গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
লড়াইটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুরোনো হয়েই যাচ্ছে। নগর সেবক হয়ে ঢাকাবাসীর জন্য সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম। আজও চাই। প্রশ্ন হল, আমি কী করতে পারবো ? কেন লড়াই করতে চাই ? কীসের লড়াই ?
ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আদম তমিজী হক এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেন। তার নিবন্ধটি তুলে ধরা হল:
সত্যি বলতে লড়াই করতে চাই শহরটাকে সুসজ্জিত করার দৃষ্টান্তে যেয়ে। মন তো খারাপ হয়েই যায়। যখন দেখি, প্রতিবছরের মতো গেল বছরেও বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের র্যাংকিং প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) জানিয়ে দিল যে, বাসযোগ্য শহরের তালিকায় তলানিতে রয়েছে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা। এমন তথ্য কষ্ট দেয়। বিভিন্ন দেশের শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে সম্প্রতি ১৪০টি শহরের র্যাংকিং প্রকাশ করা হয় এবং এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৭ নম্বরে !
বাসযোগ্য শহর এবং একটি আধুনিক শহর--- নিশ্চিতাকারে দুইটি পৃথক বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। তাহলে দেখাই যাচ্ছে যে, ঢাকা বাসযোগ্য অবস্থানেই নেই, আধুনিক নগর করা তো বেশ দূরে। কিন্তু, উত্তরণের রাস্তা খুঁজে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো কিনা ?
সূত্র বলছে, ঢাকাকে বাসযোগ্য ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রক্রিয়াধীন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) সাতটি নতুন কর্মকৌশল যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো যুক্ত হলে নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, উন্নত বাসস্থান, প্রশস্ত সড়ক, উন্মুক্ত স্থান, বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধাদি---- যেমন, ভূমি পুনরুন্নয়ন, ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়ন স্বত্ব প্রতিস্থাপন পন্থা (টিডিআর), ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতি সাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং এর মত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তবে, উল্লেখযোগ্য দিক হল, এমন উদ্যোগের পেছনে রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সিটি কর্পোরেশন নয়। রাজউকের আওতাধীন এলাকা ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর জন্য বর্তমান ড্যাপের গেজেট হয় ২০১০ সালে। মেয়াদ ছিল ৫ বছর। এরপর সংশোধিত আরেকটি ড্যাপ করার উদ্যোগ নেয় রাজউক। নতুন ড্যাপের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
অন্যদিকে ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলর হতে চাওয়া মানুষগুলো ভোটের আগে-পরে বাসযোগ্য করে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করার অভ্যাসে থাকেন। তেমন উদাহরণে প্রায়ই সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেসব পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যায় না।ফলশ্রুতিতে বাসযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে তাঁরা প্রাথমিক লড়াইয়েই হেরে যাচ্ছে। আধুনিক শহর হওয়া তো যোজন যোজন দূরেই থেকে যাচ্ছে। অলীক কল্পনার মত করে।
ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণ টেকসই নয়----এমন উক্তিকে গুরত্ব দিতে চাইলে দেখা যাচ্ছে যে, পাবলিক পরিবহণ ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা ঢাকায় নেই। অর্থাৎ ডিসিপ্লিন নেই।
প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা, জনগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন না মানার পাশাপাশি সুষ্ঠু গণপরিবহণ ব্যবস্থার অভাবে ঢাকার রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আর যানজটের কারণে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ। পথচারীদের চলাচলের জন্য সামান্যতম যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন সেটুকুও নেই। যতটুকু আছে সেখানেও হকার, পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের ‘ম্যানেজ’ করে বসানো হয় দোকানপাট। একশ্রেণির মানুষের সীমাহীন অর্থলিন্সা রাজধানী ঢাকাকে ভয়াবহ ইট-কাঠের বস্তিতে পরিণত করছে--- এমন মত নগর বিশ্লেষকদের।
ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এখন অত্যন্ত জরুরি বিষয় হয়ে পড়েছে। এমন যুক্তির পেছনে ইতিবাচক সমর্থন রয়েছে আমার। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত পরিবহনে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতকে 'না' বলার মধ্য দিয়ে ভাল সিদ্ধান্ত এসেছে। একটি শহরকে পরিকল্পনা মাফিক সাজিয়ে শ্রেষ্ঠ করার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে শহরের জনগোষ্ঠিকেও সচেতন করার দিক রয়েছে। যেমন, পথচারী হয়ে পারাপার যত্রতত্র করার বাজে অভ্যাস তাদেরকে পরিত্যাগ করতে হবে। আত্মসচেতনায় বিভোরহয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার বদঅভ্যাস ছাড়তে হবে। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের প্রকৃতিমুখী হয়ে বাড়ির ছাদে ও লনে গাছ লাগানোর অভ্যাসে থাকতে হবে। আমাদের দেশের রাজশাহী শহর কিভাবে বদলে গেল ? শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশন দ্বারা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ওই নগরের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তা করে দেখাতে পেরেছেন। তিনি পারলে আমরা কেন পারব না ?
শহুরে সভ্যতাকে আলিঙ্গন করতে চাইলে অতি অবশ্যই রাষ্ট্রের সৃষ্ট 'মেয়র' পদ কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার সুযোগ আছে। রাজধানীর দুয়েকটি এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন করে প্রাণের শহর ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করা যাবে না। এটা শুধু অন্ধকারে একটু আলো হয়েই থাকবে, পুরো অন্ধকার দূর হবে না। প্রয়োজন এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন। শুধুমাত্র রাজস্ব আদায় করব, কিন্তু নাগরিক সেবা দিতে পারব না---এমন উদাহরণ কি সাক্ষ্য দেয় ? পুরো শহর মশার আতংকে থাকবে, একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় পৌঁছে যাবে, এভাবে আর কতদিন ? এইজন্যই আমরা ওদের তালিকার তলানিতে রয়েছি। খুবই স্পষ্ট করে আগামী দিনে নগরের জন্য কি কি করতে চাই, তা বলা আরম্ভ করব। বলা দরকার। বিশ্বাস করি, রাজধানী ঢাকার জীর্ণ রুপ বদলিয়ে দিয়ে এই বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর হিসাবে দাঁড় হয়ে যাওয়া এখনো সম্ভব। ঢাকা দক্ষিণ লড়াই করছে। ঢাকা উত্তরকেও পারতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।