পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। দিনে কুকুরের সামনে গিয়ে চলতে গিয়ে কেউ কেউ হচ্ছেন আক্রান্ত। রাতে কুকুরের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। প্রজনন মৌসুমে পাগলা কুকুরের কামড়ে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসের আগে থেকে এক বছরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় কুকুরের কামড় খেয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এ হিসেবে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে দু’শ’ মানুষ কুকুরে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার এ পরিসংখ্যান আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। কুকুর কামড়ালে মানবদেহে র্যাবিস, টক্সো প্লাজমোসিস ও কালাজ্বরের মতো ভয়াবহ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীরা এ পরিস্থিতির জন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশন রাজধানীবাসীদেরকে অনেকটাই নিরাপত্তাহীন করে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ভেটেনারি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এটি চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
মিরপুরের বাসিন্দা একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শুরু করে ১২ নম্বর সেকশন পর্যন্ত প্রধান সড়কের উপর শত শত কুকুর ঘোরাফেরা করে। প্রধান সড়ক বাদে প্রতিটি এলাকার অলিগলিতে অসংখ্য কুকুরের আনাগোনা। তিনি বলেন, এখন প্রজনন মৌসুমে কুকুরগুলো উগ্র থাকে। যখন তখন তেড়ে আসে। এর মধ্যে স্কুলে যাওয়ার পথে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী কুকুরের কামড় খেয়েছে বলে তিনি জানান। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শামীম চৌধুরী বলেন, সকালে বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার পথে দুটো ডাস্টবিন পড়ে রাস্তার পাশে। ডাস্টবিনের চারদিকে কুকুরের ভিড়। বাচ্চারা কুকুর দেখে ভয় পায়। অনেক সময় কুকুর একটু শব্দ করলেই শিশুরা ভয়ে দৌড় দেয়। এভাবে দৌড় দেয়ার কারণে গত সপ্তাহে দুই শিশুকে কুকুর কামড়িছে বলে শুনেছি। ওই ব্যবসায়ী বলেন, এই ঘটনা শোনার পর আমি নিজেই বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন কেন ঘুমিয়ে আছে বুঝি না। তারা তো নাগরিকদের নিরাপত্তা দিবে। এভাবে শত শত কুকুর রাস্তায় ঘুরাঘুরি করলে মানুষ নির্বিঘেœ চলবে কীভাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে ব্যাপক কুকুর নিধন অভিযান পরিচালিত অব্যাহত ছিল। ওই বছর ‘অভয়ারণ্য’ নামক এক এনজিও কুকুর মারাকে প্রাণী হত্যা ও পরিবেশবিরোধী বলে প্রচারণা শুরু করে। এরপর কুকুর নিধনের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে একটি রিট করার পর কুকুর নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কুকুর মারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দেয়। শুরু হয় বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান। ২০১২ সালের মার্চ মাসে অভয়ারণ্য নামক সেই এনজিও’র সাথেই চুক্তি করে দুই সিটি কর্পোরেশন। চুক্তির শর্ত ছিল, এনজিওটি কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যাত্বকরণ ও টিকাদানের মাধ্যমে দুই সিটি কর্পোরেশনকে কুকুরমুক্ত করবে। চুক্তি অনুযায়ী, রাজধানীর রাস্তাঘাট থেকে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো বসিলা এলাকায় অভয়ারণ্যের নিজস্ব ক্লিনিকে নিয়ে বন্ধ্যা করে ছেড়ে দেয়ার কথা। যাতে করে কুকুরের বংশবিস্তার রোধ করা যায়। এ কাজের জন্য অভয়ারণ্যকে বিনামূল্যে ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং অর্থ দেয় সরকার। এ বাবদ দুই সিটি কর্পোরেশন দৈনিক খরচের ভিত্তিতে প্রতি মাসে অভয়ারণ্যকে ৮০ হাজার টাকা করে প্রদান করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, সরকারের একজন প্রভাবশালীর আত্মীয় হওয়ায় অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের পাত্তাই দেন না। এ কারণে বছরখানেক ধরে সিটি কর্পোরেশনও তাদের অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ঢাকা শহরে এখন কুকুরের সংখ্যা কত? সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এই হিসাব আছে স্বাস্থ্য বিভাগে। তবে সেখানেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানান একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ৫ থেকে ৬ হাজার পালিত কুকুর আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ঢাকায় বর্তমানে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। তবে বিগত চার বছর ধরে কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় এই সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকেরই ধারণা। অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে ২০১০-১১ অর্থ-বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৮৩টি বেওয়ারিশ কুকুর মারা হয়। আর ২০০৫-০৬ অর্থ-বছর থেকে ২০০৯-১০ অর্থ-বছর পর্যন্ত বছরে ২৩ হাজার ২৯০টি বেওয়ারিশ কুকুর মারা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কুকুর মারার পেছনে বছরে বরাদ্দ ছিল প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা। কুকুর ধরার জন্য (ডিসিসি) লোহার ফাঁস (ক্যাচার) ব্যবহার করা হতো। এরপর হাতে ধরে বিষাক্ত ইনজেকশন ম্যাগনেসিয়াম সালফেট পুশ করা হতো। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা চাইলেই নগরবাসীকে কুকুরের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে পারছি না। যে হারে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে তাতে এগুলোকে বন্ধ্যাত্ব করেও আর লাভ হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোকে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।