নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এমন একটা ম্যাচের অমন শেষ, ব্যাপারটিকে অ্যান্টিক্লাইমেটিক বলাই যায়! মেহেদী হাসানের বলে আসিতা ফার্নান্ডো ২ রান নেওয়ার পর স্কোর টাই হওয়ার কথা ছিল, অথচ একটু পর উল্লাসে মাতল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ অফ স্পিনার যে আরেকবার পপিং ক্রিজের ভেতরে রাখতে পারেননি পা।
ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৪টি নো বল, সঙ্গে ৮টি ওয়াইড। অথচ শ্রীলঙ্কা নো ও ওয়াইড থেকে রানই দেয়নি কোনো। নো ও ওয়াইড থেকে শুধু অতিরিক্ত ১২টি রান দেওয়া নয়, বাংলাদেশকে করতে হয়েছে অতিরিক্ত ২ ওভারও। এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সেগুলোও। কেননা স্লে ওভার রেটের কারণে পাওয়া অন ফিল্ড পেনাল্টিতে শেষ ২ ওভার তিরিশ গজের বোইরে ৫ জনের জায়গায় একজন কম নিয়ে ফিল্ডিং করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলছেন, চাপের মুহূর্তে এখনো কতটা ভেঙে পড়তে পারে বাংলাদেশ দল, সেটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি আরেকবার দেখিয়ে দিল। স্কিলের সঙ্গে এদিকেও উন্নতি করতে হবে বলেও ধারণা তার।
শুধু শেষের ওই নো নয়, এর আগে কুশল মেন্ডিস আউট হয়ে ফিরে যেতে নিয়েও যাননি মেহেদী নো বল করাতে। স্পিনার হয়েও এমন নো বল করাকে ‘ক্রাইম’ বলছেন সাকিব, ‘(নো বল) টার্নিং পয়েন্ট তো হতেই পারে, ব্যাটসম্যান যখন আউট হয়ে গেছে। স্পিনারের নো বল করা অবশ্যই ক্রাইম। সাধারণত আমাদের স্পিনাররা এভাবে নো বল করে না।’ তবে অমন পরিস্থিতিতে নো হয়ে গেছে চাপের কারণেই, মনে করেন সাকিব, ‘আসলে বোঝা গেল আমরা চাপে এখনো কতটা ভেঙে পড়তে পারি। এখানে উন্নতি করতে হবে। স্কিলের উন্নতির ব্যাপার আছে অবশ্যই। তবে চাপ এলেই ভেঙে পড়ি, চাপের মুহূর্ত এলেই হেরে যাই আমরা। এমন ৫০ শতাংশ ম্যাচও জিতলেও কিন্তু আমাদের রেকর্ড ভালো থাকত, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে।’
১৮তম ওভারে দাসুন শানাকা আউট হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচটা ঝুঁকে পড়েছিল বাংলাদেশের দিকে। তবে অভিষিক্ত ইবাদত হোসেন এসে দেন ১৭ রান। প্রথম ২ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া এ পেসার পরের ২ ওভারে গুনেছেন ৩৮ রান! অভিজ্ঞতার অভাবেই এমন হয়েছে, মনে করেন সাকিব, ‘এমন চাপের ম্যাচ এর আগে খেলেনি। এর আগে টেস্ট খেলেছে, ওয়ানডে একটি-দুটির বেশি খেলেনি। কিন্তু এমন চাপের পরিস্থিতিতে পড়েছে আজই প্রথম। অনেক কিছু শেখার আছে ওর। প্রথম ২ ওভারে যেভাবে খেলেছে, আমাদের ম্যাচে রেখেছিল সে। আমরা ভেবেছিলাম সে-ই আমাদের ম্যাচে সেরা বোলার হবে। প্রত্যাশা করাই যায়, ছন্দ ভালো থাকবে, ইতিবাচক থাকবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়নি। তবে আমার ধারণা, এ ম্যাচ দিয়ে অনেক কিছু শিখতে পারবে সে।’
ডেথ বোলিংয়ে উন্নতির কথাও বারবার করেই বলেছেন সাকিব। আফগানিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পরও পার হতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে কোনো কিছুর জন্যই তাড়াহুড়া করতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘নতুন করে অধিনায়কত্ব পেলাম। (শ্রীধরন) শ্রীরামের জন্যও প্রথম ম্যাচ। নতুন করে শুরু করতে গেলে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। এত সহজ না। যদি কয়েকটা ম্যাচ, ৪-৫টা সিরিজ পেতাম, তাহলে অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে পারতাম। কিছু ঠিক হবে, কিছু ভুল হবে।’ তবে আগের সিরিজগুলো থেকে উন্নতি হয়েছে, এমন দাবি তার, ‘আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। সেদিকেই এগোচ্ছি। ধীরে ধীরে যেতে চাই। প্রথম দুই ম্যাচের অ্যাটিটিউড, চিন্তাভাবনা... প্রথম ম্যাচের ব্যাটিংয়ের কথা বলতে পারেন, তবে উইকেটটাই অমন ছিল। হয়তো ১০-১৫ রান বেশি করতে পারলে ভালো হতো। অন্তত সর্বশেষ ৩-৪টি সিরিজের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।’
সত্যিই কি উন্নতি হয়েছে? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমস্যাগুলোর সবচাইতে প্রথমেই যেটি চোখে পড়েছে- মন্থর ব্যাটিং। এ প্রসঙ্গটা এলেই সাকিবের একটা কথা খুব মনে পড়ে। গত বছর বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল এমন উইকেটে খেলেছে, যেখানে খেললে ‘ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে’ বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সাকিব। কাগজে কলমে এখনো কারও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ না হলেও কাছাকাছি পর্যায়ে এসেছে ঠিকই। মুশফিকুর রহিমের কথাই ধরুন না। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মুশফিক ৪৪ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন। ১২০ স্ট্রাইক রেট ও ২০ গড়ে রান করেছেন ৭৬২। বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি মান ও উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় মুশফিকের পারফরম্যান্স ভালোই ছিল। গত দুই বছরে স্ট্রাইকরেট কমে এসেছে ৯৩-এ, গড় ২১। শুধু মুশফিক নন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাঈম- প্রত্যেকের স্ট্রাইক রেটে পড়েছে ভাটার টান। মরা উইকেটে খেলার আগে লিটনের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪০ এর আশপাশে। সেটি এখন ১২০ এর ঘরে এসে ঠেকেছে। সৌম্য আগে থেকেই মন্থর উইকেটের দুর্বল ব্যাটসম্যান। সেবার এতটাই মন্থর উইকেটে খেলানো হয়েছে যে, ব্যাটিং ছন্দটাই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম! অথচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠের সেই সিরিজের আগে সৌম্য ছিলেন জিম্বাবুয়ে সফরের সেরা ক্রিকেটার। এখন সেই সৌম্য জাতীয় দলে নেই। নাঈমও বাদ পড়েছেন। কিন্তু আবার ফিরেছেন দলে চোটের মিছিলে। এনামুল হকও ২০১৫ সালের পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন বাকিদের ব্যর্থতায়।
একটা দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনো বিশেষজ্ঞ ওপেনার নেই, ভাবা যায়! টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন তামিম ইকবাল, লিটনের চোট- আর তাতেই ওপেনিং দুর্ভিক্ষে দল! এশিয়া কাপে তাই জোড়াতালি দিয়ে আনা হয়েছিল এনামুল বিজয়-নাঈম শেখ জুটি, তারাও ব্যর্থ। এক এক করে ওপেনার হারিয়ে বাংলাদেশ যখন কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না, তখন সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে উদ্বোধনে খেলায়। ফাটকা লেগেও যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দল পাওয়ার প্লেতে পেয়েছে ৫৫ রান। তারপরও এদিন সাকিব যেমন হতাশা থেকেই বলছিলেন এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনের কারণ, ‘মিরাজ সব সময় ওপেনিংয়ের চিন্তায় ছিল, যেহেতু আমরা তেমন কার্যকর কাউকে পাচ্ছিলাম না।’
এ তো গেল ব্যাটিং দৈন্যতার কথা। বাজে উইকেটে খেলে ঘরের মাঠে মুস্তাফিজুর রহমানের রেকর্ড হয়েছে চোখ কপালে তোলার মতো। গত দুই বছর ঘরের মাঠে তার ইকোনমি ৫, গড় ১২। আর দেশের বাইরে ইকোনমি ওভার প্রতি ১০ এর কাছাকাছি, গড় ২৫। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ইকোনমি ৯ এর ঘরে হলেও গড় ৪৯! বাজে উইকেটে খেলিয়ে ক্যারিয়ারের দারুণ শুরুর পর শরীফুল ইসলামের বোলিংয়েরও বেজেছে বারোটা। এখন তিনি দলের বাইরে। আর মিরপুরের মরা উইকেটে তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনদের মতো ফাস্ট বোলারদের একাদশে জায়গাই হয় না। টি-টোয়েন্টি সুলভ উইকেটে তাদের খেলার অভিজ্ঞতাও কম। ভালো উইকেটের বোলিং কি জিনিস, সেটা এভাবেই ভুলতে বসেছে বাংলাদেশ দলের পেসাররা। সে জন্যই ডেথ ওভারে অধিনায়ক সাকিবকে খুঁজতে হয় শেখ মেহেদী হাসানকে। অফ স্পিনার হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ডেথ ওভারে বোলিং করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বড় ঝুঁকিটা নিতে সাকিব বাধ্য হয়েছেন পেসারদের ওপর আস্থাহীনতার জায়গা থেকে।
এছাড়া বড় রানের ম্যাচের চাপ সামলানোও অভিজ্ঞতার ব্যাপার। ১২০ বনাম ১২০ ম্যাচ খেলে খেলে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি ভাবনায় মরিচা ধরেছে। সে জন্য বড় রানের চাপের মুখে বোলিং-ব্যাটিংয়ের সমীকরণটা ঠিক থাকে না। এ ধরনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের হয় শুধু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই। অথচ চাপ সামলানোর এই পরীক্ষাটা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটেই হওয়ার কথা। কিন্তু ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি বলতে যে বিপিএলকে ধরা হয়, সেটিও হয় মন্থরতম উইকেটে। বড় রান করার অভ্যাসটা তাহলে হবে কোথায়? ওভার প্রতি দশ বা তার বেশি রানের পেছনে ছোটার যে অভ্যস্ততা, সেটি তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে তৈরি হবে না। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের যে চাপ, সেটার সঙ্গে অন্তত কিছুটা হলেও মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা পাওয়া সম্ভব তাতে। কিন্তু এমন ভরাডুবির পরও যদি আগামী বিপিএলটা হয় সেই ভাঙা উইকেটে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে কি করে সেটাই এখন আসল প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।