মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহে সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করছে। এরমধ্যে ছিনতাই অন্যতম। গত এক মাসে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষ সেখানে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। এক সময় এখানে ফেন্সিডিল আর গাঁজার জন্য সমালোচিত হলেও এখন ইয়াবাই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে অহরহ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভ্যান কিংবা রিকশারোহীর আড়ালে এখানে মাদক ব্যবসা চলে। ক্রেতারা ভালো করেই জানেন, কোথায় দাঁড়ালে বিক্রেতা চলে আসবে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস নিয়ে অনেকেই এখান থেকে মাদক নিয়ে যায় চোখের পলকে। কমলাপুর স্টেশনের ডোম ঘরের পাশেও মাদক কেনাবেচা হয়।
এদিকে এসব মাদক সেবন বেশি হয় হাতিরঝিল লেকে। বড়লোকের নেশাগ্রস্ত পুত্ররা মোটরসাইকেলে চেপে হাতিরঝিল লেকের বিভিন্ন স্থানে কিংবা ব্রীজের ওপরে আড্ডার ছলে মাদক সেবন করে। কোথাও কোথাও একত্রে ৫/৬ জন গোল হয়ে বসে ইয়াবা সেবন করে। তবে এখানে গাঁজার সেবনই বেশি বলে জানা গেছে। একাধিক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীও রয়েছে হাতিরঝিলের বিভিন্ন স্পটে। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আবদুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করে এখানে এসে সেবন করে বিভিন্ন বয়সি যুবক-যুবতী। এসব মাদকসেবীরা ভাসমান। আমরা প্রতিদিন চেকপোস্ট ও মোবাইল পার্টির মাধ্যমে এদের গ্রেফতার করি। প্রতিমাসে অন্তত ২-৩শ’ মাদকসেবীকে গ্রেফতার করি। আজ শুক্রবারও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া হাতিরঝিল এলাকা থেকে ৫ হাজার ১শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে ডিবি। তবে সমস্যা হলো আমাদের পুলিশ থাকে পোশাক পরিহিত। তাই কৌশলে মাদকসেবীরা পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, সিসিটিভির জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। পুরো হাতিরঝিল লেক সিসিটিভির আওতায় এনে মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এখানের মাদকসেবন ও বখাটেপনা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।