নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ষষ্ঠ আসরের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে সেরা হয়েই সেমিফাইনালে জায়গা পেলেন সাবিনা খাতুনরা। গতকাল সন্ধ্যায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে টানা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে হারায় লাল-সবুজরা। বিজয়ী দলের হয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না দু’টি ও কৃষ্ণা রানী সরকার একটি গোল করেন।
দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট সাফে বরাবরই সেরা ভারত। তারা আগের সবগুলো আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। সেই ভারতই এবার সাফের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে নাস্তানাবুদ হলো। সাফল্যের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও কাল সাবিনাদের সামনে পাত্তাই পায়নি ভারতীয়রা। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কাঠমান্ডু ছাড়িয়ে যেন উৎবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ল গোটা বাংলাদেশে। যে কোন ঘরণার ফুটবলে ভারতকে প্রথমবার হারানোর আনন্দে আত্মহারা দেশবাসী। ম্যাচ শেষে সেই আনন্দের দেখা মিললো দশরত রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেও। ফরোয়ার্ড রিতুপর্ণা চাকমার আহবানে আনন্দ করার জন্য ডাগআউটে থাকা বাংলাদেশের ফুটবলাররা ছুটে গেলেন মাঠে। কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, খেলোয়াড়দের সেই উৎসব ড্রেসিং রুমে এসেও থামেনি। সাবিনা, কৃষ্ণ, শামসুন নাহাররা জড়িয়ে ধরেন একে অন্যকে। এমনটা আনন্দের একটা বিশেষ কারণও যে আছে। আর তা হলো ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরী করলেন সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকাররা। গত এক যুগেও যা হয়নি, কাঠমান্ডুতে তা করে দেখালেন সাবিনা-স্বপ্নারা। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো হারিয়েছে ভারতকে। এই অর্জনে গর্বিত দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।
সব মিলিয়ে আগের দশবারের মোকাবেলায় ভারতকে একবারও হারাতে পারেনি লাল-সবুজরা। যার মধ্যে সাফে ছয়বার মুখোমুখিতে মাত্র একবারই ভারতকে রুখে দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে সাফের গ্রæপ পর্বে গোলশূণ্য ড্রই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের সেরা সাফল্য। আগের ম্যাচে সাবিনারা পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জেতায় গ্রæপের শেষ ম্যাচে ভারতের সঙ্গে তাদের লড়াই দেখতে দশরথ স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিলেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা পুর্ব ও পশ্চিম দুই গ্যালারিতে বসে করতালির মাধ্যমে নিজ দেশের ফুটবলারদের সমর্থন জুগিয়েছেন। ম্যাচের পুরো সময়জুড়েই নেপালের দর্শকরা সমর্থন দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। আগের দিন শ্রীলঙ্কায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা। কিশোরদের সেই হারের প্রতিশোধ নিলেন সাবিনারা। কাল দশরথে তারা কাঁদিয়েছেন ভারত জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের। এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ছন্দময় ফুটবল খেলতে থাকেন স্বপ্না-কৃষ্ণা-মারিয়া মান্ডারা। ম্যাচের ৯ মিনিটে সানজিদার ক্রস থেকে সাবিনার শট। ধাক্কা লেগে পড়ে যান ভারতের গোলরক্ষক অদিতি চৌহান। বল জালে প্রবেশ করলেও রেফারির ফাউলের নির্দেশে গোল বাতিল হয়। মিনিট তিনেক পরই গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ১২ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন (১-০)। এর ঠিক দশ মিনিট পরেই দলের সিনিয়র খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানীর গোলে ব্যবধান বাড়ায় লাল-সবুজরা। ২২ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে শামসুন নাহারের থ্রোয়িংয়ে কৃষ্ণা রিসিভ করেন। সেখান থেকে বল পান স্বপ্না। পরে স্বপ্নার কাছ থেকে ফের বল পেয়ে দুর্দান্ত এক শটে ভারতীয় গোলরক্ষক অদিতি চৌহানকে পরাস্ত করেন করেন কৃষ্ণা (২-০)। এ ম্যাচে গোলবারের নীচে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ভারতের প্রতিটি আক্রমণ তিনি রুখে দিয়েছেন বিশ^স্ততার সঙ্গে। ৪৯ মিনিটে বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনাকে লাথি মেরে ফেলে দেন ভারতের এক ফরোয়ার্ড। কিন্তু তাকে কোন প্রকার সতর্ক করেননি রেফারি। ৫৩ মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় সাবিনা বাহিনী। এসময় অধিনায়কের ক্রস থেকে বল পেয়ে স্বপ্না শট নিলে ভারতের গোলরক্ষক অদিতির হাতের ফাঁক ফসকে তা জালে আশ্রয় নেয় (৩-০)। তবে ৬৪ মিনিটে সিরাত জাহান স্বপ্নাকে উঠিয়ে তার জায়গায় নামানো হয় রিতু পর্ণা চাকমাকে।
এ ম্যাচে পুরো মাঠ জুড়ে খেলেছেন মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা। সতীর্থদের সহযোগিতা করেছেন বল পেতে। প্রতিপক্ষের বিপদ সীমানায় বল নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে ফরোয়ার্ডদের পায়ে বল বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার কখনো নীচে নেমে ভারতের ফরোয়ার্ডদের আক্রমণ প্রতিহত করেছেন তিনি।
ম্যাচের বাকি সময় আর কোন গোল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ৩-০ ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এই জয়ে ‘এ’ গ্রæপে তিন ম্যাচের সবটিতে জিতে ৯ পয়েন্ট পেয়ে গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ৬ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ভারত। ভারতকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল বাংলাদেশের। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম সেমিফাইনালে সাবিনাদের প্রতিপক্ষ ‘বি’ গ্রæপের রানার্সআপ অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভুটান। একই দিন দ্বিতীয় সেমিতে ‘বি’ গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক নেপালের প্রতিপক্ষ ভারত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।