Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যয় বাড়ল ৪০৪ কোটি টাকা

ভুল পরিকল্পনায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন প্রকল্প : সংশোধনের উদ্যোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভুল পরিকল্পনায় চালু হয়েছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৫ সালে নেয়া এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের পাশে নতুন ডুয়েলগেজ একটি লাইন নির্মাণের কথা ছিল। প্রায় চার বছর পর প্রকল্পটিতে ভুল ধরা পড়ে। আগের পরিকল্পনায় নতুন ডুয়েলগেজ লাইনটি বিদ্যমান রেললাইনের চেয়ে অনেক উঁচু হবে। এতে ট্রেন চলাচলে জটিলতা সৃষ্টি হবে।এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন লাইনের পাশাপাশি বিদ্যমান রেললাইনটিও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ১০৭ শতাংশ। অর্থাৎ সংশোধিত প্রকল্পে মোট ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৪০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নয় জাপান সরকার। এতে করে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের অনুদান রয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সররবাহ করা হবে।
এদিকে, সংশোধিত হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটির নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৪০৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ১০৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে প্রকল্পটিতে বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নয় জাপান সরকার। ফলে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে তা তিন দফা বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এর পরেও প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে প্রকল্পটির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সে সময় একই সঙ্গে ডুয়েলগেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা গ্রহণ করা হয়নি। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কয়েক বছর আগেই বিদ্যমান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মিটারগেজ রেলপথটি সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু নতুন একটি লাইন নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়। এর প্রায় সাত বছর পর ভুল পরিকল্পনার বিষয়টি ধরা পড়ে, যদিও এখন আর জাপান সরকার বাড়তি টাকা দিতে রাজি নয়। তবে সে সময় একবারে ডুয়েলগেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হলে জাপানের বাড়তি অনুদান পাওয়া যেত, বাংলাদেশ সরকারের অর্থও সাশ্রয় হতো।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছলের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর রেলভবনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা। এতে রেলপথ নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি উঠে আসে। সভায় বলা হয়, অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণকাজ চলছে। তবে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা না হলে এ লাইনটিকে স্টেশন, সেতু ও লেভেলক্রসিং গেটে নির্মিতব্য ডুয়েলগেজ লাইনের সমান উচ্চতায় স্থাপন করতে হবে। তা না হলে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনের ট্র্যাক স্ট্রাকচারে অসম ভার্টিকাল লেভেল দেখা দেবে। এছাড়া আপ লাইন ও ডাউন লাইনের জন্য প্ল্যাটফরম ও প্ল্যাটফরমের শেডের উচ্চতা ভিন্ন করতে হবে। এ সমস্যা সমাধানে নতুন একটি প্যাকেজের মাধ্যমে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটিও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে হবে। ওই প্রস্তাবে কমিটি সম্মত হয়। সে অনুযায়ী প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রকল্পটির পিএসসি সভায় জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে কাজ শুরুর আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের পাশে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এতে বাস্তব কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এছাড়া এখনও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ স্টেশন এলাকায় জমি ইজারাগ্রহীতারা হাইকোর্টে ১৩টি রিট মামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন। এর মধ্যে তিনটি মামলায় রায় রেলের পক্ষে এসেছে। এদিকে লেভেলক্রসিং গেট নং টি-১ ও টি-২-এর মাঝে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যে আরএস নকশা অনুযায়ী রেললাইনের বাঁ পাশে সাত-আট ফুট জায়গা রয়েছে। সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ অসম্ভব। এক্ষেত্রে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। যদিও প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ খাতে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি। আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। রেললাইনের দুপাশেই খালি জায়গা পড়ে আছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় আবার নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে যেখানে পাকা দোকান-পাট ছিল সেখানে নতুন করে স্টিলের ফ্রেমে দোকান তৈরী করা হচ্ছে। জুরাইন রেলগেইট এলাকায় রেললাইনের দুপাশেই শত শত অস্থায়ী দোকান বসিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা চলছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে চাষাঢ়া এলাকায় স্টিলের ফ্রেমের দোকান নির্মাণ করা হয়েছে অনেকগুলো। আরও দোকান নির্মাণ কাজ চলছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গেন্ডারিয়া থেকে চাষাড়া পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের উভয় পাশে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার ফলে জিওটেকনিক্যাল সার্ভের সময় এলাকার মাটির বাস্তব অবস্থা নিরূপণ করা যায়নি। এতে রেলপথ নির্মাণে মাটি ভরাট করতে গিয়ে দেখা যায়, ওপরের দিকে সামান্য মাটি ভালো থাকলেও বেশ গভীর পর্যন্ত পলিথিন ও স্পয়েল্ড সয়েল (নরম মাটি) রয়েছে। এসব পলিথিন ও আনসুইটেবল মেটারিয়াল অপসারণ করে এমব্যাংকমেন্ট (বাঁধ) নির্মাণ করতে হচ্ছে। এতে করে এ খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণ করার সময় এ বিষয়টিও সঠিকভাবে নিরুপণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।



 

Show all comments
  • Zaman ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
    এর দায় কার ?????????
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
    এভাবে আর কত দেশের টাকা নষ্ট করা হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    যাদের কারণে এই ব্যয় বেড়েছে এই টাকা তারা দিবে
    Total Reply(0) Reply
  • রোদেলা ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    কয়েকজনের ভুলের খেসারত কেন সারাদেশের মানুষ দিবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্ত কন্ঠ সত্যের কলম ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৪ এএম says : 0
    হায়রে গরিবের ঘাম ঝড়ানো টাকা।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sajib Bhuyan ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৫ এএম says : 0
    টাকা কোন ব্যাপাইনা মাথা বেছলে জনগণের বেছফে সমস্যা নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Alex Anik ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৫ এএম says : 0
    গোটা দেশটাই চলতেছে ভুলভ্রান্তিতে
    Total Reply(0) Reply
  • Shahed ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩২ এএম says : 0
    এইদায় সাধারণ জনগন কেনো নিবে আমাদের রক্ত পানি করা টাকা তাদের যা ইচ্ছা তাই করবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ramzan Hossain ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:১৯ পিএম says : 0
    দেশের ও দেশের জনগণের জন্য দুঃখজনক কথ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhul Amin ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০১ পিএম says : 0
    Who prepared such proposals, are they living persons in this part of the world or alienated from other planets ?
    Total Reply(0) Reply
  • Monami ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৫৬ পিএম says : 0
    Why not Elevated Rail system like Metro Rail?? Route should be Dhaka - Chashara - Adamji - Shiddirgonj.
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ২০ নভেম্বর, ২০২০, ১১:১৬ পিএম says : 0
    ব্যয় বাড়ছে তাতে কী হ‌ইছে? কোন ব্যাপারই না! আমরা জনগণ তয় কিসের জন্য আছি! দরকার হ‌ইলে ভাত না খামু, তবুও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাদ দেয়া যাবে না। সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা জিন্দাবাদ! পুঁজিবাদ জিন্দাবাদ! পাবলিক/জনগণ নিপাত যাক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেললাইন

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২ ডিসেম্বর, ২০২১
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১৮ নভেম্বর, ২০২০
২৩ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ