Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় রেললাইনের পাশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস

বস্তিটি রাজনৈতিক দলের ‘ভোটের ডিপো’ অবৈধ দখলে ৬০ একর জমি মাসোহারা যায় রেলের পেটে

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০১ এএম

খুলনা মহানগরীতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার রেলপথ। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় বেদখলে থাকে রেল লাইনের পাশ জুড়ে থাকা বিস্তীর্ণ জমি। নির্মাণ করা হয় কাঁচা পাকা স্থাপনা। মাসোহারা পায় রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রায় প্রতি বছরই অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেয়া হলেও অদৃশ্য মহলের ইশারায় তা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়। রেললাইনের জায়গা দখল করে বস্তি তৈরি করা সবচেয়ে লাভজনক। দখলদাররা নগরীর অধিকাংশ রেলের জায়গাতে বস্তি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে। এভাইে চলছে গত কয়েক দশক।
খুলনায় বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের লোকজন পরিবার নিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। নগরীর ২৮টি পয়েন্টে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। কোন রকমে ঝুঁঁপড়ি ঘর বানিয়ে থাকছে তারা। রেল লাইন থেকে তাদের ঘরগুলোর দূরত্ব ৮ থেকে ১০ ফুট। শুধু ঘর নয়, সরকারি জায়গাকে নিজের মনে করে এবং দখল পাকাপোক্ত করতে ঘরের সামনে বাড়তি জায়গা বেড়া দিয়ে তাতে সবজি চাষ ও হাঁস মুরগিও পালন করছে তারা।
সামান্য বৃষ্টিতেই বস্তির গোলপাতার ছাদ দিয়ে ঘরে পানি ঢোকে। পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কোনো কিছু নেই। ছোট ছোট শিশুরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘরের সামনে খেলা করছে। রেললাইনের উপরই প্রায় সারাদিন তারা থাকে। ট্রেন এলে তাদের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউ কেউ রেললাইনের পাশে জীবিকার জন্য মুদি দোকান, তরিতরকারির দোকান দিয়েছে।
খুলনার রেলষ্টেশন থেকে ১০ জোড়া ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। এ হিসাবে দিনে কমপক্ষে ২০ বার মৃত্যুঝুঁঁকি তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কোনো কারণে যাত্রীবাহি বা মাল গাড়ি বস্তির আশেপাশে লাইনচ্যুত হলে ঘটতে পারে ব্যাপক প্রাণহানি। নগরীর জোড়াগেট, আলমনগর, কদমতলা, বৈকালী, দৌলতপুর, রেলিগেট, ফুলবাড়িগেটসহ কমপক্ষে ২৮টি স্থানে রেললাইনের পাশে অবৈধভাবে বস্তি গড়ে উঠছে।
নগরীর আলমনগর এলাকায় রেল বস্তিতে বসবাসকারী ইজিবাইক চালক আব্দুস সামাদ জানান, গত ৩ বছর ধরে এখানে তিনি পরিবার নিয়ে রয়েছেন। দুটি গোলপাতার ঘর তার। প্রতিমাসে রেলের একজন কর্মচারী এসে এক হাজার টাকা নিয়ে যায়। অনুরোধের পরও তিনি সেই রেল কর্মচারীর নাম প্রকাশ করেননি।
নগরীর জোড়াগেট এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী হাজেরা বেগম পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। দুই বছর ধরে একটি ঘর নিয়ে বস্তিতে রয়েছেন। স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিমাসে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেন। তার পাশে বড় দুটি ঘর নিয়ে থাকেন আজিজুল হক নামে একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি প্রতিমাসে দেন ১২০০ টাকা। এটাকাও নেন ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
ইনকিলাব অনুসন্ধান চালিয়ে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুঁজে পায়। মুখোমুখি হলে তিনি জানান, বস্তিতে ৩৬টি ঘর আছে। মাসে ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া ওঠে। রেলওয়ের কয়েকজনকে মাসিক টাকা দিতে হয়। এছাড়া পার্টির কিছু লোককে টাকা দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এসব কথা বলেন।
সূত্র জানায়, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের লোকজন নগরীর ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় রেলের জমিতে বস্তি তৈরি করে। স্থানীয় অনেকেই জানান, বস্তিটি রাজনৈতিক দলের ‘ভোটের ডিপো’। বস্তিবাসীদের ভোটের জন্য এলাকার কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। নগরীতে যতগুলো স্থানে রেলের জায়গা দখল করে বস্তি তৈরি করা হয়েছে, তার নেপথ্যে রয়েছেন রেলের অসাধু কর্মচারী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।
খুলনা রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের তথ্য বলছে, খুলনায় রেলের মোট জমির পরিমাণ ১৯৫ দশমিক ৪৪ একর। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ১০ একর, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৬ দশমিক ৪২ একর, খুলনা জেলা প্রশাসন ২ দশমিক ৮৭ একর, মৎস্য লাইনসের ১৩ দশমিক ৮৭ একরসহ মোট ৩৩ দশমিক ৫ একর জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি ১৬২ দশমিক ৩৯ একর জমি রেলওয়ের অপারেশন এলাকা। ওই এলাকার প্রায় ৬০ একর জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধাস পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির-উল-জব্বার বলেন, নগরীর বস্তিগুলোর ঘিঞ্জিপূর্ণ পরিবেশে লোকজন অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সিটি করপোরেশন বিকল্প থাকার ব্যবস্থা না করে বস্তি উচ্ছেদ করতে পারে না। তাই অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ কিছুটা সময় সাপেক্ষ বিষয়।
রেলওয়ে খুলনা ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, অচিরেই দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিপূর্বে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে রেলের বিশাল জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেললাইন

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২ ডিসেম্বর, ২০২১
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১৮ নভেম্বর, ২০২০
২৩ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ