নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়তে চান সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকাররা। এ লক্ষ্যে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে আজ স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হবে নেপাল-বাংলাদেশ ফাইনাল ম্যাচটি। এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের একমাত্র লক্ষ্য জয় পাওয়া। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় কাঠমান্ডুতে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। একই কথা বলেন নেপালের কোচ কুমার থাপা এবং অধিনায়ক আঞ্জিলা থুম্বাপু’ও।
নারী সাফের এবারের আসরে দূর্দান্ত বাংলাদেশ দল। গ্রæপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত তাদের খেলায় দেখা গেছে মুন্সিয়ানার ছাপ। ‘এ’ গ্রæপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়। শেষ ম্যাচে সাবিনারা সাফের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রæপ সেরা হয়েই সেমিফাইনালে পা রাখে। শেষ চারের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করে দ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনাল নাম লেখায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ‘বি’ গ্রæপের প্রথম ম্যাচে নেপাল ৪-০ ব্যবধানে ভুটানকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রæপ সেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। আর সেমিফাইনালে তারা ১-০ গোলে ভারত হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশের সঙ্গি হয়।
বলা যায় এবারের সাফে একের পর এক ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের মেয়েরা। গ্রæপ পর্বে ভারতকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে নতুন ইতিহাস লিখেছিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের ইতিহাস গড়া ম্যাচ জিতে ভারতকে বিদায় করে দেয় স্বাগতিক নেপাল। পাঁচ আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিদায়ে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পাচ্ছে সাফ। দু’দলই ভারতকে হারিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কে জিতবে আজ নারী শিরোপা, বাংলাদেশ না নেপাল? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আর কয়েকঘন্টা পরেই।
সাফে আগের ইতিহাস অবশ্য নেপালের পক্ষেই। তাদের বিপক্ষে আটবারের মুখোমুখিতে ৬ হার ও ২ ড্র বাংলাদেশের। ২০১০ সালে ঢাকার কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের ম্যাচে নেপাল ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। একই বছর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সাবিনাদের হার ৩-০ গোলে। ২০১৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ১-০, দু’বছর পর শিলংয়ে এসএ গেমসে ৩-০ এবং ২০১৯ সালে নেপালের বিরাটনগরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও একই ব্যবধানের হার ছিল সাবিনাদের। ২০১৮ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক বাছাই পর্বের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। এছাড়া ঢাকায় অনুষ্ঠিত দু’টি প্রীতি ম্যাচের একটি গোলশূন্য ড্র হলেও অন্যটিতে সফরকারীদের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
তবে অতীত ইতিহাস ঘাটতে নারাজ বাংলাদেশের কোচ ছোটন। তাই তো কাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অতীতে যা ঘটেছে তা ভুলে যেতেই হবে। কারণ এবারের আসরে সাবিনারা দুর্দান্ত, অপরাজেয়। প্রত্যেকটি ম্যাচেই নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে তারা। সবাই তা দেখেছেন। তাই এবার আমরা হারতে চাই না। এতদিনের অধরা শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরতে চাই।’ নিজ দল সম্পর্কে ছোটন বলেন, ‘মানসিক ও শারীরিকভাবে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ফিট আছে। নেপাল শক্তিশালী দল হওয়ায় প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখবেন দর্শকরা।’ তিনি যোগ করেন,‘সেমিফাইনালে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার দর্শক পেয়েছিল নেপাল দল। ফাইনালে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে দ্বিগুণে। এতে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। কারণ এর আগেও মেয়েরা নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে ম্যাচে খেলে ভাল করেছে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানসিকভাবে। মেয়েরা লড়তে প্রস্তুত। গোলরক্ষক, ডিফেন্ডিং পজিশনে যারা রয়েছে তারাও ভাল করছে। আমাদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়তে। সাবিনারা দীর্ঘ দিন একসঙ্গে আছে। দীর্ঘদিন পরিশ্রম করছে। তাদের যে মনোবল, একাগ্রতা, ইচ্ছাশক্তি ও বুঝাপড়া এগুলো বড় শক্তি হবে আমাদের। ভালো ফুটবল খেলবো ও জিতবো। একটি আবেগ পূরণের দিন হবে।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘আমি প্লেয়ারদেরকে একটি কথাই বলেছি, ফাইনাল জিততে পারলে যে কোন কিছুই হতে পারে। তারা এখন বড় হয়েছে। এখন গেম ধরতেও পারে। আমাদের সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আশাকরি সতীর্থরা নিজেদের সেরাটা মাঠে ঢেলে দিয়ে সাফল্য তুলে আনবে।’
নেপালের কোচ কুমার থাপাও মানছেন সাফের ইতিহাসের দিন আজ। তিনি বলেন, ‘নতুন একটি ইতিহাসের সামনে আমরা দাড়িয়ে। কাল (আজ) সাফের ইতিহাসে নতুন গল্প লেখা হবে। এটা দু’দলের জন্যই। তাই আমরা সেই সুযোগ নষ্ট করতে চাই না। আমরা ভাল ফুটবল খেলে সেই গল্প লিখতে চাই। আমাদের সুযোগ ৯০ মিনিট। আমরা স্বাগতিক। কাপ এখানেই আছে, এখানেই রেখে দিতে চাই। আমি খুশী মেয়েদের সেমিফাইনালের খেলা দেখে। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ট্রফি রাখতে চেষ্টা করবো।’ অধিনায়ক আঞ্জিলা থুম্বাপু বলেন, ‘প্রথমবার ভারতের সঙ্গে জিতেছি। আমরা উপভোগ করেছি। তাই মুখে কথা বলতে চাই না। মাঠের খেলাতেই প্রমাণ করতে চাই। বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের ঘরেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি রাখতে চাই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।