Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল : “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।” বাংলাদেশ আমাদের সর্ব্বোচ্চ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় মাথানত করার পবিত্র ভূমি। ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। প্রাচীনকালে বাংলাদেশ ছিল স্বাধীন ভূ-খ-। এদেশের রাজা-মহারাজারা স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতেন। তখন হাতিশালে হাতি ছিল ঘোড়াশালে ছিল ঘোড়া। গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু। পুকুর আর নদীতে ছিল মাছ আর মাছ। হঠাৎ করেই বাংলার সুখের ঘরে ইংরেজদের অশুভ আক্রমণ। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজ উদদৌলা পরাজিত হন। মীর জাফর, রাজবল্লভ ও উমিচাঁদের ষড়যন্ত্রে আর ইংরেজদের আগ্রাসনে বাংলা হারায় স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির ললাটে লেপন হয় দু’শ বছরের পরাধীনতা। ইংরেজরা বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এদেশের দামাল ছেলেরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্র সংগ্রাম করেছে অনবরত। তারই ফলশ্রুতিতে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ। শত শত বাঙালি সৈন্য নিহত হলেও থেমে থাকেনি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকেই পাকিস্তানিরা বাংলার এ অঞ্চলের মানুষের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করে। শুরু হয় আবার অসহযোগ আন্দোলন। পাকিস্তানিরা আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তাই এ সকল কিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। এ দিন ভাষার জন্য শহীন হন সালাম, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো অনেকে। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালিরাই শুধু মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করে শহীদ হন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বাংলার মানুষ তাদের স্বাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু সেখানেও অধিকার বঞ্চিত হয় বাঙালি জাতি। তাই ১৯৭১ সালে অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মুক্তি সেনারা। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো “এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম... তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর...।” এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাস বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়। বাংলার স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দিদশা থেকে ফিরে এলেন। দেশ গড়ার কাজে হাত দিলেন। সেই সাথে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের প্রথম বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাভারের নবীনগর এলাকায়।
স্মৃতিসৌধের চারপাশে মনোরম বাগান সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ রয়েছে স্মৃতিসৌধের চারপাশে। বিভিন্ন সময় আগত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যারা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের লাগানো গাছ শোভা পাচ্ছে এখানে। রয়েছে সুদৃশ্য লেক। এখানে আছে নাম না জানা কয়েকটি গণকবর। ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে সাভারে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ জাতীয় স্মৃতিসৌধের অবস্থান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় স্মৃতিসৌধ


আরও
আরও পড়ুন