পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : মেডিক্যাল ডিভাইস বা সার্জিক্যাল পণ্য প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমদানিকৃত সব ধরণের মেডিক্যাল ডিভাইস খালাস বন্ধ করে দিয়েছে কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকার পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে অনেক পণ্য। জানা গেছে, আগে ৯ ধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস দেখভাল করতো ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গত বছর ওষুধ প্রশাসন মেডিক্যাল ডিভাইসের একটি গাইডলাইন তৈরি করে। এতে প্রায় চার হাজারের অধিক পণ্য আওতাভুক্ত করা হয়। এগুলোকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোনো পণ্য যাতে বন্দর থেকে খালাস করতে না পারে, সেজন্য গত ১৩ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক। এতে ১৫ নভেম্বর থেকে দেশের সবগুলো বন্দরে মেডিক্যাল ডিভাইস, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রি-এজেন্ট ও সার্জিক্যাল পণ্য আটকে দেয় কাস্টমস। এতে ২ থেকে ৮ সেন্টিমিটার তাপমাত্রায় রাখার নিয়ম আছে যেসব রি-এজেন্ট তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। যার ক্ষতি প্রায় শত কোটি টাকা। একই সঙ্গে অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুম্যান্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপম্যান্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারর্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা শাখার সভাপতি জাভেদ আহমেদ বলেন, দেশের চট্রগ্রাম, বেনাপোল, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে প্রায় হাজার কোটি টাকার মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, রি-এজেন্ট ও সার্জিক্যাল পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রি-এজেন্টসহ প্রায় শতকোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এসব পণ্য বন্দর থেকে ছাড় করাতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখন দেশব্যাপী দোকানপাট বন্ধ রাখা ছাড়া আন্দোলনের অন্য কোনো পথ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে বলে জানান জাভেদ আহমেদ। এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে সার্জিক্যাল, প্যাথলজি, সাইন্টিফিক এবং মেডিক্যাল ডিভাইসের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেশে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানোলা, ইনফিউশন সেট, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, সাকসেশন ক্যাথেটার ও ডিসপোজেবল ফিডিং টিউব আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে সংকট বেড়ে গিয়ে দামও বেড়েছে অনেকখানি। মাত্র ৩০ টাকার ফিডিং টিউব বর্তমানে বাজারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সার্জিক্যাল পণ্য আমদানিকারকরা জানান, সরকার একদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির শ্লোগান দিচ্ছে, অপরদিকে আমদানিযোগ্য পণ্য দেশে আনতে বাধা দেবে, এটি চলতে পারে না। যদিও এসব এসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে বলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে তাদের জানানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গাইডলাইন তৈরির সময় ব্যবসায়ীদের কোনো প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে অভিজ্ঞদেরও রাখা হয়নি। শুধু কয়েকজন চিকিৎসক ও ওষুধ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে গঠিত কমিটি গাইডলাইনটি তৈরি করছে। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও দাবি ছিল, ডিভাইসগুলোতে নীতিমালার আওতার আনার। কিন্তু ওষুধ প্রশাসন তাদেরকে পাশ কাটিয়ে গাইডলাইন তৈরি করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরচালক রুহুল আমিন বলেন, দেশের আমদানিকৃত মেডিক্যাল ডিভাইসের মান দেখার মতো কোনো সংস্থা ছিল না। দেশের মানুষকে মানসম্মত মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দেশের অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। যাতে মানুষ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পায়। এজন্য জীবন রক্ষাকারী মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহারে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, সারা পৃথিবীতে মেডিক্যাল ডিভাইস দেখভাল করার গাইডলাইন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশে এই বিষয়টির দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসনের ওপর দেয়া হয়।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানিতে অনুমোদন থাকলেও জেএমআই কোম্পানির স্বার্থরক্ষার্থে এসব মেডিক্যাল ডিভাইস দেশে আনতে দিচ্ছে না। এ ছাড়া সম্প্রতি অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি করা যাবে না বলেও দেশের সবগুলো বন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা অনুমোদিত পণ্যও অমদানি করতে পারছে না। ফলে তরা আন্দোলনের পথ বেছে নিচ্ছেন।
সার্জিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানান, মেডিক্যাল ডিভাইস খালাসের বিষয় নিয়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) গিয়েছিলেন। সেখান ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের শিগগিরই একটি ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইস বিষয়ক গ্যাজেট প্রকাশের কথা রয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে কয়েকদিনের সময় চেয়েছে এনবিআর। অথচ প্রচলিত আমদানি নীতি আদেশেও মেডিক্যাল ডিভাইস আনার বিষয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল, ইক্যুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসাসিয়েশেন, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বণিক সমিতি, ডায়াগনোস্টিক রিএজেন্ট অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কার্ডিও ভাসকুলার ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড ডিভাইস ইমপোর্টস এসোসিয়েশন এবং সমগ্র বাংলাদেশের মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যববসায়ীবৃন্দ ওষুধ প্রশাসনের হয়রানি থেকে মুক্তির দাবিতে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।