Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্সেল প্রতারণায় কোটিপতি লস্কর, গ্রেপ্তার এড়াতে ব্যবহার করত জ্যামার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:১৮ পিএম

 

পার্সেল প্রতারণায় জড়িত দেশি ও বিদেশি প্রতারক চক্রের বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্করসহ এগারজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

পুলিশ বলছে, প্রতারকরা প্রতারণায় ব্যবহারের জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য একাউন্ট খোলে। সে সব একাউন্টের কার্ড এবং চেক বই নিজেদের কাছে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে। ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভাগবাটোয়ারার সম্পূর্ণ কাজ গ্রেপ্তার মো. বিপ্লব লস্কর নিজে বিদেশী নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার বাংলাদেশী সহযোগীদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি গাড়িতে ও তার সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। কয়েকবছর আগে কুলি থাকলেও বর্তমানে প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছেন বিপ্লব লস্কর। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট।


গ্রেপ্তাররা হলো- গ্রেপ্তাররা হলেন- বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪), তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিক (৩২)।


গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, ২৮টি মোবাইল ফোন, ১ টি কম্পিউটার, ৪৯১ টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বহি, ১৪১৫টি চেকের পাতা, ৩টি ওয়্যারলেস পকেট রাউটার, ১ টি প্রাইভেটকার, ৩ লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা, ১১ লাখ ৩৫ হাজার নগদ টাকা, প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রীনশট ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ২৬৩ টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।


সোমবার রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।


মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


গ্রেপ্তারদের অপরাধের কৌশল সর্ম্পকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারা দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষের হোয়াটঅ্যাপ নম্বর, ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহ করে ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভীসহ বিভিন্ন পরিচয় ধারণ করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ভিকটিমের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর এসব দেশি-বিদেশি প্রতারকরা দামি উপহার, স্বর্ণালংকার ও বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা/ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে লোভনীয় ছবি পাঠায়। পরে পার্সেল পাঠানোর নামে ভুয়া পার্সেলের ও রিসিটের ছবি পাঠায়।


তিনি আরও বলেন, প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতারকরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নম্বর থেকে প্রতারিত ব্যক্তিকে কল দিয়ে নিজেকে কাস্টমস্ অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায়, 'কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস' এ আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। কাস্টমস হাউজ থেকে তা ছাড়াতে ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। প্রতারকরা টাকা পরিশোধের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রতারিত ব্যক্তিকে পাঠায়।


ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রতারিত ব্যক্তি বিদেশী বন্ধুর পাঠানো পার্সেল পাওয়ার আশায় কলিং বিভাগের কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন করা বাংলাদেশি প্রতারকের দাবী করা টাকা ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠানো ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধের পর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী প্রতারক পুনরায় ফোন করে জানায়, তার বিদেশী বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাই পার্সেল ছাড়াতে আরো বেশি অংকের টাকা প্রয়োজন।

 

ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারদের দাবী করা টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রতারকের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে দাবী করা টাকা পূনরায় পাঠালে ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরো বড় অংকের টাকা দাবী করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবী করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার সাথে সাথে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ব্লক করে দেয়।


নুসরাতের মতো অজ্ঞাতনামা অন্যান্য বাংলাদেশীদের সহায়তায় প্রতারকরা ভিকটিমদের কল করে প্রতারণা করে থাকে।


পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতারকরা প্রতারণায় ব্যবহারের জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য একাউন্ট খোলে। সে সব একাউন্টের কার্ড এবং চেক বই নিজেদের হেফাজতে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে। উক্ত ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভাগবাটোয়ারার সম্পূর্ণ কাজ গ্রেপ্তার মো. বিপ্লব লস্কর নিজে বিদেশী নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার বাংলাদেশী সহযোগীদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

 

বিদেশী সুন্দরী নারীর ছবি দিয়ে খোলা ফেসবুক একাউন্টের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়ে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক স্থাপনে সতর্ক থাকতে বলেন গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা।

 

ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির মিরপুর মডেল থানা ও রূপনগর থানায় মামলা হয়েছে। তাদের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকল সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ